Home সাক্ষাৎকার ভোট, লুণ্ঠন ও সংস্কারের অনুপস্থিতি: ফরহাদ মজহারের চোখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা

ভোট, লুণ্ঠন ও সংস্কারের অনুপস্থিতি: ফরহাদ মজহারের চোখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা

[বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, গণতন্ত্রের সঙ্কট, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলছে। এমন এক সময়েই বাংলাদেশের খ্যাতিমান চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার তাঁর ফেসবুক পাতায় একটি সংলাপধর্মী বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি ব্যঙ্গ-রসের ভেতর দিয়ে গভীর বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। আমরা তাঁর অনুমতিক্রমে লেখাটি সামান্য সম্পাদনা করে “উম্মাহ২৪ডটকম”-এ হুবহু প্রকাশ করছি, যাতে পাঠকেরা ভিন্ন এক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান প্রেক্ষাপটকে মূল্যায়ন করতে পারেন।]

প্রশ্ন: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের মধ্যে একান্ত বৈঠক থেকে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ কী বার্তা পেল?

উত্তর: তারা খুবই ভালো বার্তা পেয়েছে। বার্তাটা হলো, জনগণের কেবল ‘ভোটের’ অধিকার আছে, আর কোনো অধিকার নেই। তাই কবে নির্বাচন হবে সেটাই ছিল আলোচনার একমাত্র ইস্যু।

জনগণ শুধু কয়েক বছর পর পর ঠিক করে দেবে কে তাদের লুণ্ঠন করবে, এবং কে দেশের নয়, বরং পরাশক্তির স্বার্থে দেশ চালাবে। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের প্রতিনিধি ঠিক করবে—শুধু ‘ভোট’ দিয়ে।

উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক বা সাংস্কৃতিক নীতি নির্ধারণে তাদের কোনো অধিকার নেই। ভোটবাদী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে আসলে কী চোখে দেখে, তা এখানেই স্পষ্ট।

প্রশ্ন: গণ-অভ্যুত্থানে হাজারের অধিক শহীদ এবং পঙ্গু মানুষের আত্মত্যাগ কি তাহলে বৃথা?

উত্তর: না, বৃথা কেন হবে? লন্ডনের বার্তা হলো—ভোটের জন্যই তো তারা জীবন দিয়েছে! জনগণ ভোট চেয়েছে, ভোট পাবে—ডিসেম্বরে না হলে ফেব্রুয়ারিতে। জয় বাংলা!

প্রশ্ন: বিচার বা সংস্কার কিছুই কি হবে না?

উত্তর: দরকার কী? নির্বাচন করতে গেলে যারা জনগণের উপর গুলি চালিয়েছে, তাদেরই তো লাগবে! তারা ছাড়া নির্বাচন হবে কীভাবে?
নভেম্বরের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হবে, তার সামাল দেবে কে? আর সংস্কার করলে লুণ্ঠন চলবে কীভাবে? কিসের সংস্কার!!!

আরও পড়তে পারেন-

প্রশ্ন: সুষ্ঠু নির্বাচন কি সম্ভব?

উত্তর: বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। তাছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের দরকারটাই বা কী? দরকার হলো, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা সরকারকে বৈধ করা। সেটা ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী retroactive আইন করে পাস করাতে হবে।

এ কাজ অতীতেও হয়েছে। এবারও দরকার। আর এই কাজ করবে কে? সেনাবাহিনী ছাড়া কে আছে? পুলিশ তো আর আগের মতো নেই—তাই না?

প্রশ্ন: এতে কি সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

উত্তর: অবশ্যই। সেনানিবাসের বাইরে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা সবসময় বিপজ্জনক।
ভবিষ্যতের লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির নির্বাচনে টাকা-পয়সার ছড়াছড়ি হবে। সেনাবাহিনীকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা কঠিন হবে। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের ব্যবধান বাড়বে।

এত বড় আত্মত্যাগের পর কোনো সংস্কার বা বিচার না করে নির্বাচন হলে সমাজে গভীর ক্ষত তৈরি হবে। এর দায় কেবল ভোটবাদী রাজনৈতিক দলের ওপর পড়বে না—বেশির ভাগ চাপ যাবে সেনাবাহিনীর ওপর, কারণ ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি এসেছে সেনাবাহিনীর তরফ থেকেই।

প্রশ্ন: রাজনৈতিক দলের কি ক্ষতি হবে না?

উত্তর: রাজনৈতিক দল ভোট চেয়েছে, ভোট পাবে। তাদের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা মানে লুণ্ঠনের সুযোগ। তারা ক্ষমতা চায়, ক্ষমতায় যাবে। কিন্তু সেনাবাহিনী স্বেচ্ছায় যে দায় নিজের কাঁধে তুলে নিল, সেই ভার নামাবে কীভাবে?

শেষ কথা: ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। আমরা এখন আরও অস্থির ও অস্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছি।


সংবাদ-স্বত্ব ও কৃতজ্ঞতা: এই লেখাটি ফরহাদ মজহারের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত। লেখক একজন খ্যাতনামা চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ বিশ্লেষক। লেখাটির ভাষা ও বার্তা সম্পূর্ণরূপে তাঁর নিজস্ব।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।