Home সাক্ষাৎকার সমসাময়িক দ্বীনিবিষয়ে মাওলানা হাফেজ নূরুল হকের সাক্ষাৎকার

সমসাময়িক দ্বীনিবিষয়ে মাওলানা হাফেজ নূরুল হকের সাক্ষাৎকার

[কাতার ধর্মমন্ত্রণালয়ের ইমাম ও খতীব হযরত মাওলানা হাফেজ নুরুল হক সাহেব হাফিযাহুল্লাহর পৈতৃক বাড়ি কক্সবাজার জেলার রামুতে। ছাত্র জীবন থেকে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও গভীর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। আল জামেয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া পটিয়া থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমান নম্বর পেয়ে তিনি দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন ৯০ এর দশকে। তাকওয়া, পরহেজগারী ও  ইবাদাত-বন্দেগীতে যেন আকাবেরীনের ছায়া। তিনি নিজে এবং আরবি ভাষায় তার হাদিসের দরসগুলো যেন কুরআন ও হাদিসের জীবন্ত ব্যাখ্যা। আরবি ক্যালিগ্রাফিতেও তিনি অতুলনীয়। এক কথায় তিনি একজন বড় মাপের আলেম। তিনি সাধারণত মিডিয়াতে আসেন না। ইবাদাত, হাদিস ও ফিকহের দরস ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সম্প্রতি তিনি গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছে। এতে সমসাময়িক অনেক প্রসংগ বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের আগামীর করণীয় সম্পর্কে সুন্দর পরামর্শমূলক দিক-নির্দেশনা রয়েছে। ]

সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন কাতার প্রবাসী খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ

 প্রশ্ন: হযরত দীর্ঘ দিন ধরে আপনি কাতারে আছেন। দেশে থাকতে আপনি  আল জামেয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া পটিয়াতে এবং রামু চাকমারকুল  মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। আপনার অনেক মুহিব্বীন মনে করেন যে,আপনি দেশে থাকলে দ্বীনের খেদমত বেশি করতে পারতেন। সেই বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মাওলানা হাফেজ নুরুল হক: الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى أما بعد

আমি দীর্ঘ দিন ধরে কাতারে আছি তা ঠিক, তবে বিদেশে মানুষ যত বেশি দিনই থাকুক না কেন নিজের দেশের কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে দেশে যাই এবং দেশের খবরাখবর খুব বেশি রাখতে না পারলেও মোটামুটি রাখি। আমার চেয়েও দেশের খবরাখবর বেশি রাখে আমার আহলিয়া। সেটা হয়ত তার পিতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। বিশেষ কোনো খবর হলে সে আমাকে জানায়।

দেশে থাকলে আরো বেশি দ্বীনের খেদমত করা হতো কিনা তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। তুলনা করা উচিত নয়। তবুও কেউ তুলনা করতে চাইলে তাকে আমার দুই জায়গার খেদমত সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। আমি অধম অযোগ্য মানুষ। দেশেও তেমন বেশি খেদমত করতে পারলাম কই? যেখানে যখন আছি যতটা পারা যায় দ্বীনের খেদমতের সাথে লেগে থাকার চেষ্টা করি। সমস্ত মুসলমানের তাই করা উচিত।

আসলে দ্বীনের খেদমত কোনো এলাকা অথবা কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। একজন মুসলিম সে যেখানেই থাকুক যেভাবেই থাকুক চেষ্টা করলে দ্বীনের খেদমত করতে পারে। এখানেও আলহামদু লিল্লাহ আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছি। আসলে নির্দিষ্ট কিছু কাজকেই দ্বীনের খেদমত মনে করা ঠিক নয়। দ্বীন যেমন ব্যাপক তেমনি দ্বীনের খেদমতও ব্যাপক। দ্বীন যেহেতু মানুষের জীবন বিধান, এবং মানুষের জীবনের কাজকর্মের যেহেতু অনেক দিক ও শাখা প্রশাখা থাকে তেমনি দ্বীনের খেদমতেরও বিভিন্ন দিক ও শাখা প্রশাখা আছে। এমন অনেক কাজ আছে যেগুলো আসলে ইবাদত, কিন্তু সাধারণ মুসলমানেরা সেটাকে ইবাদত বলে মনে করে না। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি তাহলো ইসলামকে পরিপূর্ণ একটি জীবনবিধান হিসেবে সাধারণ মুসলমানদের সামতে তুলে ধরার যত রকমের পথ ও পদ্ধতি আকাবেরীন থেকে আমরা পেয়েছি সবগুলোকেই দ্বীনের খেদমত মনে করা উচিত।  

