Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন রোযা ও বিজ্ঞান

রোযা ও বিজ্ঞান

।। মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী ।।

সময়ের আবর্তে একে একে এগারোটি মাস পেরিয়ে আমাদের কাছে হাজির হল সিয়াম-সাধনার মাস পবিত্র রমাদানুল মুবারক। বহু প্রতীক্ষিত জিনিস যখন কারো কাছে হাজির হয়, তখন আর আনন্দের কোন সীমা থাকে না। তেমনি, চাতক পাখির ন্যায় দীর্ঘ এগারোটি মাস প্রতীক্ষার পর মুসলমানদের কাছে যখন পবিত্র মাহে রমাদানুল মুবারক হাজির হয়, তখন প্রবাহিত হতে থাকে রহমতের ঝর্ণাধারা। অনবরত ঝরতে থাকে বরকত। খুলে দেয়া হয় মাগফিরাতের দুয়ার। উন্মুক্ত করে দেয়া হয় জান্নাত। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজা ও কবরের আযাব। শয়তানকে করা হয় শিকল বন্দী । পবিত্র করে তোলা হয় মুমিনের আত্মা। ধনীরা আদায় করে গরীবের হক। পাপীরা তাওবার মাধ্যমে ফিরে আসে সত্যের পথে। ধনী-গরিব, শত্রু -মিত্র দাঁড়িয়ে যায় একই কাতারে। শুরু হয় শান্তি, সৌহার্দের অপরূপ লীলা।

রোযা সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)।

হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে কুদসিতে বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন- “রোযা আমার জন্য এবং আমি নিজ হাতে রোযার প্রতিদান দান করব।”

কুরআন-হাদিসের আলোকে রোযার ফযীলত অপরিসীম। আবার বিজ্ঞানের আলোকেও রোযার উপকারিতা অসীম।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ অনেক গবেষণা করে রোযার উপকারিতা প্রমাণ করেছেন। তারা বলেন, রোযা পালনের ফলে মানুষের শরীরে কোনো ক্ষতি হয় না, বরং অনেক কল্যাণ সাধিত হয়। তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত Science for Fasting গ্রন্থে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন, “রোযা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। সঠিকভাবে রোযা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে।”

রোযা একই সাথে দেহে রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোযা পালনের ফলে দেহে রোগ জীবাণুবর্ধক জীর্ণ অস্ত্রগুলো ধ্বংস হয়, ইউরিক এসিড বাঁধা প্রাপ্ত হয়। দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রকার নার্ভ সংক্রান্ত রোগ বেড়ে যায়। রোযাদারের শরীরের পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার ফলে চর্মরোগ বৃদ্ধি পায় না।

আরও পড়তে পারেন-

ড. লুটজানারের মতে, “খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহ দগ্ধীভূত হয়ে যায়।”

ডা. বেন কিম তাঁর Fasting for health প্রবন্ধে বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানী), শরীরের র‌্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তিনি বলেন, উপবাসকালে শরীরের যেসব অংশে প্রদাহজনিত ঘা হয়েছে তা পূরণ এবং সুগঠিত হতে পর্যন্ত সময় পেয়ে থাকে। বিশেষতঃ খাদ্যনালী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়াতে তার দেহে ক্ষয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে। সাধারণতঃ দেখা যায় টিস্যু তৈরি হতে না পারার কারণে অর্থপাচ্য আমিষ খাদ্যনালী শোষণ করে দুরারোগ্য সব ব্যাধির সৃষ্টি করে।

ডা. লুইস ফ্রন্ট বলেছেন, “রোযা পালনে মানবদেহ যথেষ্ট পুষ্ট এবং বলিষ্ঠ হয়ে থাকে। মুসলমানরা নিশ্চয়ই রোযার মাসকে সুস্বাস্থ্যের মাস হিসেবে গণ্য করে থাকেন। রোযা বা উপবাস মেধাশক্তিকেও বৃদ্ধি করে থাকে।”

বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলাম বলেছেন, “রোযা মানুষের দেহে কোনো ক্ষতি করে না। ইসলামের এমন কোনো বিধান নেই, যা মানবদেহের জন্যে ক্ষতিকর। গ্যাস্ট্রিক ও আলসার-এর রোগীদের রোযা নিয়ে যে ভীতি আছে তা ঠিক নয়। কারণ রোযায় এসব রোগের কোনো ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়। রমযান মানুষকে সংযমী ও নিয়মবদ্ধভাবে গড়ে তুলে।”

ডা. জুয়েলস, ডা. ডিউই, ডা. এলেক্স হিউ প্রমুখ প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ স্বীকার করেছেন যে, রোযা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে দেহের জীবাণুবর্ধক অন্ত্রগুলি ধ্বংস হয়, ইউরিক এসিড বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। রোজা চর্মরোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির জন্য অত্যন্ত উপকারী বিবেচিত হয়েছে। মেদ ও কোলেষ্টরেল কমানোয় রোযার জুড়ি নেই। সর্বোপরি রোযা মনে প্রশান্তি আনে, কুপ্রবৃত্তি প্রশমিত করে, দীর্ঘ জীবন দান করে।

এ ছাড়া রোযায় অসংখ্য উপকারিতার কথা বিভিন্ন তথ্য গণমাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন।

লেখক: গ্রন্থকার ও মুহাদ্দিস- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।