Home ইতিহাস ও জীবনী থাবিত ইবন কুররা : মুসলিম স্বর্ণযুগের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

থাবিত ইবন কুররা : মুসলিম স্বর্ণযুগের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

- প্রতীকি ছবি।

নবম শতাব্দীর শুরুতে, ইসলামীয় দুনিয়ায় এক নবজাগরণের সূচনা হয়। মুসলিম ডাক্তার, গবেষক-বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, গণিতজ্ঞ, পদার্থবিদ ইত্যাদিরা একত্রিত ভাবে নতুন খোঁজের উদ্দেশ্যে এবং নতুন আবিষ্কারের অনুপ্রেরণায় কাজ শুরু করেন।

পরের ৪০০ বছরে ইসলামী দুনিয়ার আমূল পরিবর্তন হয় এবং মধ্য প্রাচ্যে গড়ে ওঠে জানার এবং নতুন কিছু খোঁজার এক বিশাল কর্মকান্ড। এই যুগকে পরবর্তীতে গবেষকরা ইসলামীয় স্বর্ণযুগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সেই সময়ের এক নিজগুণে উদ্ভাসিত ব্যক্তিত্ব থাবিত ইবন কুররা। তিনি ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিখ্যাত অনুবাদক।

সংক্ষিপ্ত জীবনী

থাবিত ইবন কুররা ৮২৬ (মতান্তরে ৮৩৬) অব্দে উত্তর মেসোপটেমিয়ার হারান শহরে (বর্তমান তুর্কী) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল তারা দের উপাসনা করা সাবিয়ান সম্প্রদায়ের এবং এই কারণেই ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে তারা-নক্ষত্র নিয়ে আগ্রহ গড়ে ওঠে।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি আব্বাসিদ খলিফতের সময়ে সেই সময়কার মুসলিম জগতের প্রাণকেন্দ্র বাগদাদেই সবথেকে বেশি সময় কাটিয়েছেন। এখানেই তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত, সঙ্গীত,ঔষধ, দর্শন এমনকী জাদুবিদ্যার সাথে। তাঁর জীবনের শেষ দিকে তিনি খলিফা আল-মুতাদিদ এর সভার জ্যোতির্বিজ্ঞানী পদলাভ করেন।

৯০১ অব্দে তিনি বাগদাদেই মারা যান আর রেখে যান ঔষধ, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিতের উপর ১৫০ এরও বেশি কাজ। যদিও দুঃখের বিষয় তার ওই সাগর সমান কাজকর্মের মধ্যে এক ডজনের থেকেও কম নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।

ইবন কুররা-র অবদান

ইবন কুররার মাতৃভাষা ছিল প্রাচীন সিরিয়াক ভাষা। এর এতে তিনি আরবি এবং গ্রিক ভাষাতেও সমান দক্ষ ছিলেন। তার এই দক্ষতা তাঁকে সেই সময়ের বিখ্যাত অনুবাদকের তাজ দেয়। তিনি আর্কিমিডিস, টলেমি, ইউক্লিডের মত পৃথিবীবিখ্যাত বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক দের কাজ গ্রিক ভাষা থেকে আরবিতে অনুবাদ করে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেন।

মনে করা হয় ইবন কুররা মধ্যযুগের একদা বিখ্যাত সূর্যের বিষুব অক্ষের দোলন সংক্রান্ত উপপাদ্য রচনা করেছিলেন। কোপারনিকাসের মতে তিনিই নাক্ষত্রিক বছর অর্থাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট নক্ষত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর একবার পূর্ণ আবর্তনের সময় নির্ভুল ভাবে পরিমাপ করেছিলেন। তার লেখা গ্রন্থ De Anno Solis তে নবম শতাব্দীর জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কীত মূল্যবান নথি।

তিনি পিথাগোরাসের উপপাদ্য এবং ইউক্লিডের পঞ্চম উপপাদ্যের সমাধান করেছিলেন। এর সাথে তিনিই সর্বপ্রথম পরাবৃত্তের আয়তন নির্ণায়ক সূত্র লেখেন এবং বিখ্যাত দাবার সমস্যার ব্যাখ্যামূলক সমাধান করেন।

তিনি জটিল অনুপাতের একটি তত্ব দেন যেটি কয়েক শতাব্দী পরে ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের জন্ম দেয়।

ইবন কুররা স্থিতিবিদ্যার জনক এবং এরিস্টটল ও আর্কিমিডিসের তত্ব ব্যবহার করে লিভার বা ভারোত্তোলক দণ্ডের নিয়মের প্রমাণ দেন। তার লেখা বিখ্যাত কিতাব ফি আল-কারাস্তুন (Kitab fi ‘l-qarastun) গ্রন্থে আরবের প্রচলিত বলবিদ্যা লিপিবদ্ধ করে গেছেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।