Home ইতিহাস ও জীবনী উস্তাদুল উলামা আল্লামা শাহ্ হাফেজ মুহাম্মদ কাছেম (রহ.)এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

উস্তাদুল উলামা আল্লামা শাহ্ হাফেজ মুহাম্মদ কাছেম (রহ.)এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

।। আছেম মুহাম্মাদ কাছেম ।।

হযরত মুফতীয়ে আযম ফয়যুল্লাহ রহ.-এর মতাদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী, হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাহ হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. এর শেষ স্মৃতিচিহ্ন হযরত মাওলানা আবররুল হক হারদুয়ী রহ.-এর সর্বশেষ খেলাফতপ্রাপ্ত খলীফা ও বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন, ফকীহুল মিল্লাত শাহ মুফতি আব্দুর রহমান রহ-এর একমাত্র জামাতা, হযরত আল্লামা হাফেয কাছেম সাহেব রহ.

বর্তমান যুগের উলামায়ে কেরামের মধ্যে আকাবের দেওবন্দের সবিশেষ অনুগামিতা ও পূর্বসূরীদের পন্থা অনুসরণ তাঁর জীবনপ্রবাহের উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য, দেশ-বিদেশে তাঁর অসংখ্য ছাত্র, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন।

তিনি দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর একজন প্রভাবশালী শিক্ষক ও কর্মকার্তা ছিলেন। দারুল উলুমের যোগ্যতম মুহাদ্দিস ও দক্ষ উস্তায হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘকাল পর্যন্ত সেখানাকার নাযেমে তা’লিমাত (শিক্ষাসচিব), নাযেমে দারুল একামাহ (হোস্টেল সুপার), সহকারী মুহতামিমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দারুল উলুমের অসংখ্য খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। যা তাঁর ইখলাস ও ঐকান্তিকতা প্রোজ্জ্বল স্মৃতিচিহ্ন হয়ে দারুল উলুম এর ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।

তিনি জামেয়া আরাবিয়া নাছিরুল ইসলাম নাজিরহাটেও নির্বাহী পরিচালক ও শায়খুল হাদিস (সানী)হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জামেয়া কোরানিয়া তা’লিমুদ্দীনের মুতাওয়াল্লী ও ছদরে মুহতামিমের পদে আসীন ছিলেন। 

তিনি শিক্ষানুরাগ, ধর্মানুরাগ, আমানতদারি ও নীতিনৈতিকতায় প্রজন্মের উজ্জ্বল মনীষা। প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বপালনে তিনি যে অনুপুঙ্খতা ও ন্যায়নিষ্ঠতার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন তা আজকের বাস্তবতায় খুবই বিরল। প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকাণ্ডে কিঞ্চিৎ অন্যায়, অনিয়ম কিংবা বাতুলতা চোখে পড়লে তিনি নির্দ্বিধচিত্তে মুহূর্তে তা থামিয়ে দিতেন। অন্যায় প্রতিরোধে ছোট-বড়, আত্মীয়-অনাত্মীয় কেউই তাঁর কাছে ছাড় পেত না।  

জন্ম ও বংশ বৃত্তান্ত:

আল্লামা হাফেজ কাছেম সাহেব রহ. বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী, হাবশায় হিজরতকারী হযরত আবুওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহ আনহুর স্মৃতি বিজড়িত, নদ-নদী ও সামুদ্রিক সৌন্দর্যে বিভূষিত এলাকা বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন ধুরং নামের প্রসিদ্ধ গ্রামে ১৯৪৭ খ্রি. মোতাবেক ১৩৬৭ হিজরিতে একটি অভিজাত, শিক্ষানুরাগী ও ধর্মপ্রাণ দ্বীনদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। 

তাঁর পিতা: 

তাঁর পিতা মুনাযেরে যামান উসতাযুল মাশায়েখ হযরত আল্লামা শাহ নূর আহমদ ছাহেব -নাওয়ারাল্লাহ মারকাদাহু- ছিলেন খাতামুল মুহাদ্দিছিন ইমামুল আসর আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রাহ., শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা খালিল আহমদ সাহারানপুরী রহ., হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান কামেলপুরী রহ. এর বিশিষ্ট ছাত্রদের মধ্যে পরিগণিত। তিনি ছিলেন বংশীয় সূত্রে বড় জমিদার। তিনি জামেয়া আরাবিয়া নাছিরুল ইসলাম নাজিরহাট-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এবং ফটিকছড়ির জামেয়া কোরআানিয়া তা’লিমুদ্দীনও তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর এতদুভয় প্রতিষ্ঠানের প্রথম মুহতামিমও তিনি ছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মজলিসে শুরার একজন কর্মতৎপর ও প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন এবং প্রায়ই শুরার সভাগুলোতে তিনিই সভাপতিত্ব করতেন। 

