Home মহিলাঙ্গন মুসলিম নারীদের সাজসজ্জা ও বাইরে চলাচল সম্পর্কে শরীয়তের বিধান

মুসলিম নারীদের সাজসজ্জা ও বাইরে চলাচল সম্পর্কে শরীয়তের বিধান

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাযি.) বলেন, আমি একদিন আমার বোন হযরত আয়েশা (রাযি.)কে দেখতে গেলাম। তখন আমার স্বামী জুবাইর কোন কাজে বাইরে ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘরে আসলেন এবং আতরের সুঘ্রান পেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, মহিলাদের জন্য জরুরী যে, তার স্বামী যখন বাইরে থাকে, সে সুগন্ধী দ্রব্য ব্যবহার না করা, অর্থাৎ- সাজসজ্জা না করা।

হযরত উম্মে সালমা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, মহিলাদের নামাযের জন্য উত্তম মসজিদ হল তার ঘরের কোণ।

মাসআলাঃ মহিলারা যতই পর্দার ভিতর থেকে নামায পড়তে পারে, তাই উত্তম। সুতরাং মহিলাদের জন্য নামায আদায়ে মসজিদ থেকে ঘর উত্তম এবং ঘর থেকে ঘরের একপাশ বা কোণ উত্তম। অর্থাৎ- যথাসম্ভব অধিক পরিমাণে পর্দার প্রতি গুরুত্ব দেয়া এখানে উদ্দেশ্য। তাই ইসলামী আইনবিদগণ মহিলাদের মসজিদে নামায আদায় মাকরূহ বলেছেন। সুতরাং মহিলাদের নামায ঘর থেকে তার নিজস্ব রুমেই উত্তম। কারণ পুরো ঘরের মধ্যে তার নিজস্ব রুমেই পর্দা বেশী রক্ষা হবে।

হযরত আবুল আহওয়াস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,  মহিলাদের ঐ নামায আল্লাহর নিকট বেশী পছন্দনীয়, যেটা সবচেয়ে বেশী অন্ধকার রুমের মধ্যে আদায় করা হয়।

মাসআলাঃ যেহেতু আলোতে পড়া থেকে অন্ধকারে পড়লে পর্দা বেশী হবে, তাই বুঝা গেল, মহিলাদের পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে। তবে এত অধিক পরিমাণ অন্ধকার হতে পারবে না, যাতে নামাযের আহ্কাম আদায়ে ও অন্যান্য অসুবিধার সৃষ্টি হয়।

নারীদের জন্য স্বামী বা মাহরাম আত্মীয় ছাড়া একাকী সফর করা নিষেধ

হযরত ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন মহিলা পুরুষ অবিভাবক অর্থাৎ- মাহরাম ছাড়া তিন দিন সফর করবে না।

হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন মহিলা মাহ্রাম ব্যতিত সফর করবে না।

মাসআলাঃ তিন দিনের সফরের অর্থ হচ্ছে, ৪৮ মাইল দূরত্বের সফর। যদি রাস্তা নিরাপদ হয়, তবে ৪৮ মাইল পর্যন্ত মহিলাগণ মাহরাম ব্যতিত সফর করতে পারবে। আজকাল মহিলারা মহিলার সাথে অহরহ সফর করছে, এমন কি অনেক মহিলা হজ্বের সফরেও যাচ্ছে, যা একেবারে হারাম হবে।

নারীগণ আল্লাহর নিকটবর্তী কখন হয়ে থাকেন

হযরত ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মহিলা মানেই পর্দা। সুতরাং মহিলা যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে গভীরভাবে দেখে। আর মহিলাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম উপায় হল, সে যেন সাধ্যমত ঘরের এক পাশে থাকে (অর্থাৎ- খুবই সংগোপনে থাকে)। যাতে কোন শয়তান তাকে গুনাহে লিপ্ত করাতে না পারে।

