Home ইতিহাস ও জীবনী দারুল উলূম হাটহাজারী’র কতিপয় উজ্জ্বল নক্ষত্র

দারুল উলূম হাটহাজারী’র কতিপয় উজ্জ্বল নক্ষত্র

।। শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (দা.বা.) ।।

দারুল উলূ হাটহাজারী কি? এর সংক্ষিপ্ত জবাব এভাবে দেয়া যায় যে, এটি একটি বিরাট গবেষণা কেন্দ্রের নাম। অথবা ভিন্নভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, এটি হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের এক নতুন এবং পরিপূর্ণ সংস্করণ। যার আয়নায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের খুঁটিনাটি সব কিছু সুষ্ঠুভাবে দেখা যায়। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য হাজার হাজার পৃষ্ঠাও যথেষ্ট নয়। দারুল উলূম হাটহাজারী যখন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল, তখন বাংলার দ্বীনি অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। তখন চারিদিকে অজ্ঞতা, গোমরাহী, শিরক, বিদ্আত, শরীয়ত বিরোধী রীতি-নীতি এবং ইসলাম বিরোধী চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে পড়েছিল। ইসলামের বিশুদ্ধ রূপ তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মুখপাত্র হিসেবে তদানীন্তন বাংলায় কোন দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ছিল না। এ কঠিন ও নাজুক পরিস্থিতিতে কতিপয় আহলুল্লাহ্ উলামায়ে রব্বানী বাতিনী আলো দ্বারা কঠিন অবস্থা ও দুর্যোগের আশংকা দেখে জরুরী ভিত্তিতে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য এবং মুসলমানদের জীবনে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার জন্য চট্টগ্রাম শহর থেকে ১০ মাইল উত্তরে অবস্থিত বর্তমান হাটহাজারী থানা সদরে আল্লাহর উপর ভরসা করে ১৩২০হিজরী মোতাবেক ১৯০১ইংরেজী সনে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করেন। যা কয়েক বছরের মধ্যেই নিজের অবদানের কারণে দারুল উলূম নামে পরিচিতি ও প্রসিদ্ধি লাভ করে।

যেসব মনীষী ও বুযুর্গ আলেম এই পবিত্র প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি রাখেন তাঁরা হলেন, সর্বজনাব শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ্ (রাহ্.), শাইখুল উলামা হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রাহ্.), যুগশ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক আলেম হযরত মাওলানা সুফী আযীযুর রহমান (রাহ্.) ও মুজাহিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আব্দুল হামিদ (রাহ্.)। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান ইমামে রাব্বানী হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গুঙ্গুহী (রাহ্.)এর বিশিষ্ট খলীফা কুতুবে আলম হযরত মাওলানা শাহ্ যমীর উদ্দীন (রাহ্.)এর পৃষ্ঠপোষকতায় ধন্য হয়। দারুলূ উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী হল বাংলাদেশে দারুল উলূম দেওবন্দ পদ্ধতির প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ ও চিন্তাধারা মোতাবেক পরিচালিত। তাই এটি এদেশে দ্বিতীয় দারুল উলূম দেওবন্দ হিসেবে পরিচিত।

এই বিরাট ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর পরিচয় হল, হিজরী চৌদ্দ শতকের এক বিশাল দ্বীনি, তা’লীমী এবং সংস্কারবাদী আন্দোলন, যা দেশ বিদেশের সর্বত্র মুসলমানদের অন্তরে ঈমানের নূর ও ইসলামী সভ্যতার দীপশিখা জ্বালিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান দ্বারা গোটা জাতির দ্বীনি অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং বাংলার মুসলমানদের মাঝে খাঁটি ঈমানী চেতনা ও দ্বীনি জযবা ফিরে এসেছে। এর দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ ও চিন্তাধারার ব্যাপক প্রচার হয়েছে, সুন্নাতে রাসূলের পুনরুজ্জীবন হয়েছে। শিরক, বিদ্আত এবং শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপের শিকড় উপড়ে গেছে।

মোটকথা, এই বিশাল দ্বীনি প্রতিষ্ঠান বিগত শতাধিক বছরে বিরাট সংস্কার কার্য সম্পাদন করে। ইসলামের ইতিহাসে এ এক স্মরণীয় অধ্যায়। দারুল উলূম হাটহাজারীর প্রতিষ্ঠাতা ও আকাবিরগণ সালফে সালিহীনের জীবন্ত নমুনা। তারা ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও মন-মেজাযের বাস্তব প্রতিচ্ছবি ছিলেন। বক্ষমান প্রবন্ধে দারুল উলূম হাটহাজারীর কয়েকজন আকাবিরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করা হল।

দারুল উলূম হাটহাজারীর পৃষ্ঠপোষক শাইখুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা যমীরুদ্দীন আহমদ (রাহ্.)