মাতা:

তাঁর মাতা মুহতারামা মরহুমা আয়েশা খাতুন রাহিমাহাল্লাহ ছিলেন হযরতুল আল্লাম মাওলানা আব্দুর রহমান ভূজপুরী রহ.-এর কন্যা। মাওলানা ভূজপুরী রহ. ছিলেন জামেয়া ইসলামিয়া ভূজপুরের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং ফকিহুন নাফস হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ.-এর বিশিষ্ট ছাত্র ও মুরিদ। এছাড়াও তাঁর মাতা ছিলেন দারুল উলুম, হাটহাজারী ও জামিয়া ইসলামিয়া, পটিয়ার প্রথম পৃষ্ঠপোষক, খলীফায়ে গংগুহী হযরত শায়খুল মাশায়েখ জমিরুদ্দীন রহ.-এর আপন ভাগ্নী। 

বংশক্রম

আল্লামা হাফেয কাসেম বিন উস্তাযুল মাশায়েখ আল্লামা শাহ নূর আহমাদ বিন শাকের আলী বিন খোলন চৌধুরী বিন মরহুম গোলাম নবী বিন মাওলানা কাযী আইনুদ্দীন বিন মাওলনানা কাযী মুইনুদ্দীন বিন মাওলানা শাহ হুসনুজ্জামান চৌধুরী রাহিমাহুমুল্লাহ। তাদের অধিকাংশই আলেমেদীন এবং উর্দু ও ফার্সী ভাষার পণ্ডিত ছিলেন। 

তাঁর পূর্ব পুরুষ হযরত মাওলানা হুসনুজ্জামান রহিমাহুল্লাহ বৃটিশ উপনিবেশ পূর্বযুগে (মোঘল শাসনামলে) সরকারি নিয়মানুসারে কর্মস্থল পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বিহার থেকে চট্টগ্রাম এসে বসত গড়েন। 

প্রাথমিক শিক্ষাঃ

তিনি মাতৃস্নেহে থেকেই স্বীয় পিতার প্রতিষ্ঠিত জামেয়া কোরআনিয়া তা’লিমুদ্দীনে কায়েদায়ে বোগদাদী থেকে নিয়ে নাযেরা এবং হিফজ পর্যন্ত শেষ করেন। এখানে হিফজের সবক শেষ করার পর তাঁর পিতার পরিচালনাধীন অন্য আরেকটি মাদ্রাসা – জামেয়া আরাবিয়া নাজিরহাটে চলে যান এবং সেখানে ১৯৬১ সালে ভর্তি হয়ে হিফজের দাওর করেন খলিফায়ে হযরত মাদানী রহ. আল্লামা শাহ্ ক্বারী শামসুদ্দীন সাহেব রহ. এর কাছে। 

বাংলা, ইংরেজী, গণিত এগুলো জনাব মরহুম মাষ্টার মীর আহমদ ছাহেবের কাছে পড়েন। 

উর্দু, ফার্সী, দ্বীনীয়াত থেকে নিয়ে জামাতে পাঞ্জুম তথা শরহে জামি কানযুদ্দাকায়েক পর্যন্ত নাজিরহাট মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আপন পিতা মরহুম মাওলানা নূর আহমদ ছাহেব রহ. এর কাছে বিশেষভাবে পড়েন। কিন্তু তিনি কোথাও সফর ইত্যাদিতে গেলে তাঁর সবক অন্যান্য আসাতিযায়ে কেরামের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন, যাতে পড়ালেখায় কোন বিঘ্নতা না ঘটে। 

তাঁর পিতার বিভিন্ন সময়ের অনুপস্থিতিতে তিনি যে সকল আসাতিযায়ে কেরামের কাছে পড়েছেন, তাদের কয়েকজনের নাম নীচে উল্লেখ করা হলো-

