Home সোশ্যাল মিডিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম কতটা সহনশীল, কতটা অসহিষ্ণু?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম কতটা সহনশীল, কতটা অসহিষ্ণু?

[সাম্প্রতিকালে তরুণদের নানা কর্মকান্ড দেখে প্রশ্ন জাগে, তারা সহিংসতার পথে হাঁটছে কিনা? দিন দিন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে কিনা? এ নিয়েই আজকের প্রতিবেদন, ‘সহিষ্ণুতায় আজকের তারুণ্য’ প্রসঙ্গে কথা হয় দেশের বিভিন্ন মাদরাসা শিক্ষার্থী তরুণদের সাথে। তাদের ভাবনার জগতটা কেমন? কী ভাবছেন তারা? তরুণদের মতামতগুলো তুলে ধরছেন উম্মাহ২৪ ডটকম এর নিজস্ব প্রতিনিধি- নূর হোসাইন সবুজ]

মাহমুদ হাসানঃ জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা’র শিক্ষার্থী।

তিনি মনে করেন, তরুণ সমাজ অসহিষ্ণু হয়ে যাওয়ার কারণ কয়েকটি। রাষ্ট্রের একটি বড় শক্তি হচ্ছে তরুণ সমাজ, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই তরুণ সমাজকে বিপথে নিচ্ছে।

বর্তমান তরুণরা পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক বন্ধন থেকে অনেকটা দূরে সরে আসছে। যার ফলে সমাজে  বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে। এখানে পরিবার ও সমাজের পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রকেও দায়ী করেন।

তিনি মনে করেন রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই তরুণ সমাজকে নীতি-নৈতিকতার সাথে সাথে মূল্যবোধ শিখানো, দুর্নীতি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শিখানো।

রাকিব আল হাসানঃ জামিয়া মাদানিয়া দারুলউলূম যাত্রাবাড়ীর শিক্ষার্থী।

তিনি মনে করেন,  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিপুল পরিমাণে ভালো দিক থাকলেও বর্তমানে বিভ্রান্তিকর কাজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশি পরিমাণে ব্যবহার হচ্ছে। যার ফলে তরুন প্রজন্ম দিনদিন অসহিষ্ণু এবং অধৈর্য হয়ে উঠছে। এবং তরুণ তার আভ্যন্তরিন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। যা তরুণ প্রজন্মকে সহনশীল এবং সহিষ্ণু হতে বাধা সৃষ্টি করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমন এক ধরনের প্লাটফর্ম যেখানে বার্তা, ছবি,  অডিও,  ভিডিও কলিং,  ফেছবুকিং এবং ইউটিউবিং ইত্যাদি’র মাধ্যমে একটি সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে। একটা জরিপে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের যতজন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহার করে তার মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ ফেছবুক ব্যাবহার করে। এবং অধিকাংশ মানুষ তার অপব্যবহার করে।

এর থেকে প্রতিকারের উপায়  হিসেবে তিনি মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যম তথা ফেছবুক ইউটিউবয়ে নিরাসক্ত হলে এবং ভার্চুয়ালের প্রতি অন্ধবিশ্বাসী না হলে আমরা/তরুণরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে পারবো।

মাহমুদুল হাসান মাহদীঃ শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা’র শিক্ষার্থী।

তিনি মনে করেন, একটি সন্তানকে গড়ে তোলার সবথেকে পারফেক্ট সময় হচ্ছে তার শৈশবকাল।  এ সময়ে তাকে সুন্দর ও সঠিক ভাবে যা শেখানো হয় সে তাই শিখে।  এরপর যখন সে কৈশোরে পা রাখে,  তখন সে তার শৈশবে শেখা বিষয়গুলোকে কৈশোরের সময়ের সাথে কম্পেয়ার করতে থাকে।  তাই কৈশোরেও তাকে সৎসঙ্গে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে।  তার সহপাঠী,  বন্ধু-বান্ধব এমনকি তার শিক্ষক মহোদয়গণও তার জন্য যথেষ্ট পারফেক্ট কি-না,  সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে ।