হযরত মাওলানা শাহ্ যমীরুদ্দীন আহমদ (রাহ্.) ১২৯৬ হিজরী সনে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত সুয়াবিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যৌবন কালে হালাল রুজি উপার্জনের লক্ষ্যে রেঙ্গুন (বার্মা) সফর করেন। সেখানে স্বপ্নযোগে একটি সুসংবাদের ভিত্তিতে ভারতের হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গুঙ্গুহী (রাহ্.)এর খেদমতে গিয়ে উপস্থিত হন এবং বাইআত গ্রহণের দরখাস্ত পেশ করেন। কিন্তু তিনি প্রথমে হযরত গুঙ্গুহী (রাহ্.)এর নির্দেশে দারুল উলূম দেওবন্দ গমন করে জাহেরী ইল্ম অর্জন সমাপ্ত করেন। অতঃপর হযরত গুঙ্গুহী (রাহ্.)এর হাতে বাইআত গ্রহণ করে তিন বছর তাঁর সংস্পর্শে অবস্থান করেন এবং ১৩২২ হিজরী সনে চার তরীকার খিলাফত লাভ করেন। দেওবন্দের শিক্ষকগণের মধ্যে মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা আযীযুর রহ্মান (রাহ্.)এর সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল।

দেশে প্রত্যাবর্তনের পর হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রাহ্.)এর ইঙ্গিতে এবং হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতাগণের অনুরোধে দারুল উলূম হাটহাজারীর পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সুদীর্ঘ ৩৫ বছর কাল তিনি এ দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। একই সাথে তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ এবং আল্ হিদায়াহ্ প্রভৃতি কিতাবের শিক্ষাদান করেন। ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত ইরশাদ ও তালক্বীন, ইসলাহে বাতিন ও তাযকিয়ায়ে নফ্সের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মাধ্যমে অসংখ্য লোককে আল্লাহ তাআলা হিদায়াত ও বিশুদ্ধ তরীকা ইনায়েত করেন। বহু সংখ্যক মুহাক্কিক উলামা, ফুক্বাহা এবং মুহাদ্দিসীন তাঁর ছাত্র, মুরীদ ও খলীফা হবার সৌভাগ্য লাভ করেন। যমীরিয়া কাসেমুল উলূম পটিয়া মাদ্রাসা মরহুমের শেষ জীবনের এক বিশেষ স্মৃতি। এই প্রতিষ্ঠানটি মরহুমের নির্দেশ ও পারামর্শ মোতাবেক মরহুমের খলীফা হযরত মাওলানা মুফতি আযীযুল হক্ (রাহ্.) ১৩৫৭ হিজরী সনে কায়েম করেন।

এটিই পরবর্তী সময়ে ‘জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া’ নামে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে। হযরত মাওলানা যমীরুদ্দীন (রাহ্.) সময়ের দাবী হিসেবে সংস্কারক, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন আলেম, উচ্চস্তরের ফক্বীহ্, মুতাকাল্লিম, সুধী এবং যিন্দাদিল আরেফ ছিলেন। ১৩৫৯ হিজরী সনে তিনি ইন্তিকাল করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার সন্নিকটে নূর মসজিদের পার্শ্বে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর জীবন ও অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ জনাব মাওলানা হাফেজ ক্বারী ফয়েয আহমদ ইসলামাবাদী লিখিত ‘তাযকিরায়ে যমীর’ এবং মাওলানা সুলতান জাওক সাহেব প্রণীত ‘ইয়াদে আযীয’ গ্রন্থদ্বয়ে রয়েছে।

দারুল উলূম হাটহাজারীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মুহতামিম শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ্ (রাহ্.)

হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ্ (রাহ্.) চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার চারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে নিজ ঘরে অতঃপর চট্টগ্রাম মুহ্সেনিয়া মাদ্রাসায় দ্বীনি শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর উচ্চতর দ্বীনি শিক্ষা লাভ করার উদ্দেশ্যে ভারতে গমন করেন এবং কানপুর জামেউল উলূম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এ সময় হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী (রাহ্.) এ মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করতেন। কিছু দিনের মধ্যেই খোদা প্রদত্ত যোগ্যতা, স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টার বরকতে হযরত থানভী (রাহ্.)এর নেক দৃষ্টি লাভ করেন এবং তাঁর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেন।

অতঃপর হযরত থানভী (রাহ্.)এর জাহেরী ও বাতেনী ইল্মের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শেষে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে এসে আপন শিক্ষক ও পীর হযরত থানভী (রাহ্.) কর্তৃক নির্দেশিত কর্মসূচী মোতাবেক শিরক, বিদ্আত, ভ্রান্ত রীতি-নীতি এবং ইসলাম বিরোধী চিন্তা-চেতনা খণ্ডন করতে থাকেন। ব্যাপক ভিত্তিতে দ্বীনে মুহাম্মদীর খেদমত করার জন্য আদর্শ নাগরিক তৈরীর কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েন। অতঃপর সেই সময় উপস্থিত হয়, যখন তিনি এবং হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রাহ্.), হযরত মাওলানা আব্দুল হামিদ ও হযরত মাওলানা সুফী আযীযুর রহমান (রাহ্.) এই চার বুযুর্গ মিলে ১৩২০ হিজরী সনে দারুল উলূম হাটহাজারীর ভিত্তি স্থাপন করেন। এই বিরাট দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র মরহুমের স্মৃতি বহন করছে। তিনি এর মুহ্তামিম ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নতির পেছনে তাঁর ইখলাস, বুদ্ধিমত্তা, পরিশ্রম ও কুরবানীর কথা বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।

বহু সংখ্যক আলেমে দ্বীন, ফিক্বাহ্ শাস্ত্রবিদ, মুহাদ্দিস, লেখক ও চিন্তাবিদ তাঁর দরস থেকে সৃষ্টি হন। তিনি খুবই ধীশক্তি সম্পন্ন, দূরদর্শী, অভিজ্ঞ, সমাজ সচেতন এবং নিবেদিত প্রাণ মুহাক্কিক আলেমে দ্বীন ছিলেন। ১৩৬১ হিজরী সনে তিনি ইন্তিকাল করেন।

দারুল উলূম হাটহাজারীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাত শাইখুলকুল হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রাহ্.)

শাইখুলকুল (সর্বশ্রদ্ধেয় মুরুব্বী) হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রাহ্.) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার হাওলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এক ঐতিহ্যবাহী মুন্সেফ পরিবারের সুযোগ্য সন্তান ছিলেন। চট্টগ্রাম মুহ্সেনিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করার পর হাদীসের কিতাবসমূহ দারুল উলূম দেওবন্দে হযরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতুভী (রাহ্.) প্রমুখ বুযুর্গ ব্যক্তিগণের নিকট পাঠ করেন। এরপর হযরত মাওলানা ফযলে রহ্মান গঞ্জেমুরাদাবাদী (রাহ্.)এর কাছে মুরীদ হয়ে খিলাফত লাভ করেন। কোন কোন পাকিস্তানী লেখক তাঁকে হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী (রাহ্.)এর খলীফাগণের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হতে পারে যে, তিনি উভয় বুযুর্গ থেকে খিলাফত লাভ করেছিলেন।

হিন্দুস্তান থেকে জাহেরী ও বাতেনী শিক্ষা অর্জন শেষে যখন দেশে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন দেখতে পান যে, বাংলার অবস্থা খুবই করুণ। চারিদিকে অজ্ঞতা, গোমরাহী, শিরক, বিদ্আত এবং শরীয়ত বিরোধী রছম-রেওয়াজের ব্যাপক ছড়াছড়ি। এমতাবস্থায় তিনি স্বদেশবাসীকে নির্ভেজাল তাওহীদ এবং সুন্নাতের খাঁটি অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক ভিত্তিক ওয়াজ-নসীহত, তাবলীগ ও দাওয়াতী কাজে নিয়োজিত হন। কিন্তু গোমরাহীর সয়লাব যেভাবে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল তার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও অব্যাহত চিন্তা-গবেষণার প্রয়োজন ছিল।

