Home ইসলাম করোনাভাইরাস: আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে হক্ব ও সৎকর্মে দ্রুত ফিরে...

করোনাভাইরাস: আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে হক্ব ও সৎকর্মে দ্রুত ফিরে আসা জরুরী (৪)

খতীবে বাঙ্গাল আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবীব।

।। খতীবে বাঙ্গাল আল্লামা জুনায়েদ আল-হাবীব ।।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আল্লাহ প্রদত্ত বালা-মুসিবত থেকে আল্লাহর সাহায্য ছাড়া বাঁচার কোনো উপায় নেই। বাদশাহ হারুনুর রশিদের পিতা ছিলেন মাহদী। তার শাসনামলে একবার বাগদাদে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। খাদ্যের অভাবে মানুষ কুকুর-বিড়াল, বন্য জীব-জন্তু, পোকা-মাকড়, তরুলতা খেতে শুরু করলো। এতে বাদশাহ একদিন খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তার একজন খাদেম বাদশাহর খেদমত করছিলেন, যিনি খুবই পরহেযগার ও আল্লাহভীরু ছিলেন। তখন বাদশাহ খাদেমকে বললেন, রাষ্ট্রের এই দুর্ভিক্ষের কারণে আমি খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। আমাকে তুমি এমন একটি কাহিনী শুনাও, যা শুনলে আমার মন ভালো হয়ে যাবে। আমি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবো।

তখন খাদেম বললেন, বাদশাহ সালামত! এক শিয়াল একদিন তার বাসস্থান থেকে দূরে কোথাও যাবে। তার একটি বাচ্চা ছিল, তো শিয়াল তার বাচ্চাকে কারো কাছে রেখে যেতে চাইলো। তাই সে জঙ্গলের রাজা বাঘের কাছে গিয়ে বললো, জাঁহাপনা! আমি আমার বাচ্চাটিকে আপনার কাছে রেখে যেতে চাই। বাঘ বলল- ঠিক আছে সমস্যা নাই, রেখে যেতে পারো। তখন শিয়াল তার বাচ্চাটিকে বাঘের কাছে রেখে চলে গেলেন।

বাঘ বাচ্চাটিকে কাঁধে নিয়ে জংগলে ঘুরা-ফেরা করতে লাগলো। হঠাৎ এক শকুনের নজর পড়লো বাচ্চাটার উপর। শকুন উপর থেকে ছুঁ মেরে বাচ্চাটিকে নিয়ে গেলো। অতঃপর শিয়াল ফিরে এসে বাঘের কাছে বাচ্চা চাইলে, বাঘ সব ঘটনা খুলে বললো। তখন শিয়াল বললো- তুমি আমার বাচ্চাটিকে দেখে রাখতে পারলে না? বাঘ বললো, দেখো তোমার বাচ্চার উপর যদি যমিনের কোনো মুসিবত আসতো, তাহলে আমি সেটা প্রতিহত করতাম। কিন্তু তোমার বাচ্চার উপর তো আসমানী মুসিবত এসেছে। আর আসমানী মুসিবতের মোকাবেলা তো আমি করতে পারি না। যদি মুসিবতটি যমিনের হতো তাহলে সর্ব শক্তি দিয়ে আমি তা প্রতিহত করতাম।

আরও পড়তে পারেন-

আল্লাহর দীদার লাভের সহজ উপায়!

সুদের কুফল ও ক্ষতিকর প্রভাব

পরামর্শের সাথে কাজ করার বহুবিধ উপকারিতা

করোনাভাইরাস: জনসচেতনতাই বড় প্রতিষেধক

মুসলিম নারী প্রতিভা যুগে যুগে

এরপর খাদেম বাদশাকে বললেন, জাঁহাপনা! আপনার রাষ্ট্রে যে মুসিবত আসছে, তা তো আসমানী মুসিবত। আসমানী মুসিবতের মোকাবেলা যমিনের কেউ করতে পারবে না। সুতরাং এই মুসিবত থেকে বাঁচতে হলে, আসমানের মালিকের সাথে সমঝোতা করতে হবে। তাহলে এই মহামারী থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

বাদশাহ একথা শুনে উঠে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন। খাদেমকে বললেন ওজুর পানি আনো। জায়নামায বিছিয়ে দাও। তারপর বাদশাহ নামাযে দাঁড়িয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। মালিকের দরবারে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। এতো কাঁদলেন যে, তার চোখের পানিতে নামাজের মুসল্লা ভিজে গেলো। বাদশাহ সেজদা থেকে মাথা উঠানোর পূর্বেই আসমান থেকে বৃষ্টি নাযিল হতে শুরু করলো। এতো বৃষ্টি হলো যে, সমগ্র রাষ্ট্র সায়লাব হয়ে গেল। যমিন উর্বর হয়ে উঠলো। এবং অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন হলো। যার ফলে দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেলো।

সুপ্রিয় পাঠক! হযরত মূসা (আ.) এবং আফলাতুনের প্রসিদ্ধ এক ঘটনা। একবার আফলাতুন হযরত মূসা (আ.)কে প্রশ্ন করলেন যে, গোটা আসমান যদি কামান হয়ে যায়, আর সেখান থেকে তীর আকারে মুসিবত বর্ষণ হতে থাকে। আর সেই বর্ষণকারি যদি স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হয়, তাহলে বাঁচার উপায় কি? উত্তরে হযরত মূসা (আ.) বললেন- এই অবস্থায় বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে। যিনি তীর নিক্ষেপ করছেন তার কাছে চলে যাওয়া।

অর্থাৎ মুসিবত দেনেওলা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট ক্ষমা চাওয়া। তাঁর হুকুম আহকাম যথাযথ পালন করা। এককথায় আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। তাকে সন্তুষ্ট করা।

উপরোক্ত ঘটনায় আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। ‘করোনাভাইরাস’ একটি আসমানী মুসিবত, এর সাথে মোকাবেলা করার শক্তি কারো নেই। সুতরাং “আমরা করোনার চেয়ে বেশি শক্তিশালী” বা “আমরা করোনার সাথে মোকাবেলা করবো” এই সমস্ত কথা পরিহার করুন। এই মহামারী থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। তাঁর নিকট সাহায্য চাওয়া। নিজেদের কৃত গুনাহ থেকে মাফ চাওয়া। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। [চলবে]

– আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব, প্রিন্সিপাল- জামিয়া কাসিমিয়া আশরাফুল উলুম ঢাকা, যুগ্নমহাসচিব- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, সহ-সভাপতি- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পেতে হলে সঠিক আক্বিদা-বিশ্বাসে ফিরে আসা জরুরী (১)

করোনাভাইরাস: আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে হক্ব ও সৎকর্মে দ্রুত ফিরে আসা জরুরী (২)

করোনাভাইরাস: আল্লাহর রহমত ও দয়া পেতে হলে হক্ব ও সৎকর্মে দ্রুত ফিরে আসা জরুরী (৩)