Home সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক: সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার

ফেসবুক: সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার

।। মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া ।।

সামাজিক যোগাযোগ, ভাব-বিনিময়, চিন্তা-চেতনা ও আদর্শ প্রচারে দ্রুত প্রভাব বিস্তারকারী মাধ্যম ফেসবুক। এর পরিধি সুবিশাল ও সুবিস্তৃত হওয়ায় অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত। এখানে কেউ নেই কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার। যার যা খুশি লিখছেন, কমেন্টস করছেন। যার যা ইচ্ছে শেয়ার করছেন৷ এ অনিয়ন্ত্রণ এবং স্বাধীনতা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অতিমাত্রায় স্বেচ্ছাচারিতা ও অস্বচ্ছতার দিকে ধাবিত করছে।

ফেসবুকের মাধ্যমে সত্যের প্রচার, মানুষের ইতিবাচক দিকগুলোর চর্চা হবে; এটাই সবার কাম্য। মিথ্যা, অসত্য ও নেতিবাচক দিকগুলোর চর্চা কারও কাম্য নয় ৷ যা শোভন, সুন্দর, কল্যাণকর, দেশ-জাতির উপকারে আসবে, তারই আলোচনা হবে, তারই প্রচার হবে; এ প্রত্যাশা সবার।

কিন্তু এখন ঘটে চলছে এর ব্যতিক্রম৷ সত্যের তুলনায় মিথ্যার প্রাধান্য। কল্যাণের তুলনায় অকল্যাণের জোর৷ ইতিবাচক থেকে নেতিবাচকের আলোচনা বেশি৷ বাস্তবতার তুলনায় অবাস্তবতার প্রভাব অধিক৷ একে অন্যের ছিদ্রান্বেষণে তৎপর। ভিন্ন ব্যানার ও ভিন্ন ধারার তুলোধুনো করণে ব্যতিব্যস্ত। অগ্রজ অনুজের কোন ভেদাভেদ নেই৷ সিনিয়র জুনিয়রের পার্থক্য করা হয় না। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, মায়া-মমতার অভাব রয়েছে এখানে। এক কথায় পরশ্রীকাতরতার অবাধ ও উন্মত্ত প্লাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ফেইসবুক৷ সত্যকে চাপা দিয়ে মিথ্যাকে এমন রসাল ও জোরালো ভাষায় প্রকাশ করা হয় যে, মিথ্যা হয়ে যায় সত্য, আর সত্য হয়ে যায় মিথ্যা।

এছাড়া আরও দেখা যায়- যার যে অবদান তা-ই প্রচার না করে অতিরঞ্জিত করা হয় ৷ যে যে স্তরের তাকে সে স্তরে না রেখে তার স্তুতিবাক্য এমনভাবে প্রকাশ করা হয় যে, ভাবটা এমন- তিনি যুগের শায়খুল ইসলাম, হাকীমুল উম্মত৷ ক্ষেত্র বিশেষ তো আরও কয়েক ডিগ্রী উপরেও উঠে যায় ৷

ফেসবুকে তিলকে তাল বানানো হয়। তালকে তিল। নায়ককে বানানো হয় খলনায়ক। আর খলনায়ককে দেয়া হয় মূল নায়কের আসন। তিলকে তিলের স্থানেই রাখতে হবে৷ তিল তো আর তাল হতে পারে না৷ পার্শ্বনায়ক মূলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে পারে না। যেমন প্রতিমন্ত্রী আর পূর্ণ মন্ত্রির মর্যাদাও এক হতে পারে না।

যার যে অবদান তার স্বীকৃতি অবশ্যই দিতে হবে। প্রশংসাযোগ্য কাজের প্রশংসা না করাই হবে সঙ্কীর্ণমনার পরিচয়। প্রশংসারও একটা পরিসীমা আছে৷ আছে সীমাবদ্ধতাও। প্রশংসা, গুণকীর্তন যদি বাস্তবতা বিবর্জিত হয়, তবে তা হবে অন্যায়, জুলুম। গুণকীর্তন প্রশংসিতের কর্মপরিধির সীমানা অতিক্রম করাও কিন্তু নিন্দনীয়।