১। আল্লামা ইসহাক ছাহেব কানাইমাদারী রহ.। সাবেক শায়খুল হাদিস জামিয়া ইসলামিয়া, পটিয়া ও জামিয়া আরাবিয়া, জিরি। 
২। হযরত মাওলানা আব্দুল জলিল ছাহেব, দা.বা., বর্তমান মুহতামিম : চাম্বল মাদ্রাসা , বাশখালী।
৩। হযরতুল আল্লাম হাফেজ আবুল খায়ের ছাহেব রহ., প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম: মাদরাসা হেদায়েতুল ইসলাম, মুনাফখীল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। 
৪। হাফেজ মাওলানা ফরিদ আহমদ ছাহেব রহ.।
৫। হযরতুল আল্লাম হাফেজ আহমদ হাসান রহ., সাবেক শায়খুল হাদিস: জামেয়া কাছেমুল উলুম চারিয়া, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। 
৬। মাওলানা আব্দুস সামাদ সাহেব রহ.।
৭। মাওলানা ইউসুফ ছাহেব রহ.।
৮। মাওলানা সুলতান ছাহেব শাহনগরী রহ.।
৯। মাওলানা জাফর ছাহেব মেখলী দাঃ বাঃ

এরপর তাঁর পিতা হযরত মাওলানা নূর আহমদ সাহেব রহ. বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে বাংলাদেশের আলেম উলামার ইলমি মাতৃক্রোড়, পুরো দেশের কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে যাওয়ার নির্দেশ দেন। 

তিনি সেখানে শারহে বিকায়া থেকে দাওরায়ে হাদিস ও দাওরায়ে তাফসির পর্যন্ত বিবিধ বিষয়ের বিভিন্ন কিতাবাদি বড় বড় উলামা মাশায়েখের সান্নিধ্যে পড়েন এবং ১৯৭১ খ্রি. দাওয়ারয়ে হাদিস ও ৭২ খ্রি. দাওয়ারে তাফসির অত্যন্ত সুনামের সাথে পড়ে ফারাগাতের সনদ লাভ করেন। 

দারুল উলুম হাটহাজারীতে তাঁর উল্লেখযোগ্য আসাতেযায়ে কেরামের বিস্তারিত পরিচিতি নিচে দেয়া হলো –

১। খলিফায়ে শায়খুল মাশায়েখ হযরতুল আল্লাম মাওলানা শাহ আব্দুল কাইয়্যুম সাহেব রহ.।
২। বাংলাদেশের মুফতিয়ে আযম ছানী খলিফায়ে মাদানী হযরত মাওলানা মুফতি আহমদুল হক ছাহেব রহ.।
৩। হযরতুল আল্লাম মাওলানা শাহ আব্দুল আবদুল আজীজ সাহেব রহ.।
৪। হযরত মাওলানা হাফেজ হামেদ ছাহেব রাহ.। পরবর্তী মুহতামিম- দারুল উলুম হাটহাজারী।
৫। আপন জেঠাত ভাই হযরত মাওলানা আবুল হাসান ছাহেব রহ. লেখক, “তানযিমুল আশতাত শরহে মিশকাত”।
৬। শায়খুল আদব আল্লামা মুহাম্মদ আলী নিজামপুরী ছাহেব রহ.।
৭। আল্লামা হাফেজুর রহমান ছাহেব রহ.।
৮। আল্লামা নাদেরুয যামান রহ.।
৯। বাহরুল উলুম আল্লামা নযীর আহমদ আনোয়ারী ছাহেব রহ.।

মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা ফয়যুল্লাহ ছাহেব রহ.- এর কাছেও তিনি বিশেষভাবে পড়েছেন। সপ্তাহে একদিন হযরত মুফতি ছাহেব রহ.-এর বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন কিতাবের জটিল জটিল জায়গাগুলো বুঝে নিতেন। 

খতিবে আযম হযরত মাওলানা সিদ্দীক আহমদ ছাহেব রহ. এবং দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক মুহতামিম হযরত মাও: কারী তৈয়্যব সাহেব রহ.-এর কাছেও বুখারী শরিফের কিছু অংশ পড়েছেন। 

শিক্ষকতা জীবন:

