Home শিক্ষা ও সাহিত্য খতমে বুখারীর দরসে যেসব শর্তে হাদীসের ইজাযত দিয়েছেন আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

খতমে বুখারীর দরসে যেসব শর্তে হাদীসের ইজাযত দিয়েছেন আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক।

মুহাম্মদ আল আমীন: শনিবার (২৮ জানুয়ারী) রাজধানী ঢাকার অন্যতম বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার চলতি শিক্ষাসনের দাওরায়ে হাদীসের বুখারী শরীফ প্রথম খণ্ডের আখেরী সম্পন্ন হয়েছে।

দরস পরিচালনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শায়খুল হাদীস, প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন হযরত আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় পুরো দারুল হাদীস মিলনায়তন ভরপুর ছিল এবং বিদায়ী ছাত্ররা আবেঘন পরিবেশে মনোযোগের সাথে দরস ও তাকরীর শুনছিলেন।

দরস শেষে শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বিদায়ী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক বক্তব্যে বলেন, হাদিস ছড়া অন্যান্য কিতাবের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো, কিতাব ভালোভাবে বুঝে পরিক্ষায় ভালোভাবে নাম্বার আয়ত্ত করা। আর হাদিসের কিতাবাদী পড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, সাহাবিয়্যত অর্জন করা এবং হাদিসের আলোকে নিজের জীবনকে গঠন করা।

তিনি বলেন, যদি হাদিসের কিতাব সমূহ পড়ে নিজের জিন্দেগী গঠন না হয়, যদি উদাসীনতায় জিন্দেগী কাটে, তাহলে তোমার মতো বদ কিসমত আর কেউ নেই। আমার উস্তাদ হযরত মাওলানা শরীফুল হাসান সাব (রহ.) বলতেন, “হাদিস পড়নে ছে কিয়া হোতা হ্যায়”? একেকজন একেক উত্তর দিত। তিনি বলতেন, “কুচ নেহি, হাদিস পড়নে ছে সাহাবিয়্যত আতি হ্যায়”। এই কারণে জিন্দেগীর মধ্যে পরিবর্তন নেহায়েত দরকার। পরিবর্তন না আসলে পুরো জীবনটা বেকার।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, শুধু ইলম অর্জন করা ফযিলতের। এখানে কিতাবুল ইলমে আছে, কোন ইলমের ফযিলতের জন্য আমল শর্ত নয়। নফসে ইলম একটা ফযিলতের। কিন্তু নাজাতের জন্য ইলম যথেষ্ট নয় আমলেরও দরকার। এক শায়ের বলেন -” আলেম বনা, সুফি বনা, মৌলভি বনা, লেকিন ইনসান নেহি বনা”। মানবতা যদি না আসে তাহলে, বিনয় যদি না আসে, শারাফাতের সাথে চলাফেরা যদি না হয়, আপোসের মধ্যে যদি মায়া মুহাব্বত না হয়, তাহলে কমিনেগি যিন্দেগির মধ্যে এলেম কেরোসিনের বোতলে আতর রাখার মতো, যে আতরের মধ্যে ও কেরোসিনের গন্ধ চলে আসে। এই ইলম শাহী ইলম, পাক দামন ইলম। এই ইলম এর দরদ শানদার হবে। আতর রাখা হয় উন্নত মানের সিসা দ্বারা তৈরি বোতলের মধ্যে, আর এই বোতল রাখা হয় আরেকটা সুন্দর ব্যাগের মধ্যে। ইলমে ওহি আতরের চেয়ে অনেক দামি। আপনারা একেকজন আতরের শিসি। এই শিসি উজ্জ্বল হতে হবে, এতে কোন ময়লা থাকবে না। কেন ইলমে ওহীর মর্যাদা অনেক বেশি। যার কারণে নিজের আ’মাল, নিজের আখলাক সুন্দর হতে হবে।

বিদায়ী তরুণ আলেমদেরকে হাদীসের ইজাযত দেওয়ার সময় আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, আমি আপনাদেরকে কয়েকটি শর্তে সনদ প্রদান করছি। কেননা আমাদের উদাহরণ হলো ট্রেন এর মতো। এই ট্রেন এর ইঞ্জিন হলেন হযরত শাহ ইসমাঈল বুখারি (রহ.)। আমরা হলাম একেকটা বগি, যা পর পর লাগানো হয়। যদি দু একটা বগি পুরাতন, ভাঙ্গা, লক্কর ঝক্কড়ও হয়, তাহলে আমরা আশাবাদি ইঞ্জিন যেখানে যাবে ভাঙ্গা বগিসহ সকল বগি একই স্টেশনে পৌঁছাবে। শর্ত হল- ১. মৃত্যু পর্যন্ত আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের উপর মুতামাস্সিক হতে হবে। কোন বেদাআতি, বাতিল ফিরকার সহায়ক শক্তি হতে পারবেন না। ২. দেওবন্দিয়াতকে বুঝতে হবে, দেওবন্দিয়াতের উপর যিন্দেগি কাটাতে হবে। ৩. নিজের যিন্দেগিকে মাদরাসার মধ্যে আবদ্ধ রাখবেন না। কওমকে সাথে নিয়ে চলবেন।কওমের মধ্যে আমর বিল মা’রুফ নাহি আনিল মুনকার এর আমল চালু করবেন।

সবশেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং বিদায়ী ছাত্রদের সাফল্যমণ্ডিত বরকতময় জীবনের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করে বিশেষ দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।