Home ফিকহ ও মাসায়েল প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান

প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান

।। মুফতিয়ে আযম আল্লামা আবদুচ্ছালাম চাটগামী ।।

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার স্বীয় সমকক্ষ পরিবারে বিয়ে করার অধিকার ও স্বাধীনতা রয়েছে। চাই অভিভাবক এ-তে সম্মত থাক বা না থাক। কারণ উক্ত আয়াতে অভিভাবকের অনুমতির কথা কোথাও উল্লেখ নেই। তবে কিছু হাদীসে মেয়েদের ব্যাপারে অভিভাবকের অনুমতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তা প্রশ্নমুক্ত নয়। যা অপরাপর বিশুদ্ধ এবং সনদযুক্ত হাদিসের বিরোধী হওয়ায় প্রমাণযোগ্য নয়।

(৩) তা ছাড়া উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বকর জাসসাস (রাহ্.) স্বরচিত তাফসীর গ্রন্থ আহকামুল কুরআনে বলেন, অর্থাৎ- উক্ত আয়াতে কারীমা বিবিধ কারণে এ কথার উপর প্রমাণ বহন করে যে, সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা স্বীয় অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিত নিজে নিজেই বিয়ে করতে পারবে। এর কারণ হল, এখানে বিয়ের সম্বোধন মহিলার দিকে করা হয়েছে, অভিভাবকের দিকে করা হয়নি। দ্বিতীয়তঃ এখানে অভিভাবকের অনুমতিকে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্যে শর্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। (আহকামুল কুরআন- ২/৪০ পৃষ্ঠা)।

কুরআনে কারীমের অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, অর্থাৎ- তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা তাদের ইদ্দত কাল পূর্ণ করে তারা যদি বিধি মত সম্মত হয় তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদেরকে বিবাহ করতে চাইলে তোমারা তাদের বাধা দিওনা। তা তোমাদের মাঝে যে কেউ আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে তাকে উপদেশ দেওয়া হয়। তা তোমাদের জন্য শুদ্ধতম ও পবিত্রতম। আল্লাহ জানেন তোমারা জান না। (সূরা বাক্বারাহ্- ৩৩২)।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মহিলাদের অভিভাবকদের হিদায়াত দান করেন যে, তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীরা যদি ১ম স্বামীদেরকে শরীয়তের নিয়ম-তাšিকতা বজায় রেখে পূর্ণ বিয়ে করতে চায়, তাহলে তোমরা তাদের বারণ করবে না, বরং তাদেরকে স্বাধীন ভাবে স্বীয় কর্ম সম্পাদন করতে দিবে। কারণ তোমরা যদি তাদের বারণ কর তাহলে তা জুলুম হবে। এবং এর দ্বারা সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। যেমন হযরত মাকাল ইবনে ইয়াছার এবং জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ এর বোনদের ব্যাপারে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। তারা স্বীয় স্বামী কর্তৃক তালাক রাজয়ী প্রাপ্তা হয়েছিল। অতঃপর স্বামীরা ইদ্দতের সময় প্রত্যাবর্তন করেনি। এরপর তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সমঝোতা হয় নতন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবন পুনরায় শুরু করার। কিন্তু এতে বাধ সাধেন তাদের দুই অভিভাবক মা’কাল ইবনে ইয়াসার এবং জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ। তারা পুনরায় এ বিবাহের সমঝোতার অস্বীকৃতি জানান।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত আয়াত অবর্তীণ হয়। এতে নিদের্শ দেয়া হয়, যে সব মেয়ে লোকেরা স্বামীকর্তৃক রাজয়ী তালাক প্রাপ্ত হয়েছে এবং ইদ্দত পালন করেছে। তারা যদি পুনরায় স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে চায়, তাহলে তাদের কোন অসুবিধা নেই। তোমরা তাদেরকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করো না। তাদের বাধাদান করোনা। এ আয়াত যদিও তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, কিন্তু আয়াত এর ভাষ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে প্রত্যেক  সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাদের বেলায়ও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে। তারা যদি নিয়ম তাšিক ভাবে স্বীয় পছন্দের ব্যক্তিকে স্বামী রূপে বরণ করতে চায়, তাহলে তোমরা তাদের বাধা প্রদান করো না। যেমন উক্ত ঘটনায় উভয় সাহাবী নিজ নিজ বোনদেরকে তাদের স্বামীকে বিবাহ করতে প্রথমে মানা করেছিলেন। আয়াত অবতীর্ণের পরে সাথে সাথে তা প্রত্যাহার করে নেন তাদের বিয়ে কার্য সম্পাদন করেন।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে “রুহুল মাআনী” প্রণেতা আল্লামা আলূসী (রাহ.) বলেন, সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা নিজ বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীন। সে তার পছন্দ মুতাবিক সমকক্ষ পরিবারের কোন ছেলেকে বিয়ে করতে পারে। তবে যেহেতু সে সর্বদায় অভিভাবকের তত্বাবধানে থাকে, তাই শরীয়তে ও সমাজিক দৃষ্টিকোন থেকেও নেহায়েত কোন জরুরত ব্যতিত এমনটি করা সমিচীন নয়। বরং উচিৎ হল অভিভাবকের মধ্যস্থতায় বিয়ে শাদীর কাজ আঞ্জাম দেয়া। যাতে করে কেউ সমাজ ও রীতি বিরোধী হওয়ার কারণে এমনটি বলতে না পারে যে, অভিভাবক থাকা সত্ত্বেও মেয়ে নিজে নিজে বিয়ে করে ফেলেছে। নিজের অভিভাবকের প্রতি বিন্দু মাত্র ভ্র€ক্ষেপ করেনি। (তাফ্সীরে রূহুল মাআনী- ৩/১৪৫)।