কারণ ইদানিং কালের কিছু অল্প বয়সী, সল্পজ্ঞানী শিক্ষকের অযাচিত অন্যায় আচরণ শিক্ষার্থীদেরকে গুরুসম্মানের  মহান আদর্শ থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিচ্ছে । যার দরুন তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে অসহনশীলতার মেঘাচ্ছন্ন কালো ছাপ। এর উপর আবার যখন ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক উগ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষক বিরোধী অসহিষ্ণু আন্দোলন তারা দেখতে পায়,  তো তারাও এমন কিছু করবে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ওঠে।

তাই প্রথম থেকেই আমাদের সন্তানদেরকে এমন শিক্ষকের কাছে সমর্পণ করতে হবে, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকতার গুরুদায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে উন্নত জাতি গড়ার কারিগরে পরিণত হয়েছেন।

 সেই সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার যেহেতু আজকাল এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এ থেকে ফিরিয়ে রাখা অনেকটা অসম্ভব।  তাই এর যথাযোগ্য সঠিক ব্যবহার শিখিয়ে দেয়াটাই বাঁধা দেয়ার চেয়ে ভালো হবে বলে আমি মনে করছি।

আর এ সবকিছুর জন্যে ইসলামি শিক্ষার বিকল্প নেই, Because ইসলামই একমাত্র পারফেক্ট জীবন বিধান,  যেখানে একজন মানুষের Birth থেকে নিয়ে Death পর্যন্ত তথা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরো সংবিধানটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে স্পষ্টভাবে পরিবেশন করা হয়েছে।

রিদওয়ান মাজহারিঃ জামিয়া ইসলামিয়া মাজহারুল উলূম, মিরপুরের শিক্ষার্থী।

কিছু হলেই তরুণদের হুট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীদের অসহিষ্ণুতার পাশাপাশি অতি আবেগপ্রবণতাকে ও দায়ী করেন তিনি।  যার কারণে অহেতুক বিতর্ক, কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ি ও পারস্পরিক প্রতিরোধের প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যা শিক্ষার্থীদের থেকে কোন ভাবেই কাম্য নয়।

এর প্রতিকার হিসেবে আমি মনে করি, তিনটি মূলনীতি আমাদেরকে সামনে রাখতে হবেঃ

 ১. সহিঞ্চুতার পরিচয় দেয়া।
 ২. অতি আবেগপ্রবণতা পরিহার করা।
 ৩. শিক্ষাসূলভ বিবেকের বিচার করা।

মারুফ আল মাহমুদঃ দারুল উলূম টঙ্গী’র শিক্ষার্থী।

তিনি মনে করেন, বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- একজন মানুষের জীবনগড়ার সর্বোৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে তার কৈশোর বয়স। সুশিক্ষা,  চরিত্র,  বিনয়,  অধ্যাবসায়,  নীতি-আদর্শের ভীত তৈরি হয় কিশোর বয়স থেকেই।

আদর্শের নৈতিক শিক্ষার হাতেখড়ি তার মা-বাবার থেকে শুরু হয়। এজন্য মা-বাবা যদি সন্তান কে বেড়ে উঠার সময় থেকে-ই কোরআন ও সুন্নাহ’র সঠিক জ্ঞান প্রদান করতে  পারে।  তাহলে পরবর্তীতে এরা অপরাধে জড়িয়ে পড়বে না।

এ কারণে সন্তানদের নৈতিকতার সুরক্ষার্থে ধর্মীয় বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালিত করার কোনো বিকল্প নেই।

কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত চরিত্র গঠনের উত্তম গুণাবলি,  যেমন- তাকওয়া,  শালীনতা , সত্যবাদিতা, ওয়াদা পালন,  আমানতদারিতা,  সবর,  ইহসান,  বিনয়, নম্রতা,  উদারতা,  দানশীলতা প্রভৃতি গুণাবলি পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তানকে শিক্ষা দানের চেষ্টা করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মা-বাবাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তাদের সন্তান কেমন বন্ধুদের সঙ্গ নিচ্ছে। বর্তমান তরুণপ্রজন্ম বন্ধু-বান্ধবের অনুকরণ করে বেশি। সঙ্গদোষে অনেক সময় কিশোররা অন্যায়ের পথে পা বাড়ায়।