আব্বাজান হযরত আল্লামা হাফেজ কাছেম সাহেব রহ.-এর ব্যক্তিত্ব অসংখ্য উজ্জ্বল গুণাবলীতে উদ্ভাসিত হওয়ায় তাঁর প্রতি দারুল উলুমের জিম্মাদারগণের সুদৃষ্টি ছিল। বিশেষকরে তৎকালীন মুহতামিম শাহ আব্দুল ওয়াহহাব ছাহেব রহ. নাযেমেতালিমাত ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল কাইয়্যুম ছাহেব রহ., দারুল উলুমের নির্বাহী মুহতামিম আল্লামা হামেদ ছাহেব রহ. আল্লামা আব্দুল আযিয ছাহেব রহ. বাংলার দ্বিতীয় মুফতিয়ে আযম হযরত আল্লামা মুফতি আহমদুল হক ছাহেব রহ., শায়খুল আদব মাওলানা মুহাম্মদ আলী নেযামপুরী রহ. পীরে কামেল আল্লামা হাফেজুর রহমান ছাহেব রহ. দারুল উলুমের প্রতিষ্ঠাতার সুযোগ্য পুত্র মাওলানা খালেদ সাহেব রহ. প্রমুখ পরস্পর আলাপ আলোচনা করে তাঁকে দারুল উলুমের শিক্ষকরূপে নিয়োগ দেন। 

দারুল উলুমের নিয়মানুযায়ী তাঁরা তাঁর নামে প্রথমে প্রাথমিক কিতাবাদি বণ্টন করেন। এরপরে আস্তে আস্তে তাঁর নামে উচ্চস্তরের কিতাবাদি সংযোজন করতে থাকেন এমন কি এক পর্যায়ে তিনি দরসে নেযামির উচ্চস্তর পর্যন্ত অধিকাংশ মৌলিক কিতাব পড়ান। 

যেমন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক কিতাবাদি থেকে মীযান, মুনশাইব, নাহুমীর, হেদায়াতুননাহু, ছোগরা, কোবরা, শরহে তাহযীব, কানযুদ্দাকায়েক, শরহে বিকায়া, মুখতাসার, হেদায়া, হুসামী, মুত্বাওয়াল, তাওযীহ, মুসাল্লামুসসুবুত, মুতানাব্বী প্রভৃতি বুনিয়াদী কিতাবগুলো পড়ান। 

এরপর উচ্চ স্তরের কিতাবাদী থেকে জালালাইন, বায়যাভী, মেশকাত, মুয়াত্বা মুহাম্মাদ মুয়াত্তা মালেক ও ত্বাহাবী শরীফ পড়ান। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা, আন্তরিকতা ও প্রফুল্লতার সাথে দরস দিতেন। তাঁর দরসের প্রচুর সুনাম ও প্রসিদ্ধি ছিল। কারণ, দরসদানের পদ্ধতি অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর ছিলো। ছাত্ররা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তার দরসে উপস্থিত হত। 

প্রাতিষ্ঠানিক কতিপয় দায়িত্ব

তাঁর মাঝে অধ্যাপনা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক যোগ্যতাও সমানভাবে বিদ্যমান ছিল। একারণেই মজলিসে শূরার পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন সুনিপুনভাবে। তন্মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিম্নরূপ:

১। নাযেমে মাতবাখ:
মসজলিসে শূরার পক্ষ থেকে জামেয়ার ছাত্র শিক্ষকদের পানাহারের অধিকতর উন্নত আয়োজনের ব্যবস্থা করার জন্য তাকে নাযেমে মাতবাখ নির্বাচন করা হয়। তিনি কয়েক বৎসর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন।

২। সহকারী নাযেমে দারুল একামা :
জামেয়ার অভ্যন্তরে ছাত্রদের আবাসিক ও তরবিয়তি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য তাঁকে মজলিসে শূরা সহকারী নাযেমে দারুল একামার দায়িত্বে নিয়োগ দেন।

৩। নাযেমে তালিমাত :
জামেয়ার মজলিসে শূরা তাঁর উপর বড়ই আস্থা রাখতেন। জামেয়ার মুরব্বীগণের উপস্থিতিতে তাঁকে দারুল উলুমের নাযেমে তালিমাত নিয়োগ দেয়া হয় মজলিসের শূরার পক্ষ হতে। তিনি নাযেম থাকাকালীন জামেয়ার শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়।

৪। কোষাধ্যক্ষ :
জামেয়ার পৃষ্ঠপোষকগণ এবং মজলিসে শূরার সদস্যগণের কাছে তাঁর আমানতদারী- দিয়ানতদারী, বিশ্বস্থতা-ধার্মিকতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট ছিল। অমুখাপেক্ষিতা ও লেনদেনে পরিচ্ছন্নতায় তিনি অদ্বিতীয় ছিলেন। মজলিসে শূরা তাঁকে দারুল উলুমের কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। তিনি কোষাধ্যক্ষ থাকাকালীন এক পয়সাও এদিক সেদিক হয়েছিলো, এমন কোন নজির নেই। মজলিসে শূরা প্রতি বছর অডিট করার পরে অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মন্তব্য করতেন। তাঁর অনুমোদনবিহীন দারুল উলুমের কোন বিল-ভাউচার গ্রহণ যোগ্য বলে বিবেচিত হতো না।

৫। ইন্টারনাল অডিটর অব দারুল উলুম:
আব্বাজন দাদাজান রহ. এর কাছ থেকে হিসাবনিকাশেও পারঙ্গমতা অর্জন করে ছিলেন। তাঁর উপর পূর্ণ আস্থার প্রকাশ ঘটিয়ে মজলিসে শূরা তাঁকে জামেয়ার সমস্ত হিসাব নিকাশের নাযেমে আলা তথা চিফ অডিটর নিয়োগ দেন। তিনি জামেয়ার সমস্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করে মজলিসে শূরার কাছে রিপোর্ট করতেন।

এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি মাদরাসার আর্থিক কারবারে সংশ্লিষ্ট সকল থেকেই হিসাব-নিকাশ অনুপুঙ্খভাবে বুঝে নিতেন। এ ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎকর গরমিলও তিনি সহ্য করতেন না। তিনি নিজের এ অনুপুঙ্খ হিসাবরক্ষণ নীতিতে মাদরাসার সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে সাধারণ কর্মকর্তা পর্যন্ত সকলের সঙ্গে সমান কঠোর ছিলেন। কারো বক্র দৃষ্টি কিংবা কটু কথার পরোয়া না করে তিনি অভয়ে নিজ পথে হেঁটেছেন সবসময়। নীতি ও আমানতদারি রক্ষাই ছিল তাঁর কাছে বড়।

৬। সহকারী মুহতামিম:
তাঁর খোদাপ্রদত্ত সহজাত প্রশাসনিক যোগ্যতাবলীর মূল্যায়ন করে মজলিসে শূরা তাঁকে সকল সদস্যের ঐক্যমতে মুহতামিমের সহকারী নিয়োগ দেন। দারুল উলুম হাটহাজারী বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পেছনে জামেয়া প্রধানের পাশাপাশি তাঁর অবদান সূর্যালোকের ন্যায় সমুজ্জ্বল। জামেয়ার পৃষ্ঠপোষকগণ, মজলিসে শূরার সদস্যগণ, জামেয়ার সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ ও জামেয়ার মুহিব্বীন সকলেই একবাক্যে তাঁকে জামেয়ার সফল সহকারী মুহতামিম হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন।

জামেয়া পরিচালনার প্রতিটি কাজে প্রতিটি বিভাগে একজন সফল সহকারী পরিচালক হিসেবে তাঁর মুখর পদচারণা ছিল। জামেয়ার শিক্ষা, দীক্ষা ও ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক উন্নতির জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। সর্বদাই দারুল উলুমের কাজকে তিনি ব্যক্তিগত বিষয়াদীর ওপর প্রাধান্য দিতেন। জামেয়ার সংশ্লিষ্ট সকলেই তাঁর উপস্থিতিকে মাদ্রাসার জন্য উপকারী মনে করতেন।

একবার তিনি মুহতামিম সাহেবের অনুপস্থিতিতে শারীরিক চিকিৎসার জন্য জামিয়ার সদরুল মুদাররিসিন বরাবর দরখাস্ত পেশ করেন। সদরুল মুদাররিসীন হযরত আল্লামা মুফতি আহমদুল হক ছাহেব রহ. দরখাস্ত মঞ্জুর করত লিখে দেন: برائے مفاد مدرسہ رخصت دادہ شد (মাদ্রাসার উপকারার্থে ছুটি মঞ্জুর করা হলো।) আব্বাজান তাঁর এ লেখা দেখে আশ্চার্যান্বিত হয়ে বললেন- হযরত আমি তো ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ছুটি চেয়েছি, মাদ্রাসার কাজে নয়। হযরত উত্তর দিলেন, তোমার সুস্থ উপস্থিতিই মাদ্রার জন্য উপকারী। সুবহানাল্লাহ।

দীর্ঘ তিন দর্শকেরও অধিক সময় ধরে তিনি যে ঐকান্তিকতা, একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতার সাথে মাদ্রাসার যাবতীয় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, সদরুল মুদাররিসেনের এ কথাটি তার পক্ষে উজ্জ্বল প্রমাণ বহন করে। 

তিনি দারুল উলুমের যোগ্যতম একজন মুহাদ্দিস, মুফাচ্ছির এবং প্রভাবশালী কর্মোদ্দম সহযোগী মুহতামিম হিসেবে দারুল উলুমের শিক্ষাদীক্ষা ও ব্যবস্থাপনাগত সর্ববিধ উন্নয়নের জন্য অসংখ্য খেদমত করে গিয়েছেন। সব কষ্টকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন। ব্যক্তিগত শত সুবিধা অসুবিধাকে পাশ কেটে গিয়েছন, অগ্রাহ্য করেছেন। দেশে এবং দেশের বাইরে বিশেষ করে লন্ডন, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বহুদেশে জামেয়া এবং জামেয়ার কর্মধারার সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য এবং জামেয়াকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে করতে নিজ যৌবন উৎসর্গ করে দিয়ে ছিলেন। 

দেশে বিদেশে তাঁর অগণিত ছাত্র-শিষ্য শিক্ষা দীক্ষার খেদমতে নিবেদিত থাকা ছাড়াও দ্বীনের অসংখ্য অঙ্গনে অগণিত সেবা দিয়ে গেছেন। আল্লাহ রাব্বুল ইয্যত সকলের খেদমতকে কবুল করে নিন এবং আব্বাজানের জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গ্রহণ করে নিন। আমীন। 

দারুল উলুম হাটহাজারীর ইতিহাসে একজন ব্যক্তি এককভাবে শূরা-প্রদত্ত হয়ে এতগুলো বিভাগের দায়িত্ব এক সঙ্গে আঞ্জাম দেওয়ার কোনো পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। একজন ব্যক্তির পক্ষে এভাবে এতগুলো দায়িত্বের বোঝা মাথা পেতে নিয়ে অত্যন্ত সুচারুরূপে এবং অসাধারণ দক্ষতার সাথে তা আঞ্জামদেয়ার ঘটনা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসেই বিরল। একই ব্যক্তি কর্তৃক নাযেমে মতবখ (বোর্ডিং সুপার), নাযেমে দারুল ইকামা (হোস্টেল সুপার), নাযেমে তালিমাত (শিক্ষাপরিচালক), কোষাধ্যক্ষ, ইন্টারনাল অডিটর এবং সহকারী পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব পদের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার দৃষ্টান্ত তিনিই ছিলেন। আর এসব ছিলো তাঁর খোদাপ্রদত্ত অসাধারণ সব যোগ্যতা, দক্ষতা, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিদ্বীপ্ততার বহিঃপ্রকাশ।

আরও পড়তে পারেন-

এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্য যে কোনো মানুষকেই ঐ সব পদের যোগ্যতা ছাড়াও দুর্বিনীত সাহস, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, বেআইনীর সাথে আপোষ না করায় পণবদ্ধতা ও মানসিক ঔদার্যের ধারক হওয়া জরুরী। স্বজনপ্রীতি, লৌকিকতাপ্রীতি, স্বজাত্যবোধ, দায়িত্বে অবহেলাকে ছাড়দেয়ার মানসিকতা এসব পদের যিম্মাদারদের প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। আলহামদুলিল্লাহ! তিনি এসব দূষণীয় স্বভাবগুলো থেকে নিজেকে সর্বাত্মক বাঁচিয়ে রেখেছেন। মাদ্রাসার স্বার্থে, মাদ্রাসার কাজে, মাদ্রাসার আইনে সামান্য ছাড় দেওয়া তিনি বিন্দুমাত্র সহ্য করতেন না। যে কোন অনৈতিক কাজেই তিনিই বাঁধা দিতেন, প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। আর বিফজল্লিলাহ এসব কারণেই তিনি এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে সক্ষম হয়েছেন।

দারুল উলুম হাটহাজারী থেকে অব্যাহতি গ্রহণ ও জামেয়া নাজিরহাটে যোগদান

দীর্ঘ তিরিশ বৎসরের অধিক সময়কাল পর্যন্ত দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষাদীক্ষার খেদমত ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত থাকার পর প্রকৃতির অমোঘ বিধান অনুসারে একদিন তিনি প্রিয় মাতৃক্রোড়তুল্য প্রতিষ্ঠানকে খায়রবাদ (ভালো থেকো; বিদায়!) বলে চলে আসেন। ২০০৩ ঈ.-তে তিনি দীর্ঘ ৩০ বৎসরের কর্মক্ষেত্র দারুল উলুম হাটহাজারী থেকে পৃথক হয়ে নিজ পিতার প্রতিষ্ঠিত জামেয়া আরাবিয়া নাছিরুল ইসলাম নাজিরহাটে তৎকালীন মুহতামিমের উপর্যুপরি অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং মজলিসে শূরার সিদ্ধান্তে নির্বাহী পরিচালক ও শায়খুল হাদিসের (সানী)মহান দায়িত্বের বোঝা আপন স্কন্ধে উঠিয়ে নেন। তিনি বছর খানিক এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দুটি অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সাথে আঞ্জাম দেন। তাঁর অবস্থানকালীন সময়ে এই জামেয়ার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। উল্লেখ্য, ১৩৯৮ হি. থেকে অত্র মাদ্রাসার শূরার অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে আমৃত্যু খেদমত করে গিয়েছেন।

জামেয়া কোরআনিয়া তা’লিমুদ্দীনে 

তিনি ১৩৯৮হি. থেকে জামেয়া কোরআনিয়া তা’লিমুদ্দীনের মুতাওয়াল্লীর পদ অলংকৃত করে আসছেন। নাজিরহাট মাদ্রাসায় কয়েক বৎসর খেদমত করার পর পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন সমস্যা এবং বিবিধ জরুরতের প্রেক্ষিতে তিনি সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে এসে জামেয়া কোরআনিয়া তা’লিমুদ্দীনের পরিচালনায় যোগদান করেন। তাঁর অবিরাম চেষ্টা সাধনার ফলে এই জামেয়া কোরআনিয়ার শিক্ষাদীক্ষায় যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে। এই জামেয়া তাঁরই অবদানে বিদআতের তমসাচ্ছন্ন কুহেলিকায় হকের একমাত্র প্রদীপ হয়ে আপন আলো বিলিয়ে যাচ্ছে।

আধ্যাত্মিক সাধনা

তিনি ছাত্র যামানাতেই যখন কাফিয়া ইত্যাদি পড়ছিলেন, নিজ মাতার নির্দেশে মুফতিয়ে আযম ফয়যুল্লাহ সাহেব নাওয়ারাল্লাহ মারকাদাহুর হাতে বায়য়াত গ্রহণ করেন। তাঁর থেকে সুলুক ও তাছাউেেফর পথে প্রচুর ইস্তিফাদা করেন। তাঁর জীবনে হযরত মুফতিয়ে আযম ছাহেব রহ.-এর প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তিনি মুফতি সাহেব হুজুরের রুহানি তাওয়াজ্জুহ দ্বারা উদ্ভাসিত। তিনি তাঁর চিন্তাগত মতাদর্শের অবিচল অনুসারী ছিলেন। ইলমী তাহকিকাতের ক্ষেত্রেও তিনি হযরত মুফতি সাহেব রহ.-এর মতকে শেষ কথা হিসেবে মানেন। 

তাঁর ইন্তিকালের পরে তিনি খলীফায়ে শায়খুল মাশায়েখ, শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল কাইয়্যুম ছাহেব রহ.-এর দিকে রুজু করেন। এবং তার থেকে সুলুকের পথে ইস্তিফাদা করতে থাকেন। তাঁর ওফাতের পরে হাকিমুল উম্মত মজাদ্দিদুল মিল্লাত আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর সর্বশেষ স্মৃতিচিহ্ন মুহিউসসুন্নাহ শাহ আবরারুল হক হারদূয়ী ছাহেব রহ.-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। তাঁর সুহবতে থেকে সুলুক ও তাসাওউফের একেকটি মনযিল অতিক্রম করতে থাকেন। এমনকি এক পর্যায়ে হযরতের মৃত্যুর দিন কয়েক পূর্বে তাঁর থেকে খেলাফত এবং বায়আত ও তালকীনের ইযাযত প্রাপ্ত হন। 