শরীয়তের ফায়সালা হল সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা যদি সমকক্ষ পরিবারে নিয়ম তাšিক ভাবে বিয়ে করতে চায় তাহলে অভিভাবকের উচিৎ এতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা। সানন্দে তার অনুমতি দিয়ে দেয়া উচিৎ। আর যদি ভুলক্রমে মেয়ে বিয়ের আগে অনুমতি না নিয়েই বিয়ে করে ফেলে, তাহলে শরয়ী মূলনীতি অনুসারে এ-বিয়ে সংঘটিত হয়ে যাবে। সুতরাং এ জন্যে তার প্রতি অস্বীকৃতি জানানো যাবে না। আর তা ভেঙ্গে দেয়ার অবৈধ প্রয়াস চালানো যাবে না। কোন অভিভাবক যদি এমন করে, তাহলে উক্ত আয়াতের দৃষ্টিতে তা ভুল হবে।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বকর জাস্সাস (রাহ.) আহকামুল কুরআনে বলেন- ব্যাখ্যার সারসংক্ষেপ হল আল্লাহর বাণী “ওয়ালা তাআদিলূ হুন্না…” বেশ কয়েকটি দিক থেকেই এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলারা যদি অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিত নিজে নিজেই বিয়ে করে ফেলে, তাহলে সে বিয়ে সংঘটিত হয়ে যাবে। আয়াতে উক্ত বিয়ের বৈধতাকে মহিলার দিকে সম্বোধন করা হয়েছে। এখানে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্যে অভিভাবকের অনুমতি জরুরী এমন কোন কথার উল্লেখ নেই। দ্বিতীয় কারণ পুরুষ-মহিলা যদি বিয়েতে সম্মত হয়ে যায়, তা হলে এতে অভিভাবকের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করা হয়েছে। (আহকামুল কুরআন-৪০০)।

আরও পড়তে পারেন-

আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে অভিভাবক যেন এতে বাধ না সাধে। এ পর্যন্ত তো পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত ও তার তাফসীরের দলিল প্রমাণ পেশ করা হল। এগুলি ছাড়াও হানাফী ও অন্যান্য ফিকাহবিদগণ এর মতের পক্ষে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর হাদিসও রয়েছে। যা থেকে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় যে, সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা সমকক্ষ পরিবারে তার পছন্দ মত বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। যদিও এতে অভিভাবকের অনুমোদন না থাকে। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) বর্ণনা করেন। একবার রাসূলুল্লাহ্ (সা.)এর দরবারে জনৈকা মহিলা সাহাবী উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি স্বীয় সত্ত্বাকে আপনার জন্যে হেবা করে দিলাম। দয়া করে আপনি কবুল করুন। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) চুপ থাকলেন। কোন উত্তরই দিলেন না। আর ঐ মহিলা দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকলেন। তখন জনৈক সাহাবী দাড়িয়ে আরজ করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আপনার যদি এ মহিলাকে প্রয়োজন না হয়, তা হলে তাকে আমার সাথেই বিয়ে করিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, মুহর আদায় করার মত তোমার কাছে কিছু আছে কি? সাহাবী উত্তর দিলেন, আমার পরিধানের এ জামাটি ব্যতিত আর কিছু নেই। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, একটি লোহার আংটি হলেও খুঁজে দেখ, পাও কি না? সাহাবী এদিক সেদিক অনেক খোঁজাখুজি করে দেখলেন, কিন্তু কারো কাছেই কিছু পেলেন না। না পেয়ে পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সা.)এর দরবারে ফিরে আসলেন। এরপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কুরআনের কোন সুরা মুখস্থ আছে কি? সাহাবী বললেন, হ্যাঁ, অমুক অমুক সুরা মুখস্থ আছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করলেন, এ সূরা গুলোর কারণেই তোমার সাথে উক্ত মহিলার বিয়ে দিলাম। অপর এক বর্ণনায় এসেছে- এবার যাও আমি এ মহিলার বিয়ে তোমার সাথে দিয়ে দিলাম। তুমি তোমার মুখস্থকৃত সূরাগুলো ঐ মহিলাকে শিখিয়ে দাও। (মিশকাত শরীফ- ২/২৭৭ পৃষ্ঠা)।