সাজসজ্জা করে বাইরে যাওয়া নারীদের উপর আল্লাহ তাআলা ক্রোধান্বিত হন

যে মহিলা পরপুরুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা করে ঘর থেকে বের হয় এবং পর পুরুষ তাকে দেখে, তখন সে আল্লাহর গযবে প্রবিষ্ট হয়ে যায়, যতক্ষণ না সে ঘরে ফিরে আসে।

ইবনে উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মহিলাদের বাহিরে যাওয়ার অনুমতি নেই, কেবল বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া।

মাসআলাঃ বর্তমানে তো মহিলাদের বাহিরে যাওয়া, মার্কেটে যাওয়া সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। অতি সামান্য প্রয়োজনে বা বিনা প্রয়োজনেও আজকাল অধিকাংশ মহিলা বাজারে, মার্কেটে, রাস্তাঘাটে বে-পর্দায় ঘোরাফেরা করে থাকে। দ্বীনদার নারীদের এসব বেহায়াপনা থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরী। এ ধরণের দাইয়্যুস নারীদেরকে যদি তাদের অভিভাবক পুরুষরা এসব থেকে নিষেধ না করেন, তবে তারাও দাইয়্যুসের অন্তর্ভুক্ত হবেন।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের নারীদেরকে অনুমতি দিয়েছেন যে, তারা শুধু বিশেষ জরুরতে ঘর থেকে বের হতে পারবে।

মুসলিম নারীরা রাস্তায় কীভাবে চলাচল করবে?

হযরত ইবনে ওমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সাধারণতঃ মহিলাদের ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু বিশেষ কোন প্রয়োজনে বের হতে পারবে। তবে চলার সময় তারা রাস্তার এক পার্শ্ব হয়ে চলবে।

হযরত আবু উসাঈদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের বাইরে দাঁড়ানো অবস্থায় কিছু পুরুষ মহিলাকে রাস্তায় এক সাথে চলতে দেখে ইরশাদ করলেন, তোমরা মহিলারা পুরুষদের পিছে চল। তোমাদের জন্য রাস্তার মাঝখানে চলার অনুমতি নেই। রাস্তার পার্শ্বে চলাই তোমাদের জন্য জরুরী।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাযি.) বর্ণনা করেন। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের মধ্যে বসা ছিলেন, ইত্যবসরে মুযায়না বংশের এক মহিলা খুব সাজগোছ করে মাসজিদে আসল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, হে মানুষ সকল! তোমাদের মহিলাদেরকে সাজগোছ করে বের হতে নিষেধ কর এবং অহংকার ও বেপর্দার সাথে চলতে নিষেধ কর। কেননা, বনি ইসরাঈলকে ঐ পর্যন্ত লা’নত করা হয়নি, যে পর্যন্ত তারা সাজগোছ ও মসজিদে অহংকার ও বেপর্দার সাথে চলা-ফেরাকে গ্রহণ করেননি।

মাসআলাঃ মহিলাদের জন্য ঘর থেকে সাজগোছ করে বের হওয়াকে নিষেধ করা হয়েছে। আজকাল মহিালারা যেভাবে বাহিরে ঘুরাফেরা করছে, ঠিক এসব কারণেই বনী ইসরাইল লা’নত ও অভিশপ্ত জাতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

হযরত মায়মুনা বিনতে সাআদ (রাযি.), যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেমা ছিলেন, তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মহিলা নিজ স্বামী ছাড়া অন্যকে দেখানোর উদ্দেশ্যে সজ্জিত হয়ে অহংকারের সাথে চলাচল করে, ক্বিয়ামতের দিন সে কঠিন অন্ধকারে নিপতিত হবে।

মাসআলাঃ দ্বীনদার মহিলারা নিজ স্বামীর জন্য সেজেপরে ঘরের মধ্যে থাকেন। কারণ এর মধ্যে সাওয়াব নিহিত রয়েছে। আর বদকার ফাসিক মহিলারা সজ্জিত হয় পরপুরুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, যাতে তারা আল্লাহর অভিশাপে পড়ে।

লেখক: প্রখ্যাত আলেম, মুফতি, মুবাল্লিগে ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।