বিজাতীয় সাংস্কৃতিতে আসক্ত হচ্ছে কি-না এর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের অপব্যবহার এর ফলে তরুণপ্রজন্ম বিভিন্ন অপরাধ ও অসহিষ্ণুতায় জড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যাবস্থা চালু করার  প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

মুর্তাজা হাসানঃ জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া (জামিয়াতুল আবরার)’র শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছর পূর্বে যা হঠাৎ হঠাৎ ঘটতো,  তা আজ নিত্য দিনের সংবাদ, খবরের কাগজে  প্রতিনিয়তই ছাপা হচ্ছে। মারামারি, হানাহানি, খুনাখুনি, জোর-জবরদস্তি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নৌকা ধানের রেশারেশি ও শেষ রাতের ভোট চুরি। আর দেশের ভাগ্য-চাকা নির্ধারণ করছে গুটি কয়েক জুয়ারি-শিল্পপতি। আজ দেশটা ভরে গেছে ধর্ষণ, জমি দখল, লুটতারাজ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, অবৈধ পন্থায় নির্বাচনসহ হরেক রকমের অন্যায় দিয়ে। তাইতো রোজ আমাদের ঘুম ভাঙ্গে কোন না কোন দুঃস্বপ্নের সম্ভাবনা নিয়ে।

যখনই পত্রিকা হাতে নেই মনের অজান্তেই লোনাজলে ভিজে যায় দু-নয়ন। দেখতে পাই দেশের আনাচে-কানাচে, পথে-ঘাটে, ঘরে-বাহিরে, ধর্ষিতা হচ্ছে আমার যুবতী বোন, শহীদ হচ্ছে আমার যুবক ভাই, বিধবা হচ্ছে পবিত্র সঙ্গীনি, সন্তানহারা হচ্ছে স্বাধীন দেশের পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ আমার হতভাগা পিতা-মাতা। এসব কিছুর পর সরকার যখন নিরব ভুমিকা পালন করে, প্রশাসনও না জানার ভান ধরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে , তখনই তরুণদের অন্তরে বিদ্রোহী মনোভাব সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠে। মেজাজ বিগড়ে যায়। সামান্য থেকে সামান্য বিষয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পতিক্রিয়া দেখায়।

তিনি বলেন, এ ব্যপারে আমার বিশ্লেষণ হলো, আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হচ্ছে,  বুদ্ধিবৃত্তিকা গঠন ও অনুসন্ধান পক্রিয়ায় এক যৌথ যাত্রা। অন্য যেকোন সম্পর্কের চেয়ে এটি আলাদা। পরস্পরের প্রতি দায়, পরস্পরের প্রতি ঋণ, পরস্পরের উপর নির্ভরতার মধ্যেই এই সম্পর্ক স্থায়ী রূপ নেয়। এই সম্পর্ক কেবল প্রতিষ্ঠানেই শেষ হয়ে যায়না বরং এর স্থায়িত্বতা থাকে আজীবন।

বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই সাবালক, ভোটার বয়সী অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালক নির্বাচনের ক্ষমতা তারা রাখেন। সুতরাং এখানে যৌথ যাত্রা আরো পরিণত। এই যাত্রায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মতপ্রকাশ, ভিন্নমত হওয়াটাই অপরিহার্য। শিক্ষক যদি প্রকৃত শিক্ষক হন, আর শিক্ষার্থী যদি হন প্রকৃত শিক্ষার্থী, তাহলে তো এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অসহিষ্ণু হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

আরও পড়তে পারেন-

পক্ষান্তরে শিক্ষক যদি হন শিক্ষাবণিক, আমলা বা পুলিশ, যদি হন সরকারের প্রতিনিধি, তাহলে তো সমস্যা হওয়ারই কথা। একইভাবে শিক্ষার্থী যদি হন কোন বস, বড় ভাই কিংবা কোন রাজনৈতিক নেতার ছত্র ছায়ায় পরিচালিত, অর্থ-সুবিধাসন্ধানী বা সন্ত্রাসী, ক্যাডার হিসেবে পরিচিত, যে সব সমস্যা-সংকট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে, এক্ষেত্রে তো শিক্ষার্থীদের অসহিষ্ণু মনোভাব ফুটে উঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে তরুণরা কি অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন-

আজ ইন্টারনেট প্রতিটি শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-দোকানে সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। আর বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ওয়েবসাইট হচ্ছে ফেসবুক। তরুণরা নিত্যদিনের খবরাখবর ফেসবুক থেকেই সংগ্রহ করে থাকে। সকল ক্ষেত্রে এ ওয়েবসাইট-ই তরুণদের আশা ভরসার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ যোগাযোগ মাধ্যম যেমনিভাবে তরুণদের জন্য সুখবর বয়ে আনে, পক্ষান্তরে অন্যদিকে কিছু অসাধু চক্র এটিকে ভিন্ন খাতে প্রয়োগ করার মাধ্যমে কোমলমতি তরুণদের মাঝে অসহিষ্ণুপূর্ণ মনোভাব ফুটিয়ে তুলছে। সিনিয়র ও জুনিয়রের পরিমাপ এবং তথাকথিত বড় ভাইয়েরা ছোট ভাইদের উপর টর্চার করা ইত্যাদির ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এভাবেই আজ তরুণ সমাজ ও শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে।

শিক্ষার্থীদের এই অসহিষ্ণু মনোভাব দূর করণার্থে আমাদেরকে, রাষ্ট্রকে, সরকারকে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-

১. শিক্ষার্থীদের আদর্শবান করে গড়ে তোলার লক্ষে পরিপূর্ণ তরবিয়ত প্রদান করতে হবে।

২. শিক্ষার্থীরা যাতে উগ্রপন্থী, বামপন্থি, নাস্তিক্যবাদী কোন সংগঠনের সাথে জড়িত না হয়, সেদিকে অভিভাবকদের যথাযথ খেয়াল রাখতে হবে।

৩. শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো সরকারের অনায়াসে গ্রহণ করতে হবে।

৪. ক্যাম্পাসগুলোতে নোংরা রাজনীতির চর্চা বন্ধ করতে হবে।

৫. শিক্ষার্থীদের বাঁক স্বাধীনতায় কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা যাবেনা।

৬. রাজনৈতিক নেতাদের ছত্র ছায়ায় পরিচালিত বড় ভাই খ্যাত ক্যাডারদেরকে ক্যাম্পাস থেকে বহিস্কার করতে হবে।

৭. বামপন্থি নেতা ও সরকার দলীয় নেতাদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

৮. ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোন প্লান বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৯. কোরানের অপব্যাখ্যা কারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবত জীবন কারাদণ্ড আইন পাশ করতে হবে।

১০. মহানবী (সাঃ) কে অপমানকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান জারি করতে হবে।

যদি এই উত্থাপিত প্রস্তাবিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে আমি আশাবাদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা উগ্র ও অসহিষ্ণু মনোভাব দূর হয়ে যাবে এবং ছাত্রদের অন্তরে সহিষ্ণু মনোভাব সৃষ্টি হবে। আবার পূর্বের ন্যায় প্রতিটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতিয়ারের পরিবর্তে কলম ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ।

আবু সুফিয়ান মানসুরঃ জামিয়া সুবহানিয়া তুরাগ ঢাকা’র শিক্ষার্থী।

তিনি মনে করেন, সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে আমাদের উপকার না যতটুকু হয় তার চেয়ে ক্ষতির পরিমান বেশী হয়ে থাকে। বিশেষ করে এর র্দীঘ ব্যবহারের ফলে কারো সাথে কোন সমস্যা হলে এর প্রভাব সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও আমাদের বাস্তবিক জীবনে ফুটে উঠে।

কখনো দেখা যায় তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ বিষয়ে নিজেদের মতামত উপরে রাখতে আমরা একজন অপরজনের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই বলতে থাকি। আমাদের নিজেদের পছন্দের মানুষকে অতিসম্মান দিতে গিয়ে অপর সম্মনিত ব্যক্তিকে হেয় করতে আমরা দ্বিধাবোধ করি না।

আমরা সামাজিক মূলবোধ ভুলে গিয়ে একজন অপরজনের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি। দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যু লেগে থাকে আর সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি সকল ব্যবহারকারীর দৃষ্টিগোচর হয় অতি সহজে। তখন আমরা সেই বিষয়ে বুঝে অথবা না বুঝে সহজে নিজের মতামত ব্যক্ত করে ফেলি। তারপর দেখা যায় কখনো ছোট সমস্যা বড় সমস্যায় আকার ধারণ করে। অতএব এসকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আমরা সহনশীলতা ধরে রাখতে পারবো।

মাহমুদ হাসান নাহিয়ানঃ জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা’র শিক্ষার্থী।  

তিনি বলেন, virtual world বা ইন্টারনেট দুনিয়া,  যাকে ভদ্র সমাজ ভদ্র ভাষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলে থাকেন। তবে সচেতন নাগরিক একে সামাজিক ব্যাধি বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন,  কারণ এই সামাজিক যোগাযোগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে উন্নতি আশা করা হচ্ছিলো তার পুরোটাই হচ্ছে,  তার চেয়ে আগ বেড়ে বহুলাংশে ক্ষতি হচ্ছে।

প্রত্যেকটা জিনিষেরই দুটো দিক আছে: ভালো-খারাপ। যদি ভার্চুয়াল মাধ্যমে উন্নতি ও অবনতি (ভালো-খারাপ) কম্পেয়ার করা হয় তাহলে উন্নতির চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ টা ঢের বেশি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তার দ্বারা যেমন লাভ হচ্ছে,  বাস্তব জীবনে তার ঢেরগুন বেশি ক্ষতি হচ্ছে। যে ক্ষতি জোয়ান-বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর সকলকে সমানভাবে গ্রাস করছে..!

শিশু-কিশোররা যেন কচিকাঁচা থাকতেই ঝুকে পড়ছে ক্ষতিকর এই সাইটে,  তেমনি তরুণ সমাজের লেখাপড়ায় ঘটছে চরম অবক্ষয়,  আর প্রাপ্তবয়স্কগণ হয়ে পড়ছেন আত্মঅসচেতন। যেমন ধরুন যারা প্রয়াত তাদের মাঝে যে ব্যক্তিসত্তা বা ব্যক্তিত্ববোধ ছিলো বর্তমান সমাজে তার খুবই অভাব,  তাদের যে ‘মাসল পাওয়ার’ ছিলো/কার্যক্ষমতা ছিলো বর্তমানে তা খুঁজে পাওয়া দায়।

এই বিষয়ে সামান্যতম রিসার্চ করলেই যে রেজাল্ট বেরিয়ে আসে তা অনেকটা এরূপ যে “যে কোন সোশ্যাল ইউজার যখন তার ওয়াল স্ক্রল করে তখন তার ভেতরে ক্ষণে ক্ষণে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসতে থাকে। যা সে নিজেও বুঝে উঠতে পারেনা। তার ওয়ালে কৃত পোষ্টগুলোর কোয়ালিটি তাকে বাধ্য করে মানষিকতাটা পরিবর্তন করতে…!

একটা পোষ্ট তার ভালো লাগে তো ‘লাভ রিয়েক্ট’ দিয়ে ভালোবাসা বিলায়,  ঠিক তার পরবর্তী পোষ্টের টপিক টাই তাকে ‘স্যাড রিয়েক্ট’ দিতে বাধ্য করে,  আবার তার পরের পোষ্টের মাধ্যমে তার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব কে আক্রমণ করা হয় বলে তার কমেন্টবক্সে সে তার হিংস্র রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে,  এমনকি ঠিক তখুনি তার প্রিয়তম কোন বন্ধুর টেক্সট মুহুর্তের মধ্যে তার হিংস্রতা দূর করে তাকে ভালো মুডে নিয়ে যায়”। সে না চাইলেও তাকে এই চেঞ্জটা বাধ্য হয়ে করতে হয়..!

এই যে ক্ষণে ক্ষণে মানষিকতার পরিবর্তন- এটা তার স্থীরতা হ্রাস করতে থাকে। এভাবে একসময় সে হয়ে উঠে অস্থীর এবং অসহিষ্ণু।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।