সুলেহ হুদায়বিয়ার সময় এক রাত্রে বৃষ্টি হলো। রাসূল (সা.) ফরজরের নামজের পর বললেন, আজ অনেকের সকাল হয়েছে ঈমান অবস্থায়, আর অনেকের সকাল হয়েছে কুফরি অবস্থায়। যারা বৃষ্টি দেখে মন্তব্য করেছে যে, আল্লাহর ফজলে বৃষ্টি হয়েছে, তাদের সকাল হয়েছে ঈমানের অবস্থায়। আর যারা মন্তব্য করেছে যে, অমুক তারকা অমুক বুরূজে যাওয়ার কারণে বৃষ্টি হয়েছে। তাদের সকাল হয়েছে কুফরি অবস্থায়। হাদীসটি নিম্নরূপ-
এই হাদীসের আলোকে করোনা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সম্পর্কে কেউ যদি এই মন্তব্য করেন যে, আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হয়েছে, তার তক্বদীরে এটাই লেখা ছিল। আর যদি কেউ মনে করেন যে, এই ব্যক্তি নিজের অজান্তে কোন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গিয়েছে, তাই সে সংক্রমণের কারণে আক্রান্ত হয়েছে, তাহলে তার এই মন্তব্য কুফরি বলে সাব্যস্ত হবে।
যতদিন সে এইধরণের আক্বিদা পোষণ করবে, ততদিন তার ঈমান কুফর মিশ্রিত ঈমান বলে গণ্য হবে। তার উদাহরণ হল- বিষ্ঠা মিশ্রিত আতরের মতো।
লকডাউন না মেনে কোন ব্যক্তি উন্মুক্ত চলাচল করছে অথবা করোনায় আক্রান্ত লোকের ইয়াদত-খেদমত করছে বা তার জানাযায় শরীক হয়েছে, অতঃপর সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তখন যদি কেউ এই মন্তব্য করে যে, উন্মুক্ত চলা-ফেরা করার কারণে অথবা করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ার কারণে সে সংক্রমিত হয়েছে। যদি লকডাউন মেনে চলত আর সতর্কতা অবলম্বন করত, তাহলে সে করোনায় আক্রান্ত হতো না। এইধরনের মন্তব্য পূর্বেকার মুনাফিকদের অনুরূপ। ঐ সময় কোন সাহাবী জিহাদে গিয়ে শহীদ হলে, মুনাফিকরা মন্তব্য করত যে, তারা যদি আমাদের অনুস্মরণ করত আর জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত থাকত, তাহলে তারা মারা যেত না।
আল্লাহ তা’আলা এদের ব্যাপারে বলেন-
মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য কোটি কোটি মানুষের উপর অত্যাচার, অচলাবস্থা সৃষ্টি এবং মসজিদ মাদরাসা ও ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করা মু’মিনের কাজ নয়।
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন- اينما تكون يدركم الموت ولوكنتم فى بروج مشيده*
অর্থাৎ লকডাউনে সতর্ক অবস্থায় থাকো, অথবা উন্মুক্ত চল, মৃত্যু আসবেই।
আল্লাহ তা’আলা যদি তোমাকে করোনায় আক্রান্ত করতে চান, তাহলে তোমাকে কে বাঁচাতে পারবে?
যেখানে, যেসময়, যেভাবে মৃত্যু লিখা আছে, সবাইকে সেখানে, সেসময়ে, সেভাবেই মরতে হবে।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ করোনার কারণে এতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কারণ দেশে করোনার শুভাগমনে মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। কিন্তু সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশ অনেক বছর পিছিয়ে গেছে। এক বছর লকডাউন হলেও তাদের কোন সমস্যা নেই। তারা যা কামাই করেছে তাতে তাদের কয়েক জেনারেশন চলতে পারবে। সমস্যা তো হলো দেশবাসীর!
এই দেশে ইসলাম আসার পর এই প্রথম মসজিদ বন্ধ করার মত নিন্দনীয় কাজ এই সরকারের ভাগ্যে জুটলো। এই কাজটাই বাকি ছিল, যা পূর্ণ হয়ে গেল। তাই তারা নিশ্চয়ই নিম্নবর্ণিত আয়াতের আওতাভুক্ত। আর অতি আগ্রহী ঐ সমস্ত উলামা যারা এই কাজে সরকারের সহযোগিতা করেছেন, আশংকা হচ্ছে তাদেরও এই আয়াতের আওতাভুক্ত হওয়ার।
আমরা যেকোন সংকটময় মুহূর্তে উলামায়ে কেরামের দিক-নির্দেশনায় চলি। তবে সরকারি ফার্মের উলামা নই আমরা। তাদের অবস্থা দাঁত উপড়ানো বা নখকাটা সিংহের মতো; যার শক্তি ছিল মহিষ খাওয়ার, কিন্তু এখন ছাগল ধরারও শক্তি নেই। যদিও দূর থেকে সিংহের মতো দেখা যায়।
জুমার দিন মসজিদের গেইটে যত লুলা, লেংড়া,কানা ভিক্ষুক একত্রিত হয়, আর যদি কোন সরকার এদেরকে ধরে নিয়ে আর্মিতে ভর্তি করে দেয়, তবে শত্রুর মোকাবিলায় দেশ রক্ষা করতে এই আর্মিদের যেই দশা হবে, ইসলাম রক্ষা করতেও এই উলামাদের এই দশা হবে। তাই সবাই স্থানীয় উলামায়ে কেরামের নির্দেশনায় চলব।
সবসময় গোনাহ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাই চেষ্টা করব। বেশি বেশি তিলাওয়াত ও নাওয়াফিলের জন্য সচেষ্ট থাকবো। তাকবীরে ঊলার পাবন্দি করব। আমলে সালেহের তৌফিক, সুস্থতা, পরিবারে খায়র ও বরকত ও সর্বোপরি কালেমার সাথে মউতের জন্য দোয়া করব। আল্লাহ তা’আলার রেজা-সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকবো ও আখেরাতের আজাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইব।
আমি সকলের কাছে এই দোয়ার দরখাস্ত করছি, আমাকে যেন আল্লাহ তা’আলা কালেমার সাথে মৃত্যু নসীব করেন। আমিন।।
واخردعوانا ان الحمد لله رب العالمين
— আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, ভূগোল-বিশারদ, সহসভাপতি- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং শায়খুল হাদীস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা।
উম্মাহ২৪ডটকম: আরএএম
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com