Home ইতিহাস ও জীবনী ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জের প্রাক ঔপনিবেশিক যুগের বিরল কাহিনী

ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জের প্রাক ঔপনিবেশিক যুগের বিরল কাহিনী

ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস প্রায় ৩৫০ বছর ধরে স্পেন, আমেরিকার মতো বিভিন্ন পশ্চিমী দেশগুলির পদানত ছিল। তাই এটি হল দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ যেখানে অধিকাংশ মানুষই খ্রিস্টান। যখন এই দ্বীপপুঞ্জ ভারত, চিন এবং দক্ষিণ এশিয়ার ইসলাম, বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, সেই প্রাক-ঔপনিবেশিক ইতিহাসের খোঁজ পাওয়া খুবই কঠিন।

ফিলিপিন্স ও আদিম মানুষ

২০১৮ সালে পাওয়া প্রমাণ থেকে বোঝা যায় প্রায় ৭ লক্ষ বছর আগেই এই দ্বীপে মানুষের আগমন ঘটেছিল। লুজোন দ্বীপের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে প্রমাণ মিলেছে যে, এক অধুনা লুপ্ত এক গন্ডার প্রজাতির জীবাশ্মের হাড় পাথরের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছিল মধ্য-প্লেইস্টোসিন যুগে। সেই সব পাথরের সরঞ্জাম থেকে বোঝা যায় কোনও মানুষ প্রজাতিই এগুলি ব্যবহার করত।

যদিও কোনও মানুষের চিহ্ন সেখানে পাওয়া যায়নি, তবে জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে এই সব সরঞ্জাম সম্ভবত হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির মানুষেরা ব্যবহার করতেন।

আরও পড়তে পারেন-

প্রত্নতাত্ত্বিক জ্ঞান থেকে এই হোমো ইরেক্টাস সম্পর্কে আন্দাজ করা যায় যে, তারা হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে এই দ্বীপে আসেনি। সম্ভবত কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে তারা এই দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন। যাই হোক, আগে বিশ্বাস করা হত এই দ্বীপে ১ লক্ষ বছর পূর্বে মানুষ বসবাস শুরু করে। কিন্তু সাম্প্রতিক এই প্রমাণ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগেই ফিলিপিন্সে মানুষের বসবাস গড়ে উঠেছিল।

এখানে ৫০,০০০ বছরের প্রাচীন বসতির প্রমাণ মেলে। খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর পূর্বেই এই দ্বীপের বাসিন্দারা চাষ আবাদ, মৃৎশিল্প ইত্যাদির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং গ্রাম্য জীবনযাপন শুরু করেছিলেন।

ফিলিপিন্স এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অতীত সম্পর্ক

খ্রিস্টাব্দের প্রথম সহস্রাব্দের শুরুতেই এই দ্বীপপুঞ্জে বিভিন্ন স্বতন্ত্র গোষ্ঠী তৈরি হয়, যারা দক্ষিণপূর্ব এশিয়া আর চিনের সাথে নিয়মিত বাণিজ্য চালাত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে প্রমাণ মিলেছে যে, এই গোষ্ঠীগুলিতে ধাতু এবং কাপড় তৈরির কারিগরের অস্তিত্ব ছিল। দলপতিরা বাণিজ্য এবং যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি অন্যদের সাথে ভাগ করে নিত।

ফিলিপিন্সে এই সময়ে লেখারও প্রচলন ছিল। এই লেখনিতে ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার লিপির ছাপ খুবই স্পষ্ট। যদিও এই সময়ের খুব কম লেখাই পাওয়া যায়, তার মধ্য উল্লেখযোগ্য হল প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগে, ৯০০ খ্রিস্টাব্দের লাগুনা তাম্রফলক। এই ফলকে যে লিপি ব্যবহার করা হয়েছিল তা সেই সময়ের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ব্যবহার করা হত। সুতরাং বোঝা যায় যে, এই দ্বীপের সাথে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বাকি অংশের ভালো যোগাযোগ ছিল।

ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের ধর্ম চর্চা

ফিলিপিন্সের ইতিহাস প্রাচীন এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। বহুধর্ম এবং সভ্যতার প্রভাব এতে স্পষ্ট। ফিলিপিন্সের মানুষদের আত্মপরিচিতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ধর্ম। বাইরে থেকে আসা ধর্ম, যেমন খ্রিস্টান বা ইসলামের সাথে পরিচিত হওয়ার আগে, ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জে প্রকৃতি পূজারই চল ছিল। এই দ্বীপপুঞ্জের প্রাচীন বাসিন্দারা বা বর্তমানে যারা এই পুরোনো রীতি মেনে চলেন, তাঁদের বিশ্বাস- প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন পাহাড়, নদী, জঙ্গল ইত্যাদি দেবতা এবং আত্মারা রক্ষা করে। যদিও আধুনিক ধর্মগুলি এই ধরনের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, তবু স্থানীয় পুরোনো ধর্মের বহু রীতিনীতি নাগরিকদের নতুন ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে।

ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাসে বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্মের প্রভাব

এই দ্বীপপুঞ্জে বাইরের ধর্ম হিসেবে হিন্দু এবং বৌদ্ধধর্ম প্রথম প্রবেশ করে। ৯০০ খ্রিস্টাব্দে এই দ্বীপপুঞ্জ সুমাত্রার শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল, যা বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

যদিও বৌদ্ধ ধর্মের তেমন কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ এখানে পাওয়া যায় না, তবু বিশ্বাস করা হয় যে সুমাত্রা থেকেই হয়তো বৌদ্ধরা ফিলিপিন্সে এসেছিল। তবে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের তৈরি চন্দ্র বর্ষপঞ্জির ব্যবহার থেকে বোঝা যায় ফিলিপিন্সে এই দুই ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব ছিল।

ফিলিপিন্স এবং ইসলাম

চতুর্দশ শতাব্দীতে মিন্দানাও এবং সুলু দ্বীপে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। তার কিছু পরেই এখানে শক্তিশালী বাদশাহী সাম্রাজ্য তৈরি হয়। তারপরেই এখানে ইসলাম ধর্মের প্রসারণ হয়, যা এখনও বজায় আছে। যদিও ঠিক কীভাবে প্রথম ইসলামের প্রচলন হয়, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এই বিষয়ে বহু প্রচলিত মত চালু আছে, যেমন ভারত বা ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীদের মারফত ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল। অথবা দক্ষিণ পূর্বের শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে এখানের শাসকরা ইসলাম কবুল করেছিলেন, আবার অনেকে মনে করেন সুফি প্রচারকদের দ্বারাও এই ধর্মের প্রচলন হয়ে থাকতে পারে। কারণ যাই হয়ে থাকুক না কেন, স্প্যানিশরা না আসলে হয়তো ফিলিপিন্সে আজও ইসলামই প্রধান ধর্ম হিসেবে থাকত।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।