মোটকথা, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ঐ মহিলাকে উক্ত সাহাবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, উক্ত মহিলা সাহাবী স্বীয় সত্তাকে হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.)এর জন্যে হেবা করেছিলেন। মহর ব্যতিতই বিয়ের দরখাস্ত পেশ করেছিলেন। তাই তাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে তিনি মহরের হক নির্ণয় করেননি। এরকম মহর ব্যতিত বিয়ে দেয়া রাসূলুল্লাহ্ (সা.)এর সাথে খাছ, অন্য কারো বেলায় তা প্রযোজ্য নয়। অন্যদের বেলায় বিধান হল দশ দিরহাম বা তার বরাবর ন্যুনতম মহর ধার্যকরা জরুরী। আর সর্বোŽচ মহরের কোন সীমা রেখা নেই। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদগণ লিখেন যে এতে কতিপয় মাসআলা বিবৃত হয়েছে।

(১) সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা স্বীয় অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিত স্বীয় পছন্দের কোন ছেলেকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারবে।

(২) সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা যদি তার বিয়ের অধিকার কোন পুরুষের হাতে হস্তান্তর করে, চাই সে অভিভাবক হোক বা অন্য কেউ হোক, দায়িত্ব প্রাপ্ত পুরুষ উক্ত মহিলাকে তার বাগদত্তার কাছে বিয়ে দিতে পারবে।

(৩) মহরানা বিয়ের সময় দিয়ে দেওয়া ওয়াজীব নয়, পরেও দেয়া যায়।

(৪) মুহরানার উল্লেখ না থাকলেও বিয়ে সংঘটিত হয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে “মুহরে মিছাল” অথবা উভয় পক্ষের সমন্বয়ে দশ দিরহামের অথবা এর উপরের যে কোন সংখ্যার মুহরানা ধার্য করা হয়, তা আদায় করা ওয়াজীব হবে। শাফেয়ী ইমামগণ বলেন, এ হাদিসের আলোকে কুরআনের শিক্ষাকে মুহর ধার্য করা শুদ্ধ হবে, এ কথা প্রমাণিত হয়।

(৫) বিয়ের জন্যে “বিয়ে” শব্দ উচ্চরণ করা জরুরী নয় হেবা ইত্যাদি শব্দ দ্বারাও বিয়ে জায়েয হয়। যদি তা সত্ত্বাপ্রদান অর্থ প্রকাশক হয়।

(৬) উক্ত আয়াত থেকে সবচেয়ে মৌলিক ও স্পষ্ট ভাবে যে মাসআলাটি বুঝে আসছে, তাহল এই যে অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিত কোন সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার বিয়ে সে নিজেই সম্পাদন করার অধিকার রাখে। সে যদি শরয়ী সীমারেখা বজায় রেখে পছন্দসই কোন পুরুষকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে তা বৈধ হবে। চাই এতে অভিভাবক সম্মতি প্রকাশ করুক বা না করুক। তবে যদি অভিভাবকের অনুমতি ক্রমে হয়, তা হলে সর্বোত্তম। যেমন- অন্যান্য হাদিস দ্বারা তা মুস্তাহাব প্রতীয়মান হয়।

(৭) তাছাড়া এ হাদিস এবং অন্যান্য হাদিসের দাবী হল, বিয়ের সময় পুরা মহর বা তার কিয়দাংশ দিয়ে দেয়া মুস্তাহাব।

