Home ইতিহাস ও জীবনী সত্য প্রকাশে হাসান বসরির নির্ভীকতা

সত্য প্রকাশে হাসান বসরির নির্ভীকতা

।। জামান শামস ।।

হাসান বসরিকে জীবনে বহুবার এভাবে শাসকগোষ্ঠীর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে, কিন্তু তিনি তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্যপ্রকাশে কখনো দ্বিধান্বিত হননি। এমনকি সত্যকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতেও চেষ্টা করেননি বরং তিনি সবসময় সত্যকে সোজাসুজি বলেছেন নির্দ্বিধায়।

খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজের ইন্তেকালের পর নতুন খলিফা হলেন ইয়াজিদ ইবনে আবদুল মালিক। এই খলিফা ইরাকের গভর্নর বানালেন উমর ইবনে হুবাইরা আল ফাজারিকে। কিছুদিনের মধ্যে ইরাকি গভর্নরের শাসনাধীন করে দেয়া হলো খোরাসান অঞ্চলকেও। খলিফা ছিলেন পূর্বসূরিদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত। তিনি বিভিন্ন সময় ইবনে হুবাইরার প্রতি অন্যায় নির্দেশ পাঠিয়ে দ্রুত সে নির্দেশ পালন করার হুকুম দিতেন।

ইবনে হুবাইরা পড়লেন বিপদে, আল্লাহর হুকুম মতো ন্যায় পথে থাকতে হলে খলিফার হুকুম অমান্য করতেই হয়। সেটা করতে গেলে পড়তে হয় খলিফার রোষানলে। গভর্নর ইবনে হুবাইরা পরামর্শের জন্য ডেকে পাঠালেন হাসান বসরি ও শাআবিকে।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি এই দুই বিখ্যাত আলিমকে বললেন, ‘দেখুন, আমিরুল মুমিনিন ইয়াজিদ ইবনে আবদুল মালিককে আল্লাহ আমাদের শাসক বানিয়ে আমাদের জন্য তার আনুগত্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন।’ তিনি আমাকে প্রথমে ইরাকের তারপর পারস্য অঞ্চল খোরাসানের দায়িত্ব দিয়েছেন। মাঝে মধ্যে এমন এমন সব বিধান চালু করার নির্দেশ দেন, যেগুলোর বৈধতার ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। এ অবস্থায় ইয়াজিদের হুকুম মতো তার অবৈধ নির্দেশ বাস্তবায়ন করা কি আমার বৈধ হবে?

ইমাম শাআবি যে জবাব দিলেন, তা ছিল খলিফা ও গভর্নরের প্রতি পক্ষপাতমূলক। গভর্নর হাসান বসরিকে বললেন, ‘হে আবু সাঈদ, আপনি চুপচাপ কেন? দয়া করে আপনার বক্তব্য মতামত বলুন।’

হাসান বসরি সুস্পষ্ট ও দ্বিধাহীন বক্তব্য দিলেন এভাবে- ‘হে হুবাইরার পুত্র, ইয়াজিদের হুকুম পালনকালে আল্লøাহকে ভয় করো কিন্তু আল্লাহর হুকুম পালনের সময় ইয়াজিদের পরোয়া করো না। মনে রেখো, আল্লাহ তোমাকে ইয়াজিদের হাত থেকে বাঁচাবেন কিন্তু ইয়াজিদ তোমাকে আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচাতে পারবে না…।
হে ইবনে হুবাইরা, শিগগিরই আল্লøাহর চূড়ান্ত অনুগত এক নির্দয় ফেরেশতা এসে তোমাকে এই পালঙ্ক থেকে টেনে নামাবেন, এই মহলের প্রশস্ততা থেকে নিয়ে যাবেন কবরের সঙ্কীর্ণতায়।

সেখানে তুমি ইয়াজিদকে খুঁজে পাবে না, পাবে সেই আমলগুলোকে যার জন্য তুমি নাফরমানি করেছিলে রাবের ইয়াজিদের…

ইবনে হুবাইরা, তুমি যদি আল্লাহর হুকুমের অনুগত হও তবে তোমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য তিনি একাই যথেষ্ট। আর যদি আল্লøাহর হুকুম ছেড়ে ইয়াজিদের অনুগত হও তবে তিনি ইয়াজিদের হাতেই তোমাকে সোপর্দ করবেন। ভুলে যেয়ো না হে ইবনে হুবাইরা, মাখলুকের সে যেই হোক না কেন, এমন কোনো অনুগত্য বৈধ নয় যার ফলে খালেকের অবাধ্য হতে হয়…

এসব শুনতে শুনতে গভর্নর ক্রন্দন করতে করতে দাড়ি ভিজিয়ে ফেললেন। তিনি হাসান বসরির প্রতি মুগ্ধ হলেন শাআবির প্রতি নয়। তিনি হাসান বসরিকে অতিশয় সম্মান ও মর্যাদা দিলেন। তারা উভয়ে গভর্নরের কাছ থেকে বেরিয়ে মসজিদে গেলেন। লোকেরা ভিড় করে জানতে চাইল গভর্নরের সাথে কী আলোচনা হলো?

শাআবি বললেন, ‘ভাইয়েরা, তোমরা যারা সর্বক্ষেত্রে মাখলুকের ওপর খালেকের প্রাধান্য দিতে সক্ষম তারা তা-ই দিয়ো। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, গভর্নরকে হাসান যে কথাগুলো বলেছে তা আমার অজানা নয়। কিন্তু আমি নরম কথা বলে তাকে (সৃষ্টিকে) খুশি করতে চেয়েছিলাম, পক্ষান্তরে হাসান চেয়েছেন হক কথা বলে স্রষ্টাকে খুশি করতে…

এর ফলে আল্লাহ আমাকে ঠেলে দিয়েছেন গভর্নরের দৃষ্টি থেকে দূরে আর তাকে করেছেন কাছে। তাকে করেছেন গভর্নরের আপন আর আমাকে করেছেন পর। লেখক : সাবেক অতিরিক্ত এমডি, আইবিবিএল।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।