Home ওপিনিয়ন ইমরানের হত্যা চেষ্টা- কিসের পদধ্বনি?

ইমরানের হত্যা চেষ্টা- কিসের পদধ্বনি?

।। মাসুম খলিলী ।।

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বৃহস্পতিবার পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদ জেলায় তার সমাবেশে একজন বন্দুকধারীর গুলি চালানোর পরে একটি স্পষ্ট “হত্যার” প্রচেষ্টায় আহত হয়েছেন। এরপর ইমরান খানকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তার দলের মুখপাত্র জানিয়েছেন। সমাবেশে গুলিবর্ষণে ইমরান খানসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। একক হামলাকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কোনো গোষ্ঠী ইমরান খানকে হত্যার চেষ্টার দায় স্বীকার করেনি।

এরপর বেশ কটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইমরান খানের এই হত্যা প্রচেষ্টায় হাত থাকার অভিযোগে পেশোয়ার কোর কমান্ডার ও আইএসআই এর মেজর জেনারেল ফয়সালের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে৷ পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর শেয়ার করা একটি ভিডিও অনুসারে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টার কয়েক ঘন্টা পরে, লোকেরা খাইবার পাখতুনখওয়ার পেশোয়ারের কোর কমান্ডার হাউসের সামনে বিক্ষোভ করে।

এই ঘটনার পর ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিককে সমর্থনকারী ছাত্র ফেডারেশন -ই-ইনসাফ পার্টি জানিয়েছে যে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে ইসলামাবাদের দিকে লংমার্চ আবার শুরু হবে বলে জানিয়েছে।

অন্যদিকে ইমরান খান পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশে তার সমাবেশে হামলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও তার প্রশাসনকে দায়ী করেছেন। পিটিআই চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা আসাদ উমর দাবি করেছেন যে ইমরানের হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং একজন শীর্ষস্থানীয় আইএসআই জেনারেলকে তাদের অফিস থেকে অপসারণ করতে হবে৷ পরে তার এই বক্তব্য প্রচারে সরকার বিধিনিষেধ জারি করেছে।

পাকিস্তানের এই উত্তেজনাকর ঘটনার পর আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ইমরান খানের ওপর হামলার পর সব পাকিস্তানিদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপর চালানো একটি হত্যা প্রচেষ্টার নিন্দা করে বলেছেন, “রাজনীতিতে সহিংসতার কোন স্থান নেই, এবং আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা, হয়রানি এবং ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই,”। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন,”যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পাকিস্তানের প্রতি গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা পাকিস্তানি জনগণের পাশে আছি,”।

আরও পড়তে পারেন-

ইমরান খানের হত্যাচেষ্টার দু’দিন আগে পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে এক কলামে লিখেছিলাম- ‘— এসব দেখে মনে হচ্ছে, এস্টাবলিশমেন্ট দেশটির সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সামরিক সমর্থনপুষ্ট একটি বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকারকে দৃশ্যপটে নিয়ে আসতে পারে। এই সরকার বর্তমান প্রেসিডেন্টকে রেখে হবে নাকি তাকে বিদায় করে হবে সেটি এখনো নিশ্চিত বলা মুশকিল। জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার আগামী মাসে অবসর গ্রহণের কথা। তিনি বলেছেন, আর এক্সটেনশন নেবেন না। কিন্তু পরবর্তী সেনাপ্রধানের নাম এখনো ঘোষণা করা হয়নি। আবার এর মধ্যে তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ এক সফর সেরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ঘটনা পরম্পরায় মনে হয় বাজওয়া পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ কেউ হতে পারেন। সেটি কিভাবে তা বলা যাচ্ছে না।’

ইমরান খানের বহুলালোচিত লংমার্চের শেষ পর্যায়ের এই ঘটনায় মনে হচ্ছে পাকিস্তানকে বিশ্ব নিয়ন্ত্রকদের কেউ সম্ভবত আরো ভঙ্গুর ও দুর্বল করতে চাইছে। সেনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি, রাজনৈতিক শক্তিকে এবং সে সাথে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠিকে সেনা প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা দেশটির সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতার জন্য বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর পরবর্তি পরিণতিতে অনেকটা নিশ্চিতভাবে বর্তমান সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি এবং অন্তর্বর্তি অরাজনৈতিক সরকার গঠন ও জরুরি অবস্থা জারি করা হতে পারে।

বর্তমানের এই পরিবেশে সেনা বাহিনীর পক্ষে সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ সম্ভব হবে না। টেকনোক্রাট সরকারকে সমর্থন দিয়ে তারা পরিস্থিতিকে শান্ত করার প্রচেষ্টা নিতে পারে। জরুরি পরিস্থিতি জারি ছাড়া পাকিস্তানের এ সময়ে আর কোন বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। আর এটি হলে আমেরিকা ও চীন উভয়েই এ পদক্ষেপকে সমর্থন করতে পারে বলে মনে হচ্ছে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়াদিগন্ত।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।