Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ নবীজির সাতজন আলোকিত কালো সাহাবী

নবীজির সাতজন আলোকিত কালো সাহাবী

এই নিবন্ধে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের এমন সাতজন সাহাবী সম্পর্কে আলোচনা করব, যাদের গায়ের রং কালো ছিল। এই কালো সাহাবী-রা ছিলেন চূড়ান্ত সম্মানিত। কিন্তু গায়ের কালো বর্ণ তাদেরকে সম্মানিত হওয়ার মাঝে কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। কালো সাহাবী-দের মধ্যে প্রথমে রয়েছেন-

১। উম্মে আইমান(রাযিঃ)

নবীজির উম্মে আইমান নামে একজন মা ছিল; যিনি তাঁর যৌবনকাল বিসর্জন দিয়েছেন নবীজির লালন-পালনের জন্য। নবীজি সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদও প্রদান করেছিলেন।

নবীজি বয়স্কা অবস্থাতেই তাঁর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। যায়েদ ইবনে হারিসা(রাযিঃ) তাঁকে বিবাহ করেন। নবীজি মৃত্যুর আগে সাহাবীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে গিয়েছিলেন। সেই সব কথার মধ্যে একটা ছিল, “তোমরা উম্মে আইমানের যত্ন নিবে, তিনি আমার মায়ের মত। তিনিই একমাত্র নারী, যিনি আমাকে জন্ম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখাশোনা করেছেন। আমার পরিবারের একমাত্র সদস্য, যিনি সারাজীবন আমার পাশে ছিলেন।”

আরও পড়তে পারেন-

সাহাবীরা সেই কথা রেখেছিলেন। গায়ের রং-এ তাঁর পরিচয় হয়নি। এক সময়ের ক্রিতদাসী হিসেবে তিনি পরিচিত হননি। তাঁর পরিচয় হল, তিনি আমাদের প্রিয় নবীর আরেক মা। মায়ের মত করে সাহাবীরাও এই বৃদ্ধা নারীকে ভালোবেসে আগলে রেখেছিলেন।

২। উসামা বিন যায়েদ(রাযিঃ)

উসামা বিন যায়েদ(রাযিঃ) ছিলেন রাসূলের ক্রীতদাস ও পালকপুত্র যায়েদ(রাযিঃ)-এর ছেলে। পিতা-পুত্র উভয়কেই নবীজি খুব ভালবাসতেন এবং তাদেরকে অনেক বিশ্বাস করতেন। রাষ্ট্রীয় অনেক গুরত্বপূর্ণ কাজে নবীজি তাদেরকে ব্যবহার করেছেন। উসামা(রাযিঃ) নবীজীর নিকট এতটা বিশ্বস্ত ছিলেন যে, তাঁর জীবদ্দশায় শেষ যেই বাহিনী তিনি জিহাদের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছিলেন তাঁর আমির(জিম্মাদার) হিসেবে তিনি উসামা(রাযিঃ)-কে নিয়োগ দেন। যদিও সেই বাহিনীতে উমর, আবু বকরের মত আরও অনেক জলিল-কদর সাহাবী উপস্থিত ছিল। এভাবেই ক্রীতদাসের পুত্র হওয়া বা কৃষ্ণবর্ণের হওয়া তাঁর যোগ্যতার মাঝে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি।

৩। সা’দ আল আসওয়াদ(রাযিঃ)

তিনি ছিলেন গরীব, গায়ের রঙ ছিল কালোবর্ণের। কেউ তাঁর কাছে নিজের মেয়ে বিয়ে দিতে চাইত না। সা’দ(রাযিঃ) একদিন নবীজীর কাছে দুঃখ করে বলেছিলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমিও কি জান্নাতে যাবো? আমি তো নীচু মাপের ঈমানদার হিসেবে বিবেচিত হই, কোনো মেয়ে আমার সাথে বিবাহ বসতে রাজি হয় না।”

নবীজী তাঁর দুঃখ বুঝতে পেরে তাঁকে ধনাঢ্য এক ব্যক্তির রুপসী মেয়ের জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠান। কিন্তু ঐ ব্যক্তি তাঁকে মানা করে দেন। নবীজি পাঠিয়েছেন শুনে ঐ ব্যক্তির মেয়ে জোরজবরদস্তী করে বিয়েতে রাজি হন। কিন্তু তাদের বিবাহ সংঘঠিত হওয়ার পূর্বেই সা’দ(রাযিঃ) এক জিহাদে শহীদ হয়ে যান। নবীজী তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন এবং তাঁর সম্মানে জান্নাতের হুররা যে দুনিয়াতে অবতরণ করে তাঁর জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন তা অন্য সাহাবীদেরকে অবগত করেন। এভাবেই কালো এই সাহাবী সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান।

