Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ একজন আলেম ভাইস চেয়ারম্যান এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে জনপ্রত্যাশা

একজন আলেম ভাইস চেয়ারম্যান এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে জনপ্রত্যাশা

।। রাকিবুল ইসলাম ।।

বলা হয়, উলামায়ে কেরাম সমাজের দায়িত্ব গ্রহণ করলে ন্যায় ও ইনসাফের সামাজ প্রতিষ্ঠা হবে। সুস্থ ও সুন্দর হবে আমার এ মাতৃভূমি। গরীব দুঃখী অসহায় মানুষ তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। জনগণ সুখে দুঃখে তাদের নেতা বা প্রতিনিধিকে পাশে পাবে। তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জমিয়ত নেতা মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কায়েস সাহেব।

প্রিয় মাতৃভূমি আজ মানবতাহীন হয়ে পড়েছে! গোটা বিশ্ব যখন করোনার প্রাদুর্ভাবে সংকটাপন্ন, অসহায় হয়ে পড়েছে অর্থ এবং খাদ্যের অভাবে। এমনই সঙ্কটময় সময়ে আবার বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যার দুর্যোগ। মানুষ তার বসবাসের স্থানটুকুও হারিয়ে বিপর্যস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে। এমন করুণ পরিস্থিতেও জনপ্রতিনিধিদের তেমনভাবে পাশে পায়নি জনগণ।

একটি সভ্যসমাজের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিনিধিত্বপূর্ণ সমাজব্যবস্থা। আর তাই প্রতিনিধিত্বমূলক সমাজ দিয়েই আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানবসভ্যতার সূচনা করেছিলেন। আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ছিলেন মানবজাতির প্রথম প্রতিনিধি ও প্রথম নবী। যুগে যুগে মহান আল্লাহতায়ালা যত নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন, তাঁদের সবাইকেই সমকালীন মানবগোষ্ঠীর সর্বোত্তম গুণাবলীর অধিকারী করে পাঠিয়েছিলেন।

জনপ্রতিনিধি বিশাল জনগোষ্ঠীর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বহন করেন। জনপ্রতিনিধির সামগ্রিক যোগ্যতা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার ওপর ভিত্তি করে সমাজ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। সুতরাং জনপ্রতিনিধির বৈশিষ্ট্যগুণে যেমন একটি সমাজ ইতিহাসের স্বর্ণচূড়ায় আরোহণ করতে পারে, তেমনি তার ব্যর্থতা একটি জাতিকে ইতিহাসের আঁস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে পারে। সেজন্যই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের গুরুত্ব সীমাহীন। অগ্রসরমান জাতির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে কী কী গুণ থাকা উচিত, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম সেটি বাতলে দিয়েছে।

তিক্ত হলেও বাস্তব সত্য হচ্ছে, মাতৃভূমির জনপ্রতিনিধিগণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। মানবতা যেন বিদায় নিয়েছে তাদের থেকে। অসহায় মানুষের মুখে তারা দু-মুঠো খাবার তুলে দিতে ব্যার্থ হলেও সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ ছিনিয়ে নিতে কিন্তু ব্যার্থ হয়নি! এমনও খবর পাওয়া গেছে যে, ত্রাণ দিয়ে ছবি উঠিয়ে তা আবার ফিরিয়ে নিয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের এমন অসভ্যতার চর্চা বিশ্বের কোথাও আর আছে কি! মানুষের মৌলিক অধিকারটুকু দিতেও যারা ব্যর্থ তারাই বারবার জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন।

মূলত: এই জনপ্রতিনিধিগণ মানবতার শিক্ষাই পাননি। আর দেশের কয়জন জনপ্রতিনিধি পাওয়া যাবে, যারা একজন জনপ্রতিনিধির নূন্যতম দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত বা সচেতন?

একজন জনপ্রতিনিধির মৌলিক কিছু গুণ থাকা দরকার-

  • তাকওয়া বা আল্লাহভীতি
  • আমানতদারি ও ন্যায়পরায়ণতা
  • চরিত্র ও ব্যবহারে মানোত্তীর্ণ হওয়া
  • হৃদয়বান ও জনদরদি হওয়া
  • জনসেবার মন-মানসিকতা থাকা
  • উদার, মহৎ ও ক্ষমাশীল হওয়া
  • জিজ্ঞাসিত হওয়ার ভয়
  • সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়া এবং
  • কর্তব্যের প্রতি দায়িত্ববোধ।

এসকল গুণসম্পন্ন জনপ্রতিনিধি তো দূরের কথা! অবগত আছেন এমন প্রতিনিধিও যেন দেশে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের জনগণকে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে সেবা-যত্ন পেতে খুব কমই দেখা যায়। কেবল নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা মাটিতে নেমে আসেন, জনগণের কাছে যান, আর নির্বাচন শেষে সুরক্ষিত প্রাসাদে গিয়ে ওঠেন।

সেই যে ওঠেন, আর নামেন না। আবার নির্বাচন এলে নামেন। নির্বাচিত হয়ে গেলে তাদের ধারে কাছেও জনগণ যেতে পারে না। এলাকায় গেলেও তাদের বডিগার্ডরা যেভাবে সুরক্ষার দেয়াল তৈরি করে, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে টপকে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। অর্থাৎ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও জনপ্রতিনিধিদের অনেকে জনগণের সুরক্ষার মধ্যে না থেকে বডিগার্ডের নিরাপত্তায় চলে যান। সেখান থেকে বের হন না বললেই চলে।

