Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ অপচয় রোধে ইসলাম

অপচয় রোধে ইসলাম

– মুফতি মাহমুদ হাসান।।

বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার এবং সংরক্ষণ থেকে উদাসীন হয়ে যাচ্ছে। চৌদ্দ শ বছর আগে থেকেই ইসলাম আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালার সব নেয়ামতের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়ে এর ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে আসছে। এমনকি সাধারণ দৃষ্টিতে ছোট ছোট নেয়ামতের গুরুত্ব অনুধাবন করিয়ে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার শিক্ষা দিয়েছে।

ইসলাম অপব্যয় ও অপচয় নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলে ঘোষণা করেছেন। অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষের জীবন থেকে বরকতও হ্রাস পায়।

এর ফলে মানুষের ধন-সম্পদ ক্রমে হ্রাস পায়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

আরও পড়তে পারেন-

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬, ২৭)

উদাহরণত পানি আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত। আর আল্লাহ তাঁর নেয়ামতগুলো অপচয় করতে আমাদের নিষেধ করেছেন। আমাদের দেশ এবং বর্তমান পৃথিবীর গবেষকরা সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান অভাব এবং দূষিত পানির পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কিত, অথচ এসবের মূলে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে পানি ব্যবহারে আমাদেরই অপচয় এবং উদাসীনতা। আধুনিক পৃথিবীতে পানির জন্য এ হাহাকার তো আমাদেরই কর্মফল।

প্রিয়তম রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে পানি পান করার আদব শিখিয়েছেন। এর প্রতিটিতে নিহিত রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধান। একটি হাদিসে রাসুল (সা.) পানির বড় পাত্র থেকে সরাসরি মুখ লাগিয়ে গড়গড় করে পান করা থেকে নিষেধ করেছেন, বরং ছোট পেয়ালায় ঢেলে তারপর দেখে পান করার জন্য আমাদের শিখিয়েছেন।

পানি ব্যবহারে আরো নির্দেশনা দিয়েছেন। এক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা স্থির পানিতে পেশাব কোরো না, নাপাকি ফেলো না, কেননা তা তোমরা ব্যবহার করবে।’ (আবু দাউদ, হা. ৬৯, ৭০)

অপ্রয়োজনে পানি নষ্ট করা যেমন পানির অপচয়, তেমনি প্রয়োজন পূরণের সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ করাও পানির অপচয়। এমনকি সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে সরাসরি সাগর থেকে অজু করলেও বেশি পানি অজুতে খরচ করার অনুমতি ইসলাম দেয়নি।

হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) সা’দ (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সা’দ (রা.) অজু করছিলেন। তাঁর অজুতে পানি বেশি খরচ হচ্ছিল। রাসুল (সা.) তা দেখে বললেন, কেন এই অপচয়? সা’দ (রা.) আরজ করলেন, অজুতেও কি অপচয় হয়? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, এমনকি বহমান নদীতে অজু করলেও। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হা. ৪২৫)

এমনকি একটি হাদিসে অজুর অঙ্গগুলো তিনবারের অধিক ধোয়াকে সীমা লঙ্ঘন আখ্যা দেওয়া হয়েছে। (আল মু’জামুল কাবির, হা. ১১০৯১) অপচয় কেবল পানিতেই নয়, বরং সব কিছুতেই হারাম। বিদ্যুৎ, গ্যাস, খাওয়াদাওয়া, কাপড়চোপড়—সব বস্তুতেই নিষিদ্ধ। বিদ্যুৎ, গ্যাসের অপব্যবহারও আমাদের একটি মারাত্মক ব্যাধি। আর খাদ্য অপচয় করা তো আমরা নিয়মিত ফ্যাশন বানিয়ে নিয়েছি। যেখানে দুমুঠো দানাপানির জন্য বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রাণ বিলীন করে দিচ্ছে, সেখানেই তাদের স্বজাতীয় শতকোটি মানুষ হাজার হাজার টন খাদ্য অপচয় করছে। যেখানে ইসলাম খাওয়ার উচ্ছিষ্টও সঠিক জায়গায় রাখার নির্দেশ দেয়, যাতে জীবজন্তু ও পশুপাখি তা খেতে পারে, সেখানে বিপুল পরিমাণে আমাদের ঘরে-বাইরে, হোটেলে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অপচয়ের উৎসব চলে।

খাদ্যের সঠিক ব্যবহারে রাসুল (সা.) অসংখ্য নির্দেশনা দিয়েছেন। হাদিস শরিফে খাওয়ার পর বাসন ও আঙুল চেটে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি, হা. ৫৪৫৬) হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন আহার করতেন, আহার শেষে তিনবার আঙুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, তোমাদের খানার বাসন থেকে কিছু পড়ে গেলে উঠিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নাও, তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দিয়ো না। (আবু দাউদ, হা. ৩৮৪৫)

অপ্রয়োজনে পাখা ও বাতি ব্যবহার এবং একটির জায়গায় দুটি হওয়াও অপচয়ের শামিল। অপচয় বা অপব্যয় শুধু যে আর্থিক ক্ষতিই ডেকে আনে তা নয়; অপচয়ের কারণে আর্থিক ক্ষতির চেয়েও দেশ ও সমাজের আরো অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। বর্তমানে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংকটও আমাদের অপব্যয়ের কুফল। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।