৪। জুলাইবিব(রাযিঃ)

নবীজীর সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে অখ্যাতদের একজন তিনি। মুসলিমদের মাঝে অনেকেই তাঁর কথা হয়তো কখনই শোনেননি। তাঁকে ডাকা হতো ‘জুলাইবিব’ নামে। জুলাইবিব আসলে কোনো নাম নয়। এটি একটি উপনাম। আরবিতে এই শব্দের অর্থ ‘ক্ষুদ্র পূর্ণতাপ্রাপ্ত’। তাঁকে এই নামে ডাকা হত কারণ তিনি ছিলেন উচ্চতায় অনেক ছোট।

এছাড়া তাকে অনেকে ‘দামিম’ নামেও ডাকত, যার অর্থ কুশ্রী, বিকৃত অথবা দেখতে বিরক্তিকর। যে সমাজে তিনি বাস করতেন, সেখানে তার প্রকৃত নাম-বংশ পরিচয় কেউ জানত না। তিনি যে কোন গোত্রের ছিলেন, তাও ছিল সকলের নিকট অজানা। তৎকালীন সমাজে এটা ছিল এক চরম অসম্মানের বিষয়।

কিন্তু এই সাহাবীই আখিরাতে হয়েছেন চরম সৌভাগ্যবানদের অতর্ভুক্ত। এক জিহাদে শদীদ হওয়ার পর নবীজী তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তাঁকে নিজ হাতে করে কবরে নামিয়েছেন এবং তাঁর প্রতি নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করেছেন।

এভাবেই, সমাজচ্যুত-ভাগ্যাহত কালো এক বামন সাহাবী শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসার কারণে চূড়ান্ত স্তরের সম্মান ও মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন।

৫। আম্মার বিন ইয়াসির(রাযিঃ)

আম্মার বিন ইয়াসির(রাযিঃ) এর পিতামাতা উভয়েই ছিলেন ক্রীতদাস। আবার তাঁর গায়ের রং ছিল কালো। এরকম মানুষকে তৎকালীন যুগে খুব ঘৃণার চোখে দেখা হত। কিন্তু নবীজী তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। তাঁকে জীবদ্দশায় নবীজী শাহাদাত ও জান্নাতের সুসংবাদও দিয়েছেন। মক্কী যুগে কঠোর নির্যাতন ভোগ করেও তাঁর পরিবারের কেউ ইসলাম থেকে দূরে সরেননি। এমনকি তাঁর মা সুমাইয়া(রাযিঃ) ইসলামের জন্য প্রথম শহীদ হয়েছিলেন। এভাবেই, কালোবর্ণের হওয়ার পরেও আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন।

৬। আবু যর গিফারী(রাযিঃ)

দুনিয়াবিরাগী সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। ইসলামের জন্য তিনি কঠোর সাধনা করতেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে গোত্রের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য হলেও, ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সবকিছু ত্যাগ করে গরিবি জীবন বেছে নেন। তিনি সার্বক্ষিণক নবীজীর সহচার্য্য গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আল্লাহকে খুব ভয় করতেন ও নবীজীকে খুব বেশি ভালোবাসতেন এবং নবীজীও তাঁকে ভালোবাসতেন। শাসকের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় তিনি নির্বাসিত হয়ে মরুভূমিতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

৭। বেলাল হাবশী(রাযিঃ)

বেলাল(রাযিঃ)-কে চেনে না এমন মুসলিম হয়ত পাওয়া মুশকিল। কঠিন নির্যাতনের মাঝেও যিনি ইসলামের উপর ছিলেন পাহাড়ের মত অটল। কালোবর্ণের ক্রীতদাস হয়েও তিনি অনন্য মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। নবীজী তাঁকে মসজিদে নববী ও সফরে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিযুক্ত করেন। জান্নাতে তাঁর পায়ের আওয়াজ শুনে এসে নবীজী তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। এমনকি তাঁকে এও বলেন যে, হাশরের ময়দানে কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি নবীজীর বাহনের লাগাম ধরে আগে আগে হাটবেন এবং এভাবেই নবীজির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।