তখন জনগণ তাদের কাছে অচ্ছুৎ হয়ে পড়ে। নির্বাচনী এলাকার জনগণ কেমন থাকে, কীভাবে থাকে, তাদের উন্নয়ন কতটুকু হচ্ছে, এসবের খোঁজ-খবর রাখতে খুব একটা দেখা যায় না। বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধির আচরণ যুগের পর যুগ ধরে এমন হয়ে আছে। অথচ জনপ্রতিনিধি মানেই নিজেকে উজাড় করে জনসেবা করা এবং দুর্যোগ, দুর্ভোগ, দুঃসময়ে জনগণের পাশে থাকা। যেমনটা মাওলানা কায়েস সাহেবেকে জনগণের পাশে থাকতে দেখা গেছে।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি নিজেই পুরা উপজেলা চোষে বেড়িয়েছেন। বড়িগার্ড বিহীন ত্রাণ নিয়ে জনগণের ধারে ধারে গিয়েছেন। তার অফিসকেও রেখেছেন জনগণের জন্য উন্মুক্ত। প্রবেশ দ্বারেই প্লেকার্ডে বড় করে লিখে দিয়েছেন- “এটা জনগণের অফিস, ভেতরে প্রবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন নেই”। বাংলাদেশে এমন উদার মনের জনপ্রতিনিধি বিরল।

এই যে, করোনা মহামারি ও মহাদুর্যোগ চলছে, এর মধ্যে কয়জন সংসদ সদস্য কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিজ এলাকায় আছেন? তারা কে কোথায়, কীভাবে আছেন, তার খবর কি জনগণ জানে? তাদের সেবা কি তারা পাচ্ছেন? পাচ্ছেন না। বরং এ খবর পাওয়া যাচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ সুরক্ষার মধ্যে নিজেদের নিয়ে গেছেন। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে নিজ এলাকার জনগণের খোঁজ-খবর নেয়া এবং তাদের পাশে থেকে সেবা করার সংবাদ দেখা যাচ্ছে না। অথচ মাওলানা কায়েস সাহেব সরকারি ভাবে আড়াই কোটি টাকার ত্রাণ এবং বেসরকারি ভাবে জমিয়ত এবং তার সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আশি লক্ষাধিক টাকার ত্রাণ মাঠ পর্যায়ে জনগণের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেই বিতরণ করেছেন, জনগণের পাশে থেকেছেন।

অথচ দেশের সর্বত্র অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, জনপ্রতিনিধিদের বেশিরভাগ নিস্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন। উল্টো কোনো কোনো এমপির নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এইতো ইনকিলাবের তথ্য মতে, করোনা কালেই ত্রাণ চুরির অভিযোগে সাড়ে তিনশত জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত করা হয়েছেন। এছাড়া বাকি জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। জনপ্রতিনিধিদের এমন নীরবতায় মনে হওয়া স্বাভাবিক, দেশে যেন জনপ্রতিনিধি শূন্য হয়ে রয়েছে।

বলা বাহুল্য, তৃণমূল মানুষের কাছাকাছি থাকা অনেক জনপ্রতিনিধিই দরিদ্র মানুষের হক মেরে দেয় এবং দিচ্ছে। এমন দুর্নীতিবাজদের কারণেই ভাল উদ্যোগগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরা যেন জনপ্রতিনিধি না হয়ে দুর্নীতির প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন। মূলত এদের সিংহভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।

তার অর্থ হচ্ছে, দারিদ্র্য কমানো এবং দরিদ্র মানুষের সহায়তায় সরকার আন্তরিক হলেও, তা তার দলের লোকজনের কারণেই ব্যাহত হয় এবং সরকারও বদনামের ভাগিদার হয়। আবার সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে তেমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। যা নিচ্ছে, তা লোক দেখানোতে পরিণত হচ্ছে। নিজ দলের লোকজনের প্রতি এমন নমনীয় আচরণের মাধ্যমে সরকার নিজেই নিজের ইমেজ নষ্ট করছে।

শীতকাল প্রায় শুরু হয়ে গেছে। শীতের রাতে কম্বল আর কাঁথা মুড়ি দিয়ে আমরা আরাম করে ঘুমাব। আমরা যদি একটু খেয়াল করি, তাহলে দেখব, চারপাশে অনেক প্রতিবেশী আছেন, যারা শীতে কষ্ট পাচ্ছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাস্তার ওপর আশ্রয় নেয়া অনেক বৃদ্ধ ও শিশু শীতে কষ্ট পাচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী অনেক বৃদ্ধ ও শিশু শীতে ঘুমাতে পারে না। আমরা একটু সচেতন হলে এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।

নিজের আয়ের সামান্য অংশ দিয়ে তাদের কয়েকটি কম্বল অথবা শীতবস্ত্র কিনে দিতে পারি। বড় বড় কোম্পানি এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। বিত্তশালীরা আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে পারেন। মানুষ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর মধ্যে আত্মতৃপ্তি আছে।

আশার কথা, কিছু সংগঠন এখন শীতার্ত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জমিয়ত নেতা কায়েস সাহেবও তার এলাকার শীতার্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আশা রাখছি এবার শীতে তাঁর মতো সারাদেশের অন্যান্য জনপ্রতিনিধিগণও মানবতা এবং দ্বায়িত্ব বোধের সাক্ষ্য রাখবেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।