Home শিক্ষা ও সাহিত্য মনোমালিন্য, বিবাদ ও সংকট নিরসনে ইনসাফ ভিত্তিক ফায়সালার গুরুত্ব

মনোমালিন্য, বিবাদ ও সংকট নিরসনে ইনসাফ ভিত্তিক ফায়সালার গুরুত্ব

- আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান। ছবি- উম্মাহ।

।। আল্লামা হাফেয নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের পারস্পরিক মনোমালিন্য, বিবাদ এবং সমস্যা সমাধানে প্রথমে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের কথা মনোযোগ সহকারে শুনবে। সঠিক-ভুল জানার চেষ্টা করবে। তারপর ঐ সমস্যাকে সর্বদা শরীয়তের আলোকে সমাধান করার চেষ্টা করবে। এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতিত্ব কখনোই কাম্য নয়। বরং শরীয়তের মূলনীতির আলোকে সঠিক ফায়সালা দেয়ার পরিপূর্ণ চেষ্টা করবে। সর্বদা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রতি লক্ষ্য রাখবে। কেননা যিনি দায়িত্বশীল তিনি সকলের জন্য সমান। দায়িত্বশীলদের অধীনস্থ সকলের প্রতিই সমান আচরণ ও সকলের কল্যাণকামী হওয়া উচিত। তিনি কোন দলভুক্ত নন। ইনশা-আল্লাহ্! এভাবে কাজ করলে সকলের অন্তরে দায়িত্বশীলের প্রতি মর্যাদা বহাল থাকবে এবং সকলেই মিলে-মিশে কাজ করলে কাজে বরকত হবে।

স্বরণ রাখা চাই, ভুল ফায়সালা দেয়ার দ্বারা প্রান্তিকতা এসে যায়। এর দ্বারা অকল্যাণ সৃষ্টি হয়। তেমনিভাবে শিক্ষক এবং কর্মচারীদেরও এই খেয়াল রাখা উচিত যে, দায়িত্বশীলও একজন মানুষ। আমাদের মতো তারও ভুল-ত্রুটি হতে পারে। এজন্য ফায়সালা করতে গিয়ে যদি কোন ভুল হয়ে যায় অথবা তিনি যদি কোন ভুল ফায়সালা দিয়ে দেন, তাহলে যার পক্ষে এই ফায়সালা হয়েছে, সে এই ফায়সালাকে নিজের জন্য বৈধ মনে করবে না। ঐ ফায়সালার উপর সে খুশি না হয়ে পরকালের জবাবদিহীতার কথা চিন্তা করে নিজের ভুল স্বীকার করে নিবে। কেননা ঐ সত্ত্বা যিনি عليم এবং خبير তিনি সবকিছু জানেন। কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল তা তাঁর থেকে লুকায়িত নয়। সহীহ মুসলিম শরীফে এসেছে-

عن أم سلمةؓ قلت: قال رسول الله ﷺ: إنكم تختصمون إلى ولعل بعضكم ان يكون الحن بحجته من بعض، فأقضى له على نحو ماأسمع منه فمن قطعت له من حقٍّ أخيه شيئاً فلا يأخذه، فإنما اقطع له به فطعة من النار
وفى رواية عنها إنّ رسول الله ﷺ سمع جلبة خصم بباب جحرته فخرج إليهم، فقال: إنما انا بشر وإنه يأتينى الخصم فلعل يعضهم ان يكون ابلغ من بعض فاحسب انّه صادق فاقضى له، فمن قضيت له بحق مسلم فإنما هى قطعة مّن النار، فليحملها او يذرها (صحيح مسلم)

অর্থাৎ- হযরত উম্মে সালামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা আমার নিকট নিজেদের বিচার নিয়ে আস। এবং হতে পারে যে তোমাদের মাঝে একজন অপরজন থেকে কথায় বাকপটু। আমি তার কথা সত্য মনে করে নিলাম এবং রায় তার পক্ষে দিয়ে দিলাম। কিন্তু বাস্তবে সে ছিল অপরাধী। তখন সে যেন আমার এই রায়কে লুফে না নেয়। কেননা, এই অবস্থায় মনে করতে হবে যে, আমি তার জন্য জাহান্নামের টুকরা কেটে দিচ্ছি।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত উম্মে সালামা (রাযি.) অন্য হাদীসে রেওয়ায়াত করেন, একবার রাসূলের (সা.) কামরার নিকটে কিছু লোক দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছিল। তা শুনে রাসূল (সা.) বের হলেন এবং বললেন, প্রকৃতপক্ষে আমিও একজন মানুষ। এবং হতে পারে যে কিছু লোক আমার নিকট তাদের মধ্যকার ঝগড়া-ঝাটির বিচার নিয়ে আসল। তাদের মধ্যে একজন লোক অপর পক্ষের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সু-চতুরভাবে শক্ত এবং উপযুক্ত প্রমাণাদি পেশ করল। আমি তার কথাকে সত্য মনে করলাম এবং তার পক্ষে ফায়সালা প্রদান করলাম (যদিও আসলে সে মিথ্যাবাদী ছিল)। তবে এটা তার জন্য জাহান্নামের টুকরা বলে বিবেচিত হবে। এখন তার ইচ্ছা, সে চাইলে এই জাহান্নামের টুকরাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে পারে (আমার দেয়া ফায়সালা ভুল জেনেও তা মেনে নেওয়ার দ্বারা)। আবার রেখেও যেতে পারে (আমর দেয়া ভুল ফায়সালার বিপরীতে নিজের সত্য স্বীকারের দ্বারা)।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- জামিয়াতুন নুর আল কাসিমিয়া-উত্তরা, ঢাকা এবং রওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসা, উত্তরা, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।