(৮) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) রাসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক বার বিয়ে হয়ে গেছে এমন মহিলার বেলায় অভিভাবকের কোন কর্তৃত্ব চলবে না। তারা বিধবাই হোক কিংবা তালাক প্রাপ্তাই হোক, তারা যদি শরীয়তের সীমারেখা বজায় রেখে নিজ মর্জি মুতাবেক স্বীয় পছন্দের কোন ছেলেকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে করতে পারবে। এ ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার বা বাধা দেয়ার কোন অধিকার অভিভাবকের থাকবে না। (বাদায়ে- ২/২৪৮ পৃষ্ঠা)।

(৯) হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, স্বামীহীনা মহিলা যদি সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা হয়, তাহলে বিয়ের ব্যাপারে নিজেই অভিভাবকের চেয়ে বেশী হকদার। (মুসলিম শরীফ- ৪৫৫)।

সারকথা, বালেগ মহিলা চাইকুমারী হোক বা বিবাহিতা হোক, তালাক প্রাপ্তা হোক কিংবা বিধবা হোক, বিয়ের প্রয়োজন ও বিয়ের ভাল মন্দ অভিভাবকের তুলনায় তারা অধিকবুঝে থাকে। সুতরাং নিয়ম মাফিক উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচনের অধিকার তারই বেশী হওয়া উচিৎ। কাজেই সে যদি কোন সঙ্গী নির্বাচন করে এবং শরয়ী সীমারেখা বজায় রেখে বিয়ে করে নেয়। অথবা অভিভাবক বিয়ে করিয়ে দিতে বলে, তাহলে অভিভাবকের জন্য জরুরী হল যে, তার অনুমোদন দিয়ে দেয়া এবং এতে কোন প্রকারের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা। কারণ বিয়ের ভাল-মন্দ ও বিয়ের প্রয়োজনীয়তা সে অভিভাবকের তুলনায় অধিক ভাল বুঝে। এবং সেই বিয়ের অধিক হকদার।

১০। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, পতীহীনা সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা কোন মহিলাকে (চাই তালাকপ্রাপ্তা হোক অথবা বিধবা হোক) তার থেকে পরামর্শ নেয়া ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। অনুরূপ ভাবে সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা কোন কুমারী মেয়ের বিয়ে তার অনুমোদন ব্যতিত জায়েয নেই। সাহাবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা.)! কুমারী মেয়েদের অনুমোদন কিসে বুঝা যাবে? তিনি ইরশাদ করলেন, তার থেকে অনুমতি তলব করার পর যদি সে সরাসরি অস্বীকৃতি না জানায় বরং চুপ থাকে, তাতেও তার অনুমোদন বুঝা যাবে।

ব্যাখ্যাঃ উক্ত হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সুস্থ-জ্ঞান সম্পন্না প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা চাই অনুঢ়া হোক, তালাক প্রাপ্তা হোক বা বিধবা, সর্বাবস্থায় তার অনুমতি ব্যতিত বিয়ে হতে পারে না।

মূলকথা হল এই যে, তার বিয়ে তার অনুমতির উপর নির্ভরশীল। সে যদি সম্মতি প্রকাশ করে, তাহলে বিয়ে হবে। আর যদি সে অসম্মতি জানায়, তাহলে বিয়ে হবে না। চাই সমস্ত আত্মীয়-স্বজন সম্মত থাক না কেন। যতই তারা জোর জরদস্তি করুক না কেন। এক মাত্র সে যদি বিয়ের অনুমোদন দেয়, তাহলেই কেবল বিয়ে হতে পারে। যদিও তখন সমস্ত আত্মীয় স্বজন অসন্তুষ্ট থাকে, তবে শর্ত হল সে বিয়েটি হতে হবে সমকক্ষ পরিবারে। আর যেখানে সমস্ত আত্মীয় স্বজন সম্মত আছে, কিন্তু শুধু মহিলা অসম্মত সেখানে বিয়ে হতে পারবে না। যদি কখনো অভিভাবক এবং আত্মীয় স্বজনরা জবরদস্তি করে বিয়ে করিয়ে দেয় তাহলে সে বিয়ে গ্রহণযোগ্য হবে না। (এ-প্রসঙ্গে নিম্নের হাদিসটি লক্ষ্য করুন।)

[চলবে]

– আল্লামা মুফতি আব্দুচ্ছালাম চাটগামী, মুফতিয়ে আযম বাংলাদেশ এবং পরিচালনা পরিষদের প্রধান, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

প্রথম কিস্তি পড়ুন- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান

দ্বিতীয় কিস্তি পড়ুন- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান