Home ওপিনিয়ন ঈশ্বরের অনুপস্থিতি ও যাজকদের কেলেঙ্কারি

ঈশ্বরের অনুপস্থিতি ও যাজকদের কেলেঙ্কারি

মুসা আল হাফিজ।

। । ‍মুসা আল হাফিজ ।।

৩ অক্টোবর বোরবার, বিবিসির একটি রিপোর্ট সচেতন মহলের নজর কাড়ে। রিপোর্টের মূল বার্তা হলো, পঞ্চাশের দশকে ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জায় হাজার হাজার যৌন নির্যাতক ছিল। ১৯৫০ এর দশকে ফ্রান্সে রোমান ক্যাথলিক চার্চে ঘটে বহু যৌন নিপীড়নের ঘটনা। সেগুলোর তদন্তে গঠিত হয় নিরপেক্ষ এক কমিশন। ২০১৮ সাল থেকে সক্রিয় এ কমিশন ১১৫,০০০ জন পাদ্রি ও অন্য গির্জা কর্মকর্তার ব্যাপারে তদন্ত চালায়। এতে যুক্ত ছিলেন ডাক্তার, ইতিহাসবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও ধর্মতত্ত্ববিদ অনেকেই। চার্চ, আদালত ও পুলিশের দলিলপত্রের আর্কাইভে তারা প্রমাণ অনুসন্ধান করেন। তখন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, এমন জীবিত লোকদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ছয় হাজারেরও বেশি সাক্ষীর সাথে যোগাযোগ হয় তাদের।

কমিশন প্রকাশ করেছেন প্রায় আড়াই হাজার পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট। ফরাসি দৈনিক লা মঁদকে কমিশনের তরফে জঁ-মার্ক সোভ জানিয়েছেন, দুই হাজার ৯০০ থেকে তিনি হাজার ২০০ পাদ্রি ও যাজকদের তথ্য তারা পেয়েছেন, যারা শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনে লিপ্ত ছিলেন। মার্ক সোভ জানান, একেবারে কমিয়ে বলা হলে সংখ্যাটি এই দাঁড়ায়। তাদের দ্বারা সংঘটিত যৌন নিপীড়নের ঘটনার পরিমাণ কত, তা রোমহর্ষক হবে এবং এ জন্য এ রিপোর্টকে বোমা বিস্ফোরণের সাথে তুলনা করা হচ্ছে।

কিন্তু এমন ঘটনা যাজকদের পরিসরে ব্যাপকভাবে ঘটে বলছে। যার বিপুল অংশ ঢাকা পড়ে যায়। বিশাল হিমবাহের ক্ষুদ্রতম মাথা কখনো কখনো চোখের সামনে হাজির হলে এ নিয়ে হইচই হয়। কিন্তু সমস্যার যথার্থ সমাধান কি ঘটছে?

১৯৯৪ সালের অক্টোবরের শুরুতে বেলফাস্টের ইউটিভি নামের চ্যানেলে প্রচারিত এক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান যাজকদের বড় আকারে প্রশ্নের মুখে ফেলে। আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক চার্চে শিশুদের ওপর কী হারে যৌন নিপীড়ন ঘটে, তা দেখায় এ অনুষ্ঠান। সাফার লিটল চিলড্রেন নামের এ অনুষ্ঠানে ছিল- একজন ক্যাথলিক যাজকের গল্প, যিনি শিশুকামী। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি এমন ছেলে ও মেয়েশিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়ে আসছিলেন, যাদের অনেকের বয়স ছয় বছর।

অনুসন্ধানী সাংবাদিক ক্রিস মোর সেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এক বড়দিনের পার্টিতে তার পরিচয় হয় বেলফাস্টের এক মহিলার সাথে, যিনি বেদনার স্মৃতি বহন করছিলেন। তিনি ধর্ষিতা হন ফাদার বেন্ডন স্মিথ নামে এক ক্যাথলিক যাজকের দ্বারা। এ যাজক ধর্ষণ করেন শুধু তাকে নয়, তার বোনকে এবং তার পরিবারের চারটি শিশুকে। ফাদার ছিলেন এ পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং বড়রা যখন টেবিলে বসে খাচ্ছে, শিশুরা তাদের রুমে খেলছে, তখন তিনি শিশুদের কাছে গিয়ে যৌনতা করতেন। ফাদার স্মিথের যৌন কদাচারের কবলে পড়েছে এ পরিবারের আত্মীয় অনেকেও। পরিবারটি চেষ্টা করে স্মিথকে আইনের সম্মুখীন করতে, পারেনি। ফলে ভগ্ন হৃদয় নিয়ে এ মহিলা ক্রিস মোরের শরণ নেন।

মোর সিদ্ধান্ত নিলেন এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করবেন এবং তার অনুসন্ধানের ফলাফল যখন প্রকাশিত হলো, তার কাছে এমন লোকদের কল আসতে লাগল, যারা যাজকদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কল আসার মাত্রা ছিল বন্যার পানির মতো। নিপীড়িতরা কাঁদছিল, এমন দুঃখভার ছিল তাদের, যা অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছিল জীবনভর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এসব ঘটনার কথা শোনার প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ক্রিসের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। যখন তার প্রথম নাতির জন্ম হলো, তিনি তাকে স্পর্শ করতে ভয় পেতেন। শিশুদের ওপর পরিচালিত সেসব ঘটনার ভার যেন তার হাতকে অনড় করে দিত।

আয়ারল্যান্ডের এ ঘটনার পর কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশেও যাজকদের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা ফাঁস হতে লাগল। ২০০০ সাল থেকে চিলিতে রোমান ক্যাথলিক গির্জার নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠতে থাকে। অভিযোগকারীরা ছিল শত শত, যাদের ৬৭ শতাংশই শিশু। চিলির ক্যাথলিক গির্জার প্রধান কার্ডিনাল রিকার্ডো এজ্জাতির ওপরও দায় চাপে। বিচার বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়, কার্ডিনাল যৌন নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

অত্যাচারিতদের সাথে কথা বলেন বিবিসির সাংবাদিক কনস্তানজা ওলা। তাদের একজন ছিলেন মরসিও পালগার। পাদ্রি হবেন বলে দুই মাস পড়াশোনা করেন গির্জার স্কুলে। সেখানে নিয়মিতই যৌন নির্যাতনের শিকার হতেন। কনস্তানজাকে তিনি শোনান মদ্যপান করিয়ে তার সাথে পাদ্রির জবরদস্তিমূলক সমকামিতাসহ বিভিন্ন রকম কাহিনী। এসবে যখনই বাধা দিতে চেয়েছেন, নানামুখী অত্যাচারের কবলে পড়েছেন। পরে তিনি এ স্কুল ছেড়ে দেন। কিন্তু কেন ছেড়ে দেন, সে কথা বলারও সুযোগ ছিল না। সুযোগটি আসে ২০ বছর পরে।

২০১৩ সালে তিনি গির্জা কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন। বিশপ দুয়ার্তে বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত হয়েছে, তবে অপরাধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

১৯৯৩ সালে চিলির মধ্যাঞ্চলে এক ধর্মানুষ্ঠানে সাথীদেরসহ তিনি যান। ফাদার তাদের জামাকাপড় খুলে সুইমিংপুলে নামতে বলেন। তিনি ও তার এক বন্ধু অস্বীকার করলেন, কিন্তু ফাদার জোর করছিলেন ও বলছিলেন, তোমরা নগ্ন হচ্ছো না, নিজেদের যৌনরোগ আড়ালে রাখার জন্য। কিন্তু তারা যখন পুলে নামলেন, ফাদার পুলে নেমে তাদের গায়ে হাত দিতে থাকলেন। এমন অভিযোগ অনেকেই করেন। ১২ বছর বয়সে সেবাস্তিয়ান ডেল রিও পাদ্রি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে হাইস্কুল শেষ করে তিনি একটি ধর্মীয় স্কুলে ঢুকে পড়েন। গির্জার সেই স্কুলের ডিন তাকে নগ্ন হয়ে সাঁতার কাটতে বাধ্য করেন। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তার কাছে আসতেন। ভয়ে তিনি দরজা খুলে রাখতেন। কর্তৃপক্ষকে সমস্যাটি জানালে বলা হলো, তিনি তোমার প্রেমে পড়ে গেছেন!

ব্যাপারগুলো ক্যাথলিক চার্চকে এক সঙ্কটে ফেলে দেয়। অনুসন্ধানের কবলে পড়ে সরাসরি চার্চ নিজেই। এসব ঘটনার ব্যাপারে কতটুকু জানত? কেন তারা এসব থামাতে ব্যর্থ হলো? এসব প্রশ্নই নব্বইয়ের দশক থেকে সবলে উচ্চারিত হচ্ছিল। ক্রিস মোর অনুসন্ধান করেন এবং জানান, চার্চ এ সম্পর্কে বহু কিছুই জানত। তারা যাজকদের অবাধে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে দিয়েছে। চার্চগুলোর গোপন ভল্টে এমন সব কাগজপত্র পাওয়া গেছে, যাতে দেখা যায়- তারা নির্যাতনকারী যাজকদের সম্পর্কে বিশদ তথ্যসমৃদ্ধ দলিলপত্র রাখত। নির্যাতনের শিকাররা যেসব কথা তাদের বলেছে, সেসব খুঁটিনাটি তথ্যও তারা সংরক্ষণ করেছে। তার পরও তারা এ ব্যাপারে কিছুই করেনি। চার্চের সুনাম রক্ষাই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

ক্রিস বলেন, আমি কখনোই মনে করি না যে, সব যাজকই এমন। কিন্তু শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা যারা জেনেও গোপন রেখেছে এবং নির্যাতনকারীদের আইনের হাতে তুলে দেয়নি তারাও একই অপরাধে অপরাধী।

আয়ারল্যান্ড, চিলি কিংবা অন্যান্য এলাকায় অভিযুক্ত পাদ্রিরা বিভিন্ন রকম শাস্তির সম্মুখীন হন। পোপের তরফে দুঃখ প্রকাশ করা হয় এবং এসবের ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শক্তভাবে তিরস্কার করা হয়। নারী নিপীড়ন ও নারীবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিতে চার্চের নানা সমস্যা নিয়েও পোপ স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দেন। ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিবিসি জানায়, প্রথমবারের মতো পোপ ফ্রান্সিস স্বীকার করেছেন যে, গির্জার নানরা যাজকদের কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এবং গির্জার অনেক যাজক নানদের যৌনদাসী করেও রেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসেবে দেখার প্রবণতাটি এখনো গির্জায় একটি সমস্যা হয়ে রয়ে গেছে।’
‘যাজক ও বিশপরা নানদের নিপীড়ন করেছেন। তবে গির্জা এখন এসব কেলেঙ্কারি নিয়ে সতর্ক হয়েছে এবং এটি বন্ধে কাজ করছে। বেশ কয়েকজন যাজককে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

‘পোপ বেনেডিক্ট সাহস নিয়ে নারীদের একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কারণ সেখানে যাজক বা প্রতিষ্ঠাতাদের হাতে নারীদের নিপীড়নের বিষয়টি যৌন দাসত্বে রূপ নিয়েছিল।’

২০১৮ এর নভেম্বর মাসে ক্যাথলিক গির্জার নানদের বৈশ্বিক সংগঠন জানায়, ‘ভয় ও নীরবতার সংস্কৃতির’ কারণে নানরা গির্জার এই যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেননি।

ভ্যাটিকানের নারীদের ম্যাগাজিন, উইমেনস চার্চ ওয়ার্ল্ড বলছে, অনেক ঘটনায় নানরা ধর্মীয় বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও গর্ভপাত করাতে বাধ্য হয়েছেন।

নিপীড়নের বিষয়ে পোপের এই স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানিয়ে ম্যাগাজিনের সম্পাদক লুসেত্তা স্কারাফিয়া বলেন, এটি হয়তো খানিকটা সাহায্য করবে, কিন্তু গির্জাকে আসলে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। তার মতে, ‘এ ধরনের কেলেঙ্কারির প্রতি যদি বরাবরের মতো গির্জা চোখ বন্ধ করে রাখে, তা হলে নারীদের ওপর নির্যাতনের পরিস্থিতি কখনোই পাল্টাবে না।’

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চার্চে শিশুদের সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে একটি সম্মেলন হয়; তাতে যোগ দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি সঙ্কট সমাধানে শুধু ‘সাধারণ ও সুস্পষ্ট নিন্দা’ প্রকাশ নয়, বরং ‘বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা’ গ্রহণের আহ্বান জানান। কিন্তু কী হতে পারে সেই বাস্তবোচিত ব্যবস্থা? পোপ বেনেডিক্ট বলেছিলেন, সমস্যাটির একমাত্র সমাধান হলো ‘প্রভু যিশুখ্রিষ্টের প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসা’। ষোড়শ বেনেডিক্ট ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পোপ ছিলেন। তিনি একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটাতে চেয়েছিলেন এবং এ সঙ্কট নিয়ে দিয়েছিলেন এক তত্ত্ব। পাঁচ হাজার ৫০০ শব্দের বিখ্যাত এক চিঠিতে যাজকদের যৌন নিপীড়নের জন্য তিনি ১৯৬০ দশকের অবাধ যৌন স্বাধীনতাকে দায়ী করেছিলেন। বলেছিলেন, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন ক্যাথলিকদের নৈতিকতাকে শিথিলীকরণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৬০ দশকের যৌনতার বিপ্লব ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমকামিতা ও শিশু যৌন নিগ্রহের বিস্তার ঘটিয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

পোপ বেনেডিক্টের চিঠিটি প্রকাশিত হয় জার্মান ক্যাথলিক ম্যাগাজিন ক্লেরুসব্লাট-এ । তিন ভাগে বিভক্ত এ চিঠির প্রথম ভাগে তিনি তুলে ধরেন ‘প্রশ্নের বৃহত্তর সামাজিক পটভূমি’। ১৯৬০-এর দশককে এমন একসময় হিসেবে চিহ্নিত করেন, যখন ‘যৌনতার বিষয়ে এর আগের সময়ের সব ধরনের মানদণ্ড পুরোপুরি ধসে পড়ে’। এ ভেঙে পড়ার জন্য দায়ী যৌন চলচ্চিত্র, নগ্ন ছবি এবং ‘সেই সময়ের পোশাক-আশাক’, যার ফলাফল ‘মনোগত ধস’ ও ‘সহিংসতা’।

তার মতে, এ সময়ে ‘ক্যাথলিক অ্যাধ্যাত্মিক ধর্মতত্ত্বে ধস নামে, যার ফলে সমাজে যে পরিবর্তন হচ্ছিল, তা মোকাবেলায় চার্চ অসহায় হয়ে পড়ে।’

শিশুদের যৌন নিপীড়ন যৌন বিপ্লবের কারণেই ‘অনুমোদিত ও যথাযথ হিসেবে’ গণ্য হয়ে যায়। তখনকার পরিস্থিতি ‘খ্রিষ্টীয় নৈতিকতার ধারণাকে শিথিল’ করে দেয়; বিশেষ করে ক্যাথলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশপরা ক্যাথলিকতার ক্ষেত্রে ‘নতুন, আধুনিক কিছু আনতে’ চেষ্টা করেন এবং যৌন বিপ্লব শিক্ষালয়গুলোতে ‘সমকামী চক্র’ গড়ে উঠতে সাহায্য করে। পোপ বেনেডিক্টের এ তত্ত্ব আপন সময়ে সমালোচিত হয়। ভ্যাটিকান বিশেষজ্ঞ জশুয়া ম্যাকএলউই একে আখ্যা দেন ‘নিপীড়নের ঘটনাগুলো চাপা দেয়ার কাঠামোগত ব্যবস্থা’ হিসেবে। তবুও এ তত্ত্বের একটি মূল্য ও প্রভাব ছিল। কিন্তু বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকে ফ্রান্সের ক্যাথলিক চার্চে যে ভয়াবহ যৌন নিপীড়নের প্রমাণ সামনে এলো, তা তত্ত্বটিকে নতুনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে; কারণ পঞ্চাশের দশকের এ কদাচারের জন্য নিশ্চয় ষাটের দশককে দায়ী করা যাবে না। নগ্ন ছবি, পোশাক প্রসঙ্গ, মনোগত ধস ইত্যাদির প্রভাব একটি বাস্তব সঙ্কট হলেও সমস্যার গোড়া নিশ্চয় আরো গভীরে।

বেনেডিক্ট তার চিটিতে একে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। প্রশ্ন করেন, ‘শিশুদের যৌন নিপীড়ন আজ এই অনুপাতে পৌঁছেছে কেন?’ উত্তরে বলেন, ‘চূড়ান্ত পরিণামে কারণ হলো ঈশ্বরের অনুপস্থিতি’।

খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদত্যাগের আগে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কোন সমাজে ঈশ্বরের মৃত্যু’ হলে এর মানে দাঁড়ায় ‘স্বাধীনতার অবসান’ এবং এর সমাধান হলো ‘ঈশ্বরকে নিয়ে বেঁচে থাকা এবং তার কাছে উপনীত হওয়া’।

কিন্তু চার্চের ভেতরে পুরোহিতরা যখন অব্যাহতভাবে এমন কদাচারের জন্য কলঙ্কিত হচ্ছেন, যার কারণ বেনেডিক্টের ভাষায়, ঈশ্বরের অনুপস্থিতি, তখন গুরুতরভাবে এ প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে যে, চার্চে যদি ঈশ্বরের অনুপস্থিতির মাত্রা এত বেশি হয়, তা হলে পশ্চিমা সমাজ কতটা ঈশ্বর পরিত্যক্ত?

লেখক : কবি, গবেষক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।