আরও পড়তে পারেন-

গোয়েবলসিয় থিওরীর অনুকরণ কখনও গ্রহণযোগ্য নয়৷ সজিব ওয়াজেদ জয় কয়েক বছর পূর্বে বলেছিলেন, পশ্চিমা এক প্রফেসর তাকে বলেছিলেন, মিথ্যাকে সত্যের রূপ দিতে হলে মিথ্যার প্রচার বেশী করে করবে৷ দেখবে এক সময় সত্য বিস্মৃত হয়ে যাবে৷ আর মিথ্যা সত্যের আসন দখল করবে৷ বর্তমানে এ থিউরীর প্রয়োগ হচ্ছে বেশি।

যাকে তাকে ‘আন্তর্জাতিক মুফাসসিরে কুরআন, হাদীস বিশারদ, আল্লামা, মুফতী’ খেতাব দেয়া হচ্ছে। মুফাসসিরে কুরআন হওয়ার জন্য কী পরিমাণ ‘ইলম’ থাকা প্রয়োজন, জ্ঞানের গভীরতার পরিধি কতটুকু হলে ‘মুফতী’ বিশেষণ নামের শুরুতে ব্যবহার করা যায়, ‘হাদীস বিশারদ’ বিশেষণটি কোন ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের বিশেষণ হতে পারে, আল্লামা শব্দের ভার বহন করার ক্ষমতা ক’ জনের আছে, সে দিক বিবেচনা না করে যার তার নামের শোভা বর্ধনের জন্য এগুলো অবিবেচকের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে দেদারছে ৷

নতুন করে শুরু হয়েছে ‘কিংবদন্তি’র ব্যবহার৷ এই তো ক’দিন পূর্বে কোন একজন তার কমেন্টসে আমার মতো নালায়েকের নামের শুরুতে আল্লামা, কিংবদন্তি লাগিয়ে দিলেন৷ আমার মতো সর্বদিক দিয়ে দুর্বল ব্যক্তি বিশেষণদ্বয়ের ভার বহন করতে পারবে কিনা সে বিষয়টি তিনি বিবেচনায় আনেননি৷ তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করে মনটাকে হলকা করে নিয়েছিলাম।

একজন মানুষের কর্মই তার মূল্যায়নের মাপকাঠি৷ কর্মই বলবে তিনি দেশ, জাতি ও দ্বীনের খেদমতে কী কী অবদান রেখেছেন? যাদের ২৪ ঘণ্টার জীবন আমাদের সম্মুখে বিদ্যমান, যাদের সকাল-সন্ধ্যার কর্মের প্রত্যক্ষদর্শী, তাদের সম্পর্কে যখন অবাস্তব, অতিরঞ্জিত গুণকীর্তনমালা দেখা যায়, তখন না হেসে পারা যায় না৷ আরও পীড়াদায়ক হল, যখন সম্মিলিত কোনো আদর্শ ও চিন্তা-চেতনার উপর ভিত্তি করে সম্মিলিতভাবে কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ভিত রাখা হয়, আর পরবর্তীতে সেটিকে একক ক্রেডিট বলে প্রচার করা হয়।  মূলপ্রেরণা ও চেতনা সৃষ্টির নেপথ্যে যিনি বা যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের আড়াল করা হয়। অবশ্য এ জাতীয় অপপ্রচারে নিজেদের গন্ডির বাইরের লোকদের ব্যবহার করা যায় না। বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিফহালদের বিশ্বাসে সামান্যতম চিড়ও ধরানো যায় না।

তিলকে তাল বানিয়ে হয়তো রসাল করা যেতে পারে ক্ষণস্থায়ী এ জগতে। কিন্তু দৃশ্য অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতার নিকট এর কোন মূল্যায়ন হবে না। বরং তাল বানানেওয়ালাকে এ জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে৷

তাই আসুন! যা সত্য ও বাস্তব তার চর্চা করি। নেতিবাচক দিকের চর্চা নয়, ইতিবাচককে গ্রহণ করি। কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি নয়, পুষ্পবিনিময় করি ৷ হাতে হাত ধরে সুভ্রাতৃত্বের মালা পরিধান করি।

– মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, পরিচালক- জামেয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ-ঢাকা, সহসভাপতি- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এবং যুগ্মমহাসচিব- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।