আরও পড়তে পারেন-

অবশেষে এর পরিপূর্ণতা এভাবে হয় যে, তিনি নিজে এবং হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ্ (রাহ্.), মাওলানা আব্দুল হামিদ (রাহ্.) ও মাওলানা সুফী আযীযুর রহমান (রাহ্.) এই চার বুযুর্গ একত্রিত হয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনার পর ১৩২০ হিজরী/১৯০১ সালে বর্তমান দারুল উলূম হাটহাজারীর ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি দারুল উলূম হাটহাজারী প্রতিষ্ঠার অন্যতম সদস্যই শুধু ছিলেন না, বরং এই বিশাল আন্দোলনের প্রথম আহ্বায়ক ও বড় সহযোগী ছিলেন। দারুল উলূম হাটহাজারীর প্রতিষ্ঠাতাগণের মধ্যে তাঁর বিশেষ মর্যাদা ও স্বতন্ত্র সম্মান রয়েছে। হযরত মাওলানা আব্দুল হামিদ (রাহ্.)এর ন্যায় বিরাট সংস্কারক (যার আলোচনা পরে আসবে) মরহুমের প্রিয় শাগরিদ ছিলেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ (রাহ্.)এর ব্যক্তিত্বের বিকাশে তাঁর অবদানই ছিল সবচেয়ে বেশী। মাওলানা আব্দুল হামিদ (রাহ্.)এর অবদান প্রকারান্তরে মাওলানা মরহুমেরই অবদান।

মুনসেফ পুত্র হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সাংসারিক জীবন ছিল সহজ সরল। পবিত্র কুরআনের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল। তারতীল ও তাজবীদের সাথে কুরআন তিলাওয়াতের আশেক ছিলেন। তিনি ছিলেন সাহেবদিল বুযুর্গ, বিশাল সংস্কারক, আলেমকুল শিরোমণী এবং জাহেরী ও বাতেনী ইল্ম ও কামালাতে পরিপূর্ণ যিন্দাদিল বুযুর্গ। আনুমানিক ১৩২৫ হজিরী সনে তিনি ইন্তিকাল করেন। হাওলা খরন্দ্বীপ গ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়।

দারুল উলূম হাটহাজারীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহাক্কিকে যামান হযরত মাওলানা সূফী আযীযুর রহমান (রাহ্.)

মুহাক্কিক আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা সূফী আযীযুর রহ্মান (রাহ্.) চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত বাবুনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মুহ্সেনিয়া মাদ্রাসায় দ্বীনি শিক্ষা লাভ করেন। ‘শরহে বেকায়া’র জামাআত থেকে হাদীস পর্যন্ত প্রত্যেক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। জামাআতে উলার পরীক্ষায় প্রথম হন। তিনি মুহ্সেনিয়া মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্রদের অন্যতম ছিলেন। তার উস্তাগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, বুখারী শরীফের টীকাকার হযরত মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরী (রাহ্.)এর শাগরিদ হযরত মাওলানা মাহ্মুদ হাসান রায়পুরী চাটগামী (রাহ্.)।

তিনি যোগ্যতা ও আল্লাহ প্রদত্ত বৈশিষ্টের বদৌলতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার সাথে সাথে মুহ্সেনিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন। এক বছর কাল শিক্ষকতা করার পর কোন কারণে মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করেন। অতঃপর কিছুদিন ফটিকছড়ি বিবিরহাট মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। অতঃপর দারুল উলূম হাটহাজারীর প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেন। দারুল উলূম হাটহাজারীর চার প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে তাঁর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। বেশ কিছকাল দারুল উলূম হাটহাজারীতে শিক্ষকতাও করেন।

বহু উল্লেখযোগ্য আলেম, ফিক্বাহ্শাস্ত্রবিদ ও মুর্দারিস তাঁর শিক্ষকতার যুগে ফারেগ হন। দ্বীনি জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখা বিশেষতঃ ফিক্বাহ্, নাহু, সরফ শাস্ত্রে তাঁকে ইমাম মনে করা হত। ফারসী ভাষায় ও আরবী সাহিত্যেও যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। গোটা জীবন তাওহীদ ও সুন্নাতের প্রসার এবং শিরক ও বিদ্আতের প্রতিরোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনে অতিবাহিত করেন। নাজিরহাট আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসা তাঁর জীবনের সর্বশেষ স্মৃতি ও বিরাট অবদান। আনুমানিক ১৩৩৯ হিজরী সনে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যান। বাবুনগর মাদ্রাসার নিকটে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

বাবুনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পীরে কামেল হযরত মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী (রাহ্.) মরহুমের চতুর্থ সন্তান ছিলেন। হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মূসা প্রকাশ বুযুর্গ সাহেব (রাহ্.) খলীফায়ে হযরত মাওলানা যমীরুদ্দীন (রাহ্.) তৃতীয় সন্তান, শাইখুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সাহেব মরহুমের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। [চলবে]

– আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, শায়খুল হাদীস ও শিক্ষাসচিব- আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী, চট্টগ্রাম এবং আমির- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।