Home ইসলাম মাহে রমযান: মু’মিন জীবনে ইবাদতের বসন্তকাল

মাহে রমযান: মু’মিন জীবনে ইবাদতের বসন্তকাল

।। আলহাজ্ব সৈয়দ মুহাম্মদ জহির উদ্দীন ।।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমি তোমাদেরকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত : ৫৬)।

ইবাদতকারীকে আবেদ বলে, আর আবেদ ওই ব্যক্তি হয়, যার ভেতরে শরীর ও রুহের সমন্বয় ঘটেছে। কারণ যখন আমরা রুহের জগতে ছিলাম সেখানেও এবাদত ছিল না, আবার যখন আমাদের মৃত্যু হবে তখনো এবাদত থাকবে না। যদিও শরীর দীর্ঘদিন মাটির উপরে থাকে। শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখাতে মাটি থেকে উৎপাদিত খাবার সরবরাহ করতে হয়। তেমনি ভাবে রুহকে সুস্থ সবল ও সতেজ রাখাতে আসমানী খাবার সরবরাহ করতে হয়। শরীরের উপযুক্ত খাবার উৎপাদনের জন্য অপেক্ষাকৃত উপযুক্ত কিছু মৌসুম আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।

যেমন, শীতকালে কমলা, বড়ই, মাল্টা ইত্যাদি গরমের শুরুতে তরমুজ, জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় মাসের দিকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি এবং কিছু উর্বর ভূমি সৃষ্টি করেছেন যেমন, মরুভূমিতে কোন ফসল হয় না। অপরদিকে উর্বর ভূমি ও পলিযুক্ত মাটিতে অনেক ভালো ফসল হয়। আবার বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠতম ফসল আছে, যেগুলো অন্য অঞ্চলে ভালো হয় না। যেমন, রাজশাহীর আম, দিনাজপুরের লিচু, যশোরের আমড়া, বরিশালের পেয়ারা, খুলনার নারিকেল ইত্যাদি । তেমনই ভাবে রুহের খাবার উৎপাদনের জন্যও অপেক্ষাকৃত কিছু উর্বর ভূমি রয়েছে। যেমন কেউ বাড়িতে একা নামাজ পড়লে এক ওয়াক্ত নামাজেরই সওয়াব পায়।

অপরদিকে কেউ মসজিদে জামাতের সাথে পড়লে পঁচিশ থেকে সাতাশ গুন সওয়াব বেড়ে যায়। কেউ ওই একই নামাজ বাইতুল মোকাদ্দাসে পড়লে পাঁচ শত ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হয়। আবার সেটি মসজিদে নববীতে আদায় করলে এক হাজার ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব, অন্য বর্ণনায় পঞ্চাশ হাজার ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাওয়া যায় এবং বায়তুল্লাহ শরীফে আদায় করলে এক লক্ষ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি রুহের খাবারের জন্য বিশেষ কিছু মৌসুম রয়েছে, যখন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমার দুয়ার খুলে দেয়া হয় ও অল্প আমলে অধিক শোয়াব পাওয়া যায়। যেমন ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ শাবানের ১৪তম রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাতের রাত এই রাত্রে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য মানুষদেরকে মাফ করে দেন। অত:পর রমজানুল মোবারক, যাতে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমার দরজা খুলে দেন।

আরও পড়তে পারেন-

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে আল্লাহ তা’আলা তাঁর পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালা তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও সওয়াবের আশায় এবাদত করে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেন। (বুখারী শরীফ : ১৯০১)। তেমনি ভাবে ঈদের দিনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দেন হে বান্দারা আমি তোমাদেরকে মাফ করে দিলাম এবং তোমাদের গুনাহ গুলো নেকিতে রূপান্তর করে দিলাম। (বায়হাকী, মেশকাত)।

যে ব্যক্তি কোন রোজাদার কি ইফতারি করায় আল্লাহ তাআলা তার গুনাহগুলো মাফ করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে তাকে মুক্তি দেন এবং রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব তাকে প্রদান করেন এতে রোজাদারের সওয়াবে কোন কমতি হয় না। তেমনি ভাবে রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোন শ্রমিকের কাজের বোঝা হালকা করে দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।

কোন ব্যক্তি রমজানে একটি নফল এবাদত করলে ফরজের সমান সওয়াব পায় এবং একটি ফরজ আদায় করলে সত্তর টি ফরজের সমান সওয়াব পায়। অতএব আসুন, আমরা রমজান মাসে রোজা রেখে, কোরআনের তেলাওয়াত করে এবং জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ও দোয়া, ইস্তেগফারের মাধ্যমে এবাদতের এই মৌসুমকে সুশোভিত করে তুলি। আল্লাহতালা আমাদেরকে তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: প্রকাশক উম্মাহ২৪ডটকম এবং ব্যবস্থাপরিচালক- আল বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।