Home ইসলাম ইসলামে লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামে লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

।। আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ।।

উম্মতে মুহাম্মদিয়ার আয়ু পূর্ববর্তী উম্মতগণের চেয়ে কম। তাই আল্লাহ তাআলা আপন অনুগ্রহে এমন একটি রাত দান করেছেন, যে রাতে ইবাদত করলে হাজার মাস অপেক্ষা অধিক সাওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু এ রাতকে গোপন রাখা হয়েছে। যেন লোকজন ইবাদতের মাধ্যমে এর অনুসন্ধান করে এবং অগণিত পূণ্য অর্জন করতে পারে।

রমযান শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবে ক্বদর হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা বিদ্যমান। অর্থাৎ একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাইশ ও ঊনত্রিশ তারিখের রাত। তন্মধ্যে সাতাইশ তারিখের রাতে শবে ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। বেজোড় রাতগুলোতে খুব কষ্ট ধৈর্য্যরে সাথে ইবাদত এবং তাওবা ইস্তিগফার ও দোয়ায় অধিক মগ্ন থাকা বাঞ্ছনীয়। যদি সারা রাত জাগ্রত থাকার শক্তি ও সুযোগ থাকে, তাহলে ই’শা ও ফজরের নামায জামাতের সাথে আদায় করার প্রতি যত্নবান থাকবে। হাদীস শরীফে আছে, এতে সারা রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করার সাওয়াব পাওয়া যায়।

ক্বদরের রাতে এ দোয়াটি বেশী বেশী করে পাঠ করা মুস্তাহাব- “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুঊন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী” দোয়াটি পড়বে। (আহমদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, মাযহারী-১০/৩১৬ পৃষ্ঠা)।

আরও পড়তে পারেন-

যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করে গেছেন

ভাইরাস ও ভ্যাকসিন ব্যবসা: এখনি সোচ্চার হওয়ার সময়

গুনাহর ক্ষতি এবং বেঁচে থাকার উপায়

ঢাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ বিষণ্ণতায় ভূগছে, সমাধান কী?

মহানবী (সা.)এর মহিয়সী সহধর্মীনীগণ

রাতগুলোতে শুধু জলসা ও ওয়াজ নসীহতের মধ্যে ব্যয় করে নিদ্রা যাওয়া খুবই দুর্ভাগ্য ও বঞ্চিতের পরিচয়। কেননা, ওয়াজ নসীহত সবসময়ই হয়ে থাকে, কিন্তু ইবাদতের এই মূল্যবান সময় পুণরায় হাতে আসবে না। তবে যেসব লোক সারা রাত ইবাদতের জন্য জাগ্রত থাকার সাহস করেন, তারা যদি প্রথমে কিছু ওয়াজ নসীহত শোনার পর নফল নামায এবং দোয়ার মধ্যে মনোযোগী হয়ে যান, তবে এটা মন্দ নয়। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ- ১/৩৮৪)।

শবে ক্বদরের ফযীলতঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শবে ক্বদরের রাত্রিতে বিশ্বাসের সাথে এবং সাওয়াবের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে, আল্লাহ তাআলা তার অতীত জীবনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন (তারগীব)।

হযরত আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত, যখন রমযান শুরু হল রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এ পবিত্র মাসটি তোমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। যার মধ্যে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। যে ব্যক্তি উক্ত রাতের এ পূণ্যময় ফযিলত হতে বঞ্চিত হলো, সে যেন সকল প্রকারের উত্তমতা হতে বঞ্চিত হলো। আর এমন ফযিলত থেকে কেবল হতভাগারাই বঞ্চিত হয় (ইবনে মাজাহ)।

হযরত আনাস (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন শবে ক্বদর আরম্ভ হয়, তখন হযরত জিব্রাইল (আ.) দলসহ অবতীর্ণ হন এবং আল্লাহর এমন প্রত্যেক বান্দার জন্য দোয়া করতে থাকেন, যারা দাঁড়িয়ে বা বসে আল্লাহর স্মরণ করতে আছে। অতঃপর যখন বান্দাদের ঈদের দিন হয় তখন আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে আপন ফিরিশ্তাদের নিকট গর্ব করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন যে, হে আমার ফিরিশ্তারা! বল দেখি, সে প্রেমিকের প্রতিদান কি হতে পারে যে আপন কার্য সম্পন্ন করেছে? তাঁরা উত্তর করেন, হে আমাদের পরওয়ারদেগার! তার পারিশ্রমিক পূর্ণরুপে দেওয়াই হচ্ছে তার প্রতিদান।

তখন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে আমার ফিরিশতাগণ, আমার বান্দা ও বান্দীগণ তাদের প্রতি আমার অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। অতঃপর আজ আমার শোকরিয়া আদায় ও প্রার্থনা করতে ঈদগাহে বের হয়েছে। আমার ইজ্জত সম্মানের কসম, জেনে রাখ, আমি তাদের দোআ নিশ্চয় কবুল করব। অতঃপর বলেন, যাও (আমার বান্দাগণ) আমি নিশ্চয় তোমাদিগকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের গোনাহ্সমূহকে নেকীতে পরিবর্তিত করলাম। হুযূর বলেন, অতঃপর তারা বাড়ী ফিরে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে। (বায়হাকী শোআবে ঈমান)।

লেখক: প্রবীণ আলেমে-দ্বীন, শায়খুল হাদীস, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা এবং সহসভাপতি- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দার্শনিক ইমাম গাযালীর দৃষ্টিতে রোযা ও রমযান