মানবসেবা:

পরোপকার যেন তাঁর প্রতিটি লোহিত শিরায় চলমান। তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রতই যেন মানবসেবা, পরোপকারিতা। তাই তো তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীতে নিজ মনপ্রাণ উজাড় করে ও শ্রম-ঘাম ঝরিয়ে খেদমত করে গেছেন নিরলসভাবে, নিঃস্বার্থভাবে। এছাড়াও তিনি অনেক সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করে নিজেকে ঈষর্ণীয় মানবসেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর বহুমুখী সেবামূলক কর্মপ্রবাহের সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি নিম্নে প্রদত্ত হলো-

১। তিনি নিজ নানা হযরত মাওলানা আবদুর রহমান ভূজপুরী রহ.-এর মাকবারার পাশে মাদ্রাসায়ে রহমানিয়া নামে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আল্লাহর মেহেরবানীতে এ মাদ্রাসার উসিলায় ঐ এলাকার অনেক দ্বীনী উন্নতি সাধিত হয়েছে৷

২। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্রে তাঁর দানের হাত সক্রিয় রয়েছে। এসব মাদ্রাসা সচল থাকার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। 

৩। পার্শ্ববর্তী দেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিম ভাইদের দ্বীনি প্রয়োজন পুরণের লক্ষ্যে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে তাঁর উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয়।  

৪। ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বিভিন্ন দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহে তাঁর অনুদান সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বারকয়েক তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানকার মাদ্রাসাসমূহের সংশ্লিষ্টদের একত্র করে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। জাতির উপেক্ষিত এই মহান মানুষগুলোর প্রতি তার দৃষ্টিদান তার ঐকান্তিকতা, আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতার পরিচয় বহন করে। এবং নিঃসন্দেহে এটা তাঁর দূরদর্শীতার বহিঃপ্রকাশ। 

৫। এছাড়াও বর্তমানে তিনি দেশের অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে শিক্ষা-দীক্ষার ময়দানে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। 

মানবিক গুণাবলী:

তিনি শুধু একজন দক্ষ শিক্ষক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বই না, এতদুভয়ের পাশাপাশি তিনি অসংখ্য মানবিক গুণাবলীর অধিকারী। তাঁর বিশেষ একটি গুণ ইস্তেগনা তথা অমুখাপেক্ষিতা, কারো কোন কিছুর প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ করতে দেখা যায় না তাঁকে। দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে শিক্ষারত কোন ছাত্র থেকে একটি পান খেয়েছেন বলেও কেউ বলতে পারবে না। কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ও আইন অমান্যে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়া তো তাঁর জীবনের উন্নতির অন্যতম সোপান। লেনদেনের স্বচ্ছতায় তিনি অতিমাত্রায় সতর্ক। এক্ষেত্রে তিনি প্রণিধানযোগ্য ব্যক্তিত্ব। স্বজনপ্রীতি ও স্বজাত্যবোধ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ পূত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এই গুণের কারণে সর্বমহলে তাঁর সমান গ্রহণযোগ্যতা ছিলো এবং আছে। এলাকাভিত্তিক দলাদলি, কোন্দল যেন তাঁকে এডিয়েই চলতো। নিজ জেলার ছাত্রদের প্রাধান্যদান, অন্য জেলার ছাত্রদের আড়চোখে তাকানো এসবের লেশমাত্রও তাঁর মাঝে ছিলো না। এজন্যই তার সর্বজনমান্য একটি অবস্থান ছিলো হাটহাজারী মাদ্রাসায়। সব জেলার ছাত্ররাই তাঁকে প্রিয় মানতো, মুরব্বী মানতো এমনকি পারিবারিক বিষয়েও পরামর্শ গ্রহণ করত। 

ইন্তিকাল

দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানাবিধ রোগে আক্রান্ত থেকে গত বুধবার ২৭ শাওয়াল ১৪৪২ হিজরী মুতাবিক ৯ জুন ২০২১ ঈসায়ী মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন। আল্লাহ তাআলা মরহুম হযরতকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম নসিব করুন। আমিন।

– আছেম মুহাম্মাদ কাছেম, শিক্ষক- আল জামি‘আ আল মাদানিয়া, সিলোনিয়া, ফেনী।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।