।। মনোয়ারুল হক ।।
ভারতের ক্ষমতাসীনদের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। প্রায় সবখানে প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন এখন তারা। ধর্মীয় উন্মাদনার রঙ ফিকে হতে শুরু করল কিনা- এ প্রশ্ন এখন অনেক জায়গায়।
শনিবার ভারতের চারটি রাজ্যের চারটি বিধানসভা ও একটি লোকসভার উপনির্বাচনে, কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দল কোন আসন পায়নি। পশ্চিমবঙ্গের বালিগঞ্জে জয় নিয়ে আশাবাদী না হলেও জামানত জব্দ হবে বা আসানসোলে নিজেদের আসন তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে হারাতে হবে, এতটা ভাবেনি গেরুয়া শিবির।
উপনির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দুটি আসনে জয়লাভ তৃণমূল কংগ্রেসকে বাড়তি আশা জুগিয়েছে। নজর এখন ২০২৪ এর সাধারণ নির্বাচনের দিকে। বালিগঞ্জ ও আসানসোলে জয়লাভে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তেমন ইঙ্গিত দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ২০২৪ এর জন্য আমাদের এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
এবারের উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে অনেক পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে তৃণমূল। ২০১৪ ও ২০১৯’র নির্বাচনে বিজেপি থেকে দুইবার নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী হন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। দুইবারের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও আসানসোলে নিজ আসনে বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী করা হয়নি। বিজেপির শক্ত আসন আসানসোলে ভাগ বসাতে হলে অন্যভাবে ভাবতে হবে। তৃণমূল তাই করেছে। দলত্যাগের কারণে বাবুলের প্রতি সাধারণ ভোটারদের বিরূপ মনোভাব তৈরি হতে পারে সেই কারণেই তাকে প্রার্থী করা হয়নি। আসানসোল বিহার- ঝাড়খণ্ড লাগোয়া হওয়ার কারণে হিন্দির প্রচলন বেশি। ‘বিহারিবাবু’ শত্রুঘ্ন সিনহা হলেন মমতার তুরুপের তাস। স্থানীয় বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে বিজেপি প্রার্থী করে পাল্টা চমক দিলেও তা কাজে আসেনি। ভোটের ব্যবধান তিন লাখের উপর।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
গত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী বিজেপি’র (বাবুল সুপ্রিয়) কাছে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল। এবার তৃণমূলের প্রার্থী তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে জিতল। তৃণমূলের ভোট বাড়ল ৫ লাখ। ভাষা, সম্প্রদায়, স্থানীয়-বহিরাগত কোন কিছু দিয়ে তৃণমূলকে ঠেকাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। এই আসনে তৃণমূলের এটা প্রথম বিজয়।
দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ এমনিতেই তৃণমূলের ঘাঁটি। বাবুল সুপ্রিয়র জয় নিয়ে কোন সংশয় ছিল না। ওখানকার জনপ্রিয় নেতা তৃণমূলের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মুত্যুতে শূন্য হওয়া আসনের উপনির্বাচন। আলোচনায় ছিল জয়ের ব্যবধান নিয়ে। তবে এখানে তৃণমূলের ভোট কমেছে অনেক। নিকটতম প্রার্থীর চেয়ে ২০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়লাভ করেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীনরা।
বালিগঞ্জ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। মুসলিমদের ভোট বরাবর সুব্রত বাবু পেয়ে এসেছেন। বাবুল সুপ্রিয়র বিজেপিকালীন সাম্প্রদায়িক অবস্থান, এনআরসি এবং মুসলিম বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা মানুষ ভুলেনি। একইভাবে ভুলেনি তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জীকে নিয়ে নেতিবাচক বক্তৃতাগুলো। তারপরও ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। ভোট ৭০ শতাংশ থেকে ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
তবে এখানকার বড় খবর দুইটি। এক, বিজেপি প্রার্থীর জামানত হারানো এবং অন্যটি সিপিএম প্রার্থীর ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল। বিজেপি এখানে তৃতীয় অবস্থানে। বিজেপির কেয়া ঘোষের সাথে কংগ্রেসের কামারুজ্জামান চৌধুরীও জামানত হারিয়েছেন।
বালিগঞ্জের ভোট প্রবণতা দেখে মনে হয় বাম ভোটাররা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন পত্রিকা, বামদের ‘রাম’ থেকে বামে প্রত্যাবর্তন হিসেবে উল্লেখ করেছে। এছাড়াও তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে বামরা ভাগ বসিয়েছে। এই দুই সমীকরণে বামদের ভোট বেড়েছে। সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম দ্বিতীয় স্থানে উঠে সকলের নজর কেড়েছেন। সায়রা শাহ সিপিএমের প্রয়াত নেতা হাসিম আবদুল হালিমের পুত্রবধু এবং অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সায়রা বলেছেন, ‘এই রাজ্যে তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি এই ধারণা আমরা ভেঙ্গে দিয়েছি।’
ভারতের পরবর্তী নির্বাচন খুব দূরে নয়। এই সময়ে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন ও অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনগুলোর ফল ক্ষমতাসীনদের কপালের ভাঁজ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ধারা চলতে থাকলে ক্ষমতা হারাতে হতে পারে। ধর্মীয় জাগরণ সৃষ্টির পথ অনুসন্ধান (!) করতে হবে অতি দ্রুত। উগ্র হিন্দুত্ববাদই পারে ক্ষমতাসীনদের স্বস্তি এনে দিতে। তার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ ও ঘটনা।
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে কাশ্মীর সীমান্তে ভারতীয় সেনা কনভয়ের উপর হামলার অভিযোগ এনে ভারতীয় সেনাদের পাকিস্তান সীমান্তে প্রবেশ করে ব্যাপক গোলাবর্ষণ ও একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি বিজেপিকে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে রসদ যুগিয়েছিল।
কিন্তু এবারে অবস্থা ভিন্ন। পাকিস্তানের সাথে কোন সীমান্তে উত্তেজনা নেই। কাশ্মীর নিয়ে যদি পাকিস্তানের সাথে নতুন কোন পরিস্থিতি তৈরি করা না যায় তা হলে ‘প্লান বি’ নিয়ে ভাবনা শুরু হবে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