প্রশ্ন: আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আরো বেশি দ্বীনের খেদমত করার তাওফিক দান করুন। কাতারে আপনার দ্বীনের খেদমতের কিছু চিত্র তুলে ধরলে ভাল হয়। এবং অন্য আলেমরা যারা কাতারে আছেন তারা কীভাবে দ্বীনের খেদমত করতে পারেন সেই বিষয়েও একটু যদি বলতেন।

মাওলানা হাফেজ নুরুল হক: কাতারে যেসব ওলামায়ে কেরাম অথবা হাফেজ সাহেবগণ আসেন তাদের জন্যেও দ্বীনের খেদমত করার সুযোগ এখানে আছে। একেক জনের খেদমতের ধরণও আলাদা হতে পারে। তবে সবার আগে যা দরকার তা হলো মনের মধ্যে দ্বীনের খেদমতের আগ্রহ ও জযবা থাকতে হবে। হাফেজ সাহেবগণ তাদের চাকরির সাথে সাথে  মুতালেয়া, লেখালেখি, তাবলীগ ইত্যাদির মাধ্যমেও  দ্বীনের খেদমত করতে পারেন।  যে কোনো একটি দ্বীনি বিষয়ে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগও তারা করে নিতে পারেন। এখানে মসজিদের চাকরি যারা করেন, তাদের হাতে প্রচুর সময় থাকে। সেই সময়টা তারা যেন কিতাব মুতালেয়া করে কাটান, তাদের প্রতি আমার সেই পরামর্শ রইল।  

আমি এখানে দ্বীনের খেদমত কীভাবে করছি তা যদি বলতে হয় তাহলে আমি বলব আমি আওক্বাফ তথা কাতার ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি করি। আওক্বাফের তাহফিজুল কোরআন বিভাগের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শে তারা আমার মতামতটাকে অধিক গুরুত্ব দেয়। সেভাবে তাদের মাধ্যমেও যথেষ্ট দ্বীনের খেদমত  করার তাওফিক হচ্ছে আলহামদু লিল্লাহ। এটা নিশ্চয় আল্লাহর রহমত। আরো আল্লাহর রহমত যে, আমার চাকরিটাকে আল্লাহ আমার হালাল রিজিক উপার্জনের মাধ্যমও বানিয়েছেন আবার দ্বীনের খেদমতও বানিয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন-

তাছাড়াও ছোটদের জন্য লেখা আমার কয়েকটি কিতাব কাতারে মাদ্রাসা ও স্কুলের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই কিতাবগুলো ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার অনেক মাদ্রাসাতেও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেটাও দ্বীনের খেদমত আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন। 

চাকরির বাইরেও সিহাহ ছিত্তাহর হাদিসের কিতাবগুলো এবং ফেকহী কিতাবাদীর দরসের সুযোগ আল্লাহ তায়ালা করে দিয়েছেন। আমি দেশে ১২ বছর শিক্ষকতা করেছি। আর কাতারে আছি প্রায় ২৮ বছর ধরে। প্রবাসের এই দীর্ঘ সময়টাতে আমি মুরব্বীদের আমানত তার হকদারদের প্রতি বেশি পৌঁছে দিতে পেরেছি বলে আমার মনে হচ্ছে।  

প্রশ্ন: আপনার সবগুলো ভাই আলেম, আপনার ও আপনার ভাইদের ছেলে মেয়েরাও আলেম আলেমা আলহামদু লিল্লাহ। তারা দেশে ও বিদেশে বিভিন্নভাবে দ্বীনি খেদমতে আছেন। এটা নিশ্চয় আল্লাহর রহমত। আপনার পড়ালেখার পেছনে বাহ্যিক দৃষ্টিতে আপনার আব্বা, আম্মা এবং উস্তাদদের মধ্যে কার অবদান কতটা একটু যদি বলতেন।

মাওলানা হাফেজ নুরুল হক: সর্বপ্রথম অবদান আমার মা, ও বাবার। আমার বাবা আলেম ছিলেন না, তবে ওলামায়ে কেরামকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। নেককার বুজর্গ আলেমদের সোহবত পেয়েছেন। আমাদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার পেছনে সর্ব প্রথম অবদান রয়েছে আব্বার। তিনি আমাকে এবং আমার ভাইদেরকে দেখার জন্য পটিয়া মাদ্রাসায় আসতেন। আসাতিজায়ে কেরামের সাথে দেখা করতেন। তারপর অবদান রয়েছে আমার সমস্ত আসাতিজায়ে কেরামের। সবার নাম নেয়া ত সম্ভব নয়। একেক ক্ষেত্রে একেক উস্তাদের অবদান বেশি রয়েছে। বিশেষ করে হাজী সাহেব হুজুর (হাজি ইউনুছ সাহেব হুজুর রহ), খতীবে আজম হযরত ছিদ্দিক আহমদ সাহেব রহ। মীর সাহেব হুজুর, (হযরত আমির হোসাইন মীর রহ.), ইমাম আহমদ সাহেব হুজুর রহ. কানাইমাদারীর মুহাদ্দেস মাওলানা ইসহাক সাহেব হুজুর রহ., মুফতি আব্দুর রহমান সাহেব হুজুর রহ, হযরত মাওলানা সুলতান যওক নদভী সাহেব হুজুর বারাকাল্লাহু ফি হায়াতিহিসহ আরো অনেক উস্তাদের অবদান আছে আমার উপর।

প্রশ্ন: সাময়িক প্রসঙ্গে দুই/একটি প্রশ্ন করতে চাই। কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের উত্থান, ঝিমিয়ে পড়া এবং ইদানীং আবার নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে সক্রিয় হওয়া ইত্যাদি নিয়ে দেশে এবং বিদেশে ওলামায়ে কেরাম এবং সাধারণ মানুষদের মধ্যে খুবই আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ, মতামত ও পরামর্শ আলেম সমাজের এবং মুসলমানদের উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন। 

মাওলানা হাফেজ নুরুল হক: আমি আসলে খুব বেশি খবরাখবর রাখার সুযোগ পাই না। তবুও দেশের মায়া, এবং দ্বীনি মাদ্রাসা সমূহের সাথে আমাদের আত্মার যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান, তার কারণে কিছুটা খোঁজখবর রাখতে হয়।

হেফাজতে ইসলামের জন্ম, উত্থান এবং ঝিমিয়ে পড়া বিষয়ে সবাই জানে। সেখানে তেমন কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি না। যখন যেটা হয়েছে সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে এবং আমাদের আমলের প্রতিচ্ছবি আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দেখিয়েছেন। এটাকে আমি মনে করি আল্লাহর রহমত। আমাদের আমল শুদ্ধ করার জন্য তিনি আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। কোরান মজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- , إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ

আল্লাহ্ অবশ্যই কোনো জাতির অবস্থায় পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই তা পরিবর্তন করে। সুরা আর রাআদ, ১১।

আল্লাহ তায়ালা চাইলে যে কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে দ্বীনের খেদমত নিতে পারেন। ইদানীং হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, এটাকেও আমি আল্লাহর রহমত মনে করি। আল্লাহ তায়ালা তার বিশেষ কিছু নেককার বান্দাদের নেক দোয়ার বরকতে ওলামায়ে কেরামকে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিয়েছেন এবং যত দিন আমাদের আমল শুদ্ধ থাকবে তত দিন আমাদের দ্বারা আল্লাহ তার দ্বীনের খেদমত নিবেন। আল্লাহর দ্বীন আল্লাহ যেভাবেই হোক হেফাজত করবেন। এটা কোনো ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভরশীল নয়। 

প্রশ্ন: কিছু দিন আগে ফ্রান্সের একটি পত্রিকায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবমাননা করে কার্টুন প্রকাশ করার পর সারা বিশ্বেই মুসলিমরা প্রতিবাদ করে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষেরাও এই প্রতিবাদে অংশ গ্রহণ করে। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সারা দেশেই বড় আকারে বিক্ষোভ করে। পরে একটি হিন্দু সংগঠনের কিছু লোক ইসলামী দলগুলোর নামে আপত্তিকর স্লোগান দেয়। যে কারণে মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোভ নিরসনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে জাগো হিন্দু পরিষদের নেতারা ওলামায়ে কেরামের সাথে বৈঠকে বসেন এবং তারা বলেন যে, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দিয়েছে তারা তাদের দলের নয় এবং তারাও এদের শাস্তি দাবি করেন। আপনি হয়ত বৈঠকের ভিডিওটি দেখেছেন। এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মাওলানা হাফেজ নুরুল হক: বৈঠকের ভিডিওটি আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল কয়েকটি ইসলামী দলের বিরুদ্ধে কিছু হিন্দুদের আপত্তিকর স্লোগান দেয়ার কারণে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করা। তাদের উদ্দেশ্যটি ভাল লেগেছে এবং বৈঠকটি সৌহার্দপূর্ণও হয়েছে, এবং বৈঠকে ওলামায়ে কেরাম ও জাগো হিন্দু পরিষদের নেতারা সবাই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। এর জন্য সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তবে সেখানে যেসব ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন দুই/একটি বিষয়ে আমি সবিনয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন মনে করছি।

১/ সেই বৈঠকে ওলামায়ে কেরাম ও জাগো হিন্দু পরিষদের নেতারা নিজেদের বক্তব্য পেশ করার সময় তাদের নিজেদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ ও আন্তরিকতার সাথে মিলে মিশে চলাফেরা ও শান্তিপূর্ণ বসবাসের কথাও তুলে ধরেছেন। এক পর্যায়ে হিন্দু নেতা তাদের বাড়ির পাশে নিজের টাকায় একটি মসজিদ বানিয়ে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। এখানে মসজিদের অর্থায়নের উৎসের বিষয়ে শরিয়তে নির্দিষ্ট যে সীমারেখার কথা বলা আছে তা যদি ওলামায়ে কেরাম পরিষ্কার করতেন তাহলে বেশি ভাল হতো। কারণ এটি পরিষ্কার না হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে ভুল বার্তা যেতে পারে।

২/ হিন্দু নেতা সেদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন ধর্ম মানেই ত সত্য, সুন্দর, ন্যায়। সেই কথাটিও তিনি তার দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন।  কিন্তু ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মের সংজ্ঞা কী তা স্পষ্ট করা ওলামায়ে কেরামের দ্বীনি দায়িত্ব ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। কারণ, ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মের সংজ্ঞাটা বলে না দেয়ার কারণে সাধারণ মানুষেরা ভুল বুঝতে পারে। তাছাড়া  তার দেয়া সংজ্ঞা মেনে নিলে তো ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের মধ্যে তেমন পার্থক্য থাকে না। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মের সংজ্ঞা কী তা পরিষ্কার হওয়া উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। 

প্রশ্ন: হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্যে যদি কিছু পরামর্শমূলক কথা বলতেন তাহলে উপকার হতো বলে আশা করছি।

মাওলানা হাফেজ নুরুল হক:  হেফাজতে ইসলামে দেশের অনেক বড় বড় আলেমগণ আছেন। যারা নাই তারাও কোনো না কোনোভাবে হেফাজতের সহযোগী। হেফাজতের মতো বিশাল সংগঠনকে পরামর্শ দেয়ার মত যোগ্যতা আমার মধ্যে নাই। তবুও দ্বীনি কাজ মনে করে এবং ছওয়াবের আশায় দুয়েকটি বিষয়ে আরজ পেশ করছি-

১/ হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি হয়েছে এর জন্য আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কোনো মুসলিমের অথবা কোনো সংগঠনের কর্মকাণ্ড কোনো ব্যক্তি বিশেষের নীতির উপর আছে কিনা তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো শরিয়তের নীতির উপর আছে কিনা। সকল দায়িত্বশীলগণ যেন শরিয়তের মাপকাঠির ভিতরে থেকে সকল দায়িত্ব সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিতে পারেন সে জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।

২/ সরকারের সাথে সংঘাতে না গিয়ে হেকমতের সাথে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সরকারের সাথে সংঘাতে না গিয়ে হেকমতের সাথে তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে দাবি আদায় করা বেশি ভাল হবে। তবে এখানে আকাবেরীনে কেরামের পথ ও পদ্ধতির প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। দাওয়াতের পদ্ধতি অকার্যকর হলে চাপ দেয়ার কৌশল রাখা যেতে পারে। 

৩/ দাওয়াতের উদ্দেশ্যে সারা দেশের জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের হেফাজতে ইসলামের কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করা এবং যেসব স্থানে কমিটি নাই সেখানে কমিটি গঠন করে দেয়ার প্রতি মনোযোগ দেয়া দরকার। সাংগঠনিক নেযাম মজবুত না করে কোনো সংগঠন চলতে পারে না। তাই এখন সবচেয়ে বেশি দরকার হলো সাংগঠনিক নেযামকে মজবুত করা।

৪/ হেফাজতে ইসলামের গ্রাম পর্যায়ের কমিটিগুলো পুনর্গঠনের পর তাদের মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষা ও বয়স্কদের মাঝে কোরান  ও দ্বীনি শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। 

৫/ সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্বীনি শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য খতীবে আজম হযরত মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ সাহেব রহ. একটি পরিকল্পনার কথা বলতেন। তাহলো সারা দেশে এমন কিছু স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যেখানে সাধারণ শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষার সমন্বয়ে পাঠদান করা হবে। এখানে সব ধর্মের লোকেরা চাইলে পড়তে পারবে এবং এখানে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পরে স্কুল বা মাদ্রাসা যার যেখানে ইচ্ছা সে সেখানে চলে যাবে। ইদানীং যেহেতু কেজি স্কুল ও কিন্ডার গার্টেন ইত্যাদির কারণে সকালের মক্তবও সঙ্কুচিত হয়ে আসছে তাই এই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়া দরকার।

৬/ হেফাজতে ইসলামের শাপলার আন্দোলনের পর থেকে যেসব ওলামায়ে কেরাম ও হেফাজত কর্মীদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে সেগুলো অতি সত্বর তুলে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাতে হবে।

৭/ যে সকল ইসলামী দলগুলোর আকিদা ও নীতিমালা এক তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য ওলামায়ে কেরামের উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করছি।

 ৮/ কোনো হেফাজত কর্মী বা ইসলামী দলের কর্মী এমনকি কোনো সাধারণ মুসলিমও যদি শুধু ধর্ম পালন করার কারণে অথবা হেফাজতের কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার কারণে মামলা,মোকাদ্দমার মাধ্যমে দেশের ভিতরে বা বাইরে হয়রানির শিকার হয়,তাহলে তাদেরকে আইনি সহায়তাসহ যে কোনো ধরণের সহায়তা দেয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা রাখা খুবই জরুরী।

 আল্লাহ আমাদেরকে তার সন্তুষ্টির জন্য সকল কাজ করার এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত মত চলার তাওফিক দান করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।