।। মাওলানা সাঈদ আহমদ ।।
কুরআন তেলাওয়াত স্বতন্ত্র ইবাদত। অর্থ না বুঝলেও কুরআন তেলাওয়াতের সাওয়াব মিলবে। কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলতের জন্য অর্থ বুঝে পড়ার শর্ত আরোপ করা হয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ তিলাওয়াত করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। আর প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।” (অর্থাৎ তিনটি হরফ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মীম’, যার নেকীর সংখ্যা হবে ৩০।) তিরমিযী হা. ২৯১০, সহীহ।
বলাবাহুল্য, হাদীসে উল্লিখিত আয়াতের শব্দগুলো এমন, যেগুলোর অর্থ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। এখন প্রশ্ন হলো, এরূপ শব্দগুলো তেলাওয়াত করলে কি কোন ছওয়াব হবে না? বরং হাদীছে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ‘আলিফ লা-ম মীম’ পড়লে ত্রিশটি নেকী পাবে। ইরশাদ হয়েছে-
“যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, নামায কায়েম করে, আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার, যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।” (সূরা ফাতির ২৯-৩০)।
আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
“যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে তার দৃষ্টান্ত কমলালেবুর মত, যা সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায় যার ঘ্রাণ নেই, কিন্তু মিষ্টি।” (সহীহ বুখারী ৫৪২৭)।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
“কুরআনে দক্ষ ও হাফেয ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) সম্মানিত পুণ্যবান ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন আটকে আটকে তিলাওয়াত করে এবং এতে তার কষ্ট হয়, তার জন্য দু’টি সাওয়াব রয়েছে।” (একটি তিলাওয়াতের ও দ্বিতীয়টি কষ্টের সাওয়াব)। সহীহ বুখারী ২৬২৯৬, মুসলিম ৭৯৮ ও মিরকাতুল মাফাতীহ।
সুতরাং কুরআনের অর্থ বোধগম্য হোক বা না হোক, কুরআন তেলাওয়াতকারী অবশ্যই সাওয়াব পাবে। তবে বুঝে পড়ার সাওয়াব অনেক বেশী। সুতরাং কোন অবস্থাতেই কুরআন তেলাওয়াত পরিত্যাগ করো না।
হযরত আবু উমামা রা. বলেন-
“তোমরা কুরআন পড় ও হিফয করো এবং লিপিবদ্ধ কুরআন দেখে (হিফয না করে) ধোকায় পড়িও না। কারণ আল্লাহ তাআলা কুরআন হিফযকারী অন্তরকে আযাব দিবেন না।” সুনানে দারেমী হা. ৩৩৬২, সনদ সহীহ।
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“যার অন্তরে কিছু অংশও কুরআন মুখস্থ নেই, তা বিরান ঘরের মতো।” (তিরমিযী, হা. ২৯১৩, হাসান)।
কাজেই পুরো কুরআন মাজীদের হাফেয হতে না পারলেও ১/২/৫ পারা যতটুকু সম্ভব হয় হিফয করা চাই। আশা করি এতেও আল্লাহ তাআলা বর্ণিত হাদীসগুলোর ফযীলত দান করবেন।
এভাবে মেয়েদেরকেও হাফেয বানানো উচিত। অনেকে সংসারের ঝামেলার কারণে পড়া হিফয রাখতে পারবে না ইত্যাদির অজুহাতে মেয়েদেরকে হাফেয বানাতে চান না। এটা ভুল ধারণা। কারণ মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের ঝামেলা আরো বেশি। আর মহিলারা যদি দ্বীনদার হয়, তাহলে এরা অযথা সময় নষ্ট না করে কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য আমলে সময় ব্যয় করে, যা সাধারণত পুরুষদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এবং মাতা-পিতার মৃত্যুর পর এরাই ঈসালে সাওয়াব করে বেশি।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কোরআন হিফজ ও তেলাওয়াত করার তৌফিক দান করুন এবংবিভ্রান্তি থেকে হেফাজত করুন।
লেখক: তরুণ গবেষক আলেম ও উস